এ কেবলমাত্র আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মহাকাশ ক্রিয়াকলাপের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র দেয়। এ ছাড়া আরও অনেক কৃতিত্বের বিস্তারিত বিবরণ আমি দিতে পারি। যেমন এক আংশিক মেঘলা দিনে বেঙ্গালুরুতে নৌবাহিনীর বিকল্প এক জলযান এলসিএ (Light Combat Aircraft)-র পরীক্ষামূলক উড়ানের কথা। সাফল্যমণ্ডিত নৌবাহিনীর বিকল্প এই LCA উড়ান-এর মধ্যে দিয়ে ভারত বাছাই করা শ্রেষ্ঠ কতগুলি দেশের দলে প্রবেশ করল। যারা চতুর্থ প্রজন্মের জাহাজ বাহিত ফ্লাই বাই ওয়্যার ‘স্কি টেক অফ বাট অ্যারেস্টেড রিকভারি’ (Stobar) যুদ্ধ বিমানের নকশা, বিকাশ, নির্মাণ ও পরীক্ষা করতে সক্ষম। নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করতে এই নৌবিকল্প যান প্রথম পদক্ষেপ। এটা একবিংশ শতকের ভারতীয় নৌবাহিনীর নৌ-উড়ান শাখাকে এক অসাধারণ যুদ্ধ ক্ষমতা দেবে। এর অর্জিত গুণরাজি একাধিক নকশা তৈরির প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সাফল্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও সম্প্রচার প্রযুক্তি মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যসম্প্রচার প্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা যুক্ত হয়ে জৈব-তথ্যপ্রযুক্তি গড়ে উঠেছে। একইভাবে পরীক্ষাগারের বাইরে ফোটনবিদ্যা চিরন্তন বৈদ্যুতিন এবং অণুবৈদ্যুতিন বিদ্যার সঙ্গে মিশে উচ্চগতিসম্পন্ন ভোগ্যপণ্য বাজারে এসেছে। স্বচ্ছ পলিমারের ওপর ফিল্মের একটা পাতলা আস্তরণ ব্যবহার করে নমনীয় ও অভঙ্গুর প্রদর্শিত দ্রব্য বিনোদন ও প্রচার মাধ্যম জগতে একটা নতুন সংকেত হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। এখন ন্যানোপ্রযুক্তি এসে গেছে। এটা ভবিষ্যতের চিকিৎসা, বৈদ্যুতিন এবং বস্তুবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সাংঘাতিক প্রয়োগক্ষমতা দ্বারা অণুবৈদ্যুতিন এবং আরও অনেক ক্ষেত্রকে অপসারিত করবে।
যখন অণুপ্রযুক্তি ও তথ্যসম্প্রচার প্রযুক্তি মিলিত হয়, সিলিকন ও বৈদ্যুতিন পরস্পরকে আলিঙ্গন করে, তখনই ফোটোনিক্স-এর জন্ম। বলা যায় যে বস্তুর অভিসরণ ঘটবে। অভিসৃত বস্তু ও জীবপ্রযুক্তি মিলে বুদ্ধিসম্পন্ন জীববিজ্ঞান নামে এক নতুন বিজ্ঞানের জন্ম হবে যা দীর্ঘজীবন ও সক্ষমতার সঙ্গে এক রোগমুক্ত সমাজের পথ দেখাবে।
বিজ্ঞানের এই অভিসরণ অভিযান বিনিময়যোগ্য। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: সম্প্রতি আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছিলাম। সেখানে হার্ভার্ড স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স বিভাগের অনেক প্রখ্যাত অধ্যাপকের পরীক্ষাগার দেখেছি। আমার মনে পড়ছে কীভাবে প্রফেসর হংবুন পার্ক আমাকে তাঁর আবিষ্কৃত ন্যানোছুঁচ দেখিয়েছিলেন যা কোনও নির্দিষ্ট কোষকে বিদ্ধ করে তার ভেতরে সামগ্রী চালান করতে পারে। এভাবেই ন্যানো কণাবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানের রূপ দিচ্ছে। এরপর আমি প্রফেসর বিনোদ মনোহরণের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে বোঝান কীভাবে জীববিজ্ঞান ন্যানো বস্তুবিজ্ঞানকে রূপ দিচ্ছে। স্ব-সংযুক্তি কণার নকশা করার জন্য তিনি ডিএনএ ব্যবহার করেছেন। যখন একটা নির্দিষ্ট ধরনের ডিএনএ আণবিক স্তরে কোনও একটা কণার ওপর প্রয়োগ করা হয়, তখন সেটা একটা পূর্বনির্ধারিত ধারায় এবং স্বয়ংক্রিয় সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় তৈরি হতে সক্ষম হয়। মানবহস্তক্ষেপ ছাড়া মহাকাশে স্বয়ং-সংযুক্তি প্রক্রিয়াকরণ ও সংঘবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে এটা আমাদের জবাব হতে পারে যেমনটি স্বপ্ন দেখেছিলেন ড. কে এরিক ড্রেক্সলার। এভাবে একটা গবেষণা গড়ে ওঠার মধ্যে, আমি দেখেছি কীভাবে দুটো পৃথক বিজ্ঞান একে অপরকে গড়ে উঠতে সাহায্য করছে। বিজ্ঞানের এই একে অপরকে পারস্পরিক সহযোগিতা আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনে এগিয়ে আসছে এবং আমাদের শিল্পকে এরজন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রযুক্তি সংগঠনে যে বাধা রয়েছে তা দূর হবে এই ধরনের গবেষণার ফলে।
পরিশেষে, সারা বিশ্বে, প্রযুক্তিগতভাবে উৎকৃষ্ট, মজবুত ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে চাহিদার অপসরণ হচ্ছে। এটা হল একবিংশ শতকের জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজের নতুন মাত্রা, যেখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এভাবে নতুন যুগের আদর্শ হবে এক চতুর্মাত্রিক জৈব-ন্যানো-তথ্য-পরিবেশভিত্তিক, যার মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্ভাবনা থাকবে।
.
আমি আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই, কীজন্য আপনাকে মনে রাখলে আপনি খুশি হবেন? সেটা আপনার লিখে ফেলা উচিত। হতে পারে উদ্ভাবন বা পরিবর্তনের মতো কোনও গুরুত্বপূর্ণ নিবেদনের দ্বারা আপনি সমাজে এমন কোনও পরিবর্তন আনলেন যার দরুন সমগ্র জাতি আপনাকে স্মরণ করবে।
৮. মোমবাতি ও মথ
৮. মোমবাতি ও মথ
বাতিদান ভিন্ন হতে পারে
আলোকশিখা কিন্তু একই,
পার্থিব আনন্দ তুমি পৃথিবীকেই ফিরিয়ে দাও,
তুমি আমার অন্তরস্থ আত্মায় থাকো।
১৯৯৯ সালের ১১ জানুয়ারি এয়ারবোর্ন সারভিল্যান্স মঞ্চ ভেঙে পড়া আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার ভিন্ন এক দিক, বিষাদের দিক তুলে ধরেছিল। বন্ধু অধ্যাপক অরুণ তিওয়ারির সঙ্গে আমার আলাপচারিতায় এই পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পর্কে, যা পরিকল্পনা অনুযায়ী সাফল্য লাভ করেনি, আমার মনোভাব ফুটে উঠেছিল। যাঁরা এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের প্রতি এ আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।