১৩. ওই বিশিষ্ট পদ আপনি সম্মানের সঙ্গে বহন করা সত্ত্বেও আপনার সবচেয়ে বড় অসন্তুষ্টির কারণ আপনি কি ব্যক্ত করবেন?
আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমি গভীরভাবে আশাবাদী। আমি শুধুমাত্র অগ্রগতির হার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রের যুবসমাজকে সক্ষম করার জন্য যদি সমস্ত অংশীদাররা একই লক্ষ্যে সমন্বিত ছন্দে কাজ করে তবে আমরা ইন্ডিয়া ২০২০-র উন্নয়নমূলক লক্ষ্য আরও দ্রুত উপলব্ধি করতে পারব। আমাদের প্রত্যেকের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করা উচিত যে, রাষ্ট্র ব্যক্তিমানুষের চাইতে অনেক বড়। আমাদের ৫৪০ কোটি তরুণদের প্রতি আমার অসীম বিশ্বাস আছে।
১৪. আপনি উত্তর-পূর্বাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের উন্নয়নের জন্য পথনির্দেশিকা-সহ উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু যেখানে প্রায় প্রতি রাজ্যে অসংখ্য সন্ত্রাসবাদী দল রয়েছে সেখানে আপনার এ ধরনের উপদেশ যথেষ্ট নয় বলে কি আপনি বিবেচনা করেন না? এই সন্ত্রাস বিনিয়োগের স্রোতকে অবরুদ্ধ করে, বিনিয়োগের অভাব যুবমানসে অসন্তোষ সৃষ্টি করে বা সন্ত্রাসবাদীদের পুষ্ট করে, ফলে উন্নয়নমূলক কাজকর্মে অচলাবস্থার উদ্ভব ঘটে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পীড়িত জনগণের জন্য কোনও আশা রয়েছে কি?
উত্তর-পূর্ব রাজ্যসমূহ আমাদের অনেক সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেয়। আমিও দেখেছি, জনসাধারণ উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে, সন্ত্রাসের ঘটনাগুলি যুবসমাজের ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে কাজ করছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল এক উদ্যমশীল উন্নয়ন গ্রহণ করেছে, প্রগতির পথে যে-কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে মানুষ তৈরি হবে। অতএব আমি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বার্তা দেব যে, রাজ্যের যুবসমাজকে সক্ষম করে উদ্যমশীল উন্নয়নের জন্য অগ্রসর হতে হবে। সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদী হিংসা সত্ত্বেও আমাদের দক্ষতা সম্পন্ন, জ্ঞান সমৃদ্ধ এবং শিল্পোদ্যোগে উন্নয়ন করতে হবে।
১৫. উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে পূর্ব ভারতে বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং সড়ক-রেল যাত্রাপথ সুগম হওয়া সম্বন্ধে আপনার কী মতামত? অর্থনীতিতে এগুলো কি উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং আরও কর্মসংস্থান এবং সুযোগ সৃষ্টি করে?
উন্নয়নের জন্য এ আবশ্যিক। রাজনৈতিক দলগুলির উচিত পূর্বদিকে বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং সড়ক-রেল যাত্রাপথের মতো সম্ভাবনার উন্মোচন যত শীঘ্র সম্ভব সহজসাধ্য করা। সীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়ন সম্বন্ধে আমি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম যা যুবসমাজের কর্মনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
১৬. আমাদের শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রচলিত উৎস থেকে অপ্রচলিত উৎস পরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি ভবন কি কোনও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যা আপনি করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন?
বর্তমানে, রাষ্ট্রের শুধুমাত্র এক কিলোওয়াট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সৌরশক্তি ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা আছে। রাষ্ট্রপতি ভবনের জন্য আমরা ৫ মেগাওয়াট সৌরশক্তিকেন্দ্রের পরিকল্পনা করছি। যত শীঘ্র সম্ভব এই শক্তিকেন্দ্র স্থাপনা করার জন্য শক্তিমন্ত্রক এবং অপ্রচলিত শক্তি উৎস মন্ত্রক সক্রিয়ভাবে এই প্রকল্পের জন্য কাজ করছে।
১৭. শক্তি সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আপনার উদ্বেগের কারণে আপনি কি আপনার প্রভাব রাষ্ট্রে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জোয়ার-ভাটা উদ্ভূত শক্তি ইত্যাদির দিকে বদল করার প্রচেষ্টা করবেন?
আপনি লক্ষ করেছেন আমার বক্তৃতায় আমি সৌরশক্তি কেন্দ্রের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সিএনটি (Carbon nanotube) ভিত্তিক সৌর আলোক উদ্বায়ী কোষ সহিত সৌরশক্তি ক্ষেত্রে গবেষণার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এ ছাড়াও থোরিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তির পরামর্শ দিয়েছিলাম। পরিবহণ ক্ষেত্রে, জৈব ডিজেল উৎপাদনের জন্য ব্যাপক হারে জাত্রোফা বাগিচা নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমাদের বিজ্ঞানীরা এইসমস্ত ক্ষেত্রে কাজ করেছেন।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে আমার সফর সেই রাজ্যগুলির জৈববৈচিত্র্য এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বস্ত্রশিল্পের বিশেষায়িত উৎপাদন সম্ভাব্যতা সম্বন্ধে আমার মনে বিশ্বাস জাগায়। এই পরিদর্শনের দ্বারা এই রাজ্যগুলির তরুণদের জীবনে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে আমার মনে বিশ্বাস গড়ে ওঠে। প্রয়োজন শুধু ওদের মধ্যে উন্নয়নের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠা। পাশাপাশি, রাজ্যগুলির ত্বরান্বিত বিকাশ অর্জনের জন্য যুবসমাজকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে। এর জন্য দরকার সহজসাধ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গতিশীল পরিকাঠামোর বৃদ্ধি।
.
পরিশিষ্ট-২
মিশনের প্রয়োগপদ্ধতি
রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার ছেড়ে আসবার সময় আমি যে বক্তৃতা দিয়েছিলাম তাতে সংসদকে শক্তিশালী করার জন্য একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা জ্ঞাপন করেছিলাম। প্রতিটি দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং অন্যান্য যে চ্যালেঞ্জগুলি একযোগে সংসদ এবং সরকার রূপায়ণ করবে বলে আমি মনে করি, প্রয়োজনানুসারে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সময় এবং সংস্থান, বিভিন্ন মন্ত্রক, বিভাগের সীমা অতিক্রম করে, তাকে ‘মিশন-কার্য প্রণালী’ হিসেবে বর্ণনা করার পরামর্শদান করেছিলাম। আমি আশাপোষণ করেছিলাম যে, প্রতিটি মিশনের জন্য সংসদের প্রতিভাবান সদস্যদের মধ্যে থেকে দূরদর্শী নেতৃত্বর উত্থান ঘটবে। এই পথে সমস্ত সদস্যরা রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করে কার্যকরী শাসনব্যবস্থায় প্রকৃত অংশগ্রহণে সক্ষম হবেন। নির্দিষ্ট মিশনের নেতৃত্ব গ্রহণ করলে দায়বদ্ধতা এসে যায়।