১০. আপনি কি মনে করেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্র সফর কোনও বাস্তবিক উদ্দেশ্যসাধন করে, নাকি সেগুলো শুধুমাত্র সীমিত মূল্যের আনুষ্ঠানিকতা?
এই পরিদর্শনের সাফল্য সম্পূর্ণ নির্ভর করে ভারতবর্ষ কী অর্জন করতে চায় তার ওপর। আমি ১৪টি রাষ্ট্রে গেছি এবং তাদের জাতীয় সভা ও সংসদে অভিভাষণ দিয়েছি। এই সফরগুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও ভাল হয়েছে এবং সহযোগিতা ও ভাববিনিময়ের নতুনতর পথে নিয়ে গেছে। এর ফলে উভয় রাষ্ট্রই দীর্ঘমেয়াদি সুফল ভোগ করবে।
উদাহরণ হিসেবে, আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্যান আফ্রিকীয় সংসদে অভিভাষণ দিয়েছিলাম। ওখানে আমি প্যান আফ্রিকীয় ই-নেটওয়ার্ক স্থাপনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম যার প্রাথমিক খরচ ছিল ৫০ মিলিয়ন ডলার। আপনি শুনে সুখী হবেন যে, প্রকল্পটির ভালভাবে অগ্রগতি হচ্ছে এবং এর ফলে আফ্রিকীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় বিশেষজ্ঞদলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রযুক্তিগত সহযোগিতা গড়ে উঠেছে। আমি একে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে গণ্য করি।
আমি যখন সুদান গেছিলাম ওএনজিসি-র পাইপ লাইন প্রকল্পটি শুরু হচ্ছিল। আজ সেই প্রকল্পটি ওএনজিসি বিদেশ দ্বারা সম্পূর্ণ হয়েছে এবং উভয় রাষ্ট্র এর সুফল ভোগ করছে।
ফিলিপিনস আমাদের দেশের উদাহরণ গ্রহণ করে জাত্রোফা চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য তাঁরা ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ ছাড়াও ভারতবর্ষ এবং ফিলিপিনসের ভেষজ শিল্পের মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা গড়ে ওঠে যার দরুন মানুষ ব্যয়সাধ্য মূল্যে ওষুধ পায়। ন্যাসকম (NASSCOM) ফিলিপিনসের সঙ্গে আইটি, আইটিইএস এবং বিপিও পরিষেবা গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করেছে।
সহৃদয়তার নিরিখে আমরা বেশ কিছু হৃদ্রোগীর চিকিৎসা করতে রাজি হয়েছিলাম, বিশেষত তানজানিয়ার কিছু হৃদ্রোগাক্রান্ত বাচ্চাদের। আমার বলতে আনন্দ লাগছে যে, সেই বাচ্চাদের ভারতবর্ষে এনে চিকিৎসা করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এর পাশাপাশি অনেক তানজানিয়ার চিকিৎসককে হৃদ্রোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ কালে আমি দুই অংশীদারী রাষ্ট্রে বিশ্ব জ্ঞানমঞ্চ সৃজনের প্রস্তাবনা দিয়েছি। এই কার্যক্রম আধুনিকতম দ্রব্যের নকশা, উন্নয়ন এবং উৎপাদনের সম্ভাব্যতা কল্পনা করে অংশীদার রাষ্ট্রের বারোটি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মদক্ষতা ব্যবহার করে, যা আন্তর্জাতিকভাবে বিপণন হতে পারে। এইসমস্ত রাষ্ট্রগুলি সক্রিয়ভাবে এক বিশ্ব জ্ঞানমঞ্চ প্রয়োগের বিবেচনা করছে।
১১. এখন যে আপনি আপনার মেয়াদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমাপন করেছেন সেখানে আপনি কি এমন কিছু কার্যক্রমের তালিকা রচনা করবেন যার প্রাথমিক পদক্ষেপ আপনি নিয়েছেন এবং যেগুলি আপনাকে গভীর সন্তুষ্টি দিয়েছে? যেমন PURA-র উদাহরণ?
সন্তোষজনক কিছু কার্যক্রমের উল্লেখ আমি করতে চাই—
গ্রামীণ উন্নয়ন: গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রক সমগ্র দেশ জুড়ে ৩৩ টি PURA গুচ্ছ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছে। কিছু বেসরকারি শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠন PURA-কে গ্রহণ করেছিল পল্লিগ্রাম গুচ্ছ উন্নয়নের জন্য।
শক্তি: পাঁচটি রাজ্য জৈব ডিজেল উৎপাদনের জন্য জাত্রোফা চাষ শুরু করেছে। একটি শক্তি প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে।
নলেজ গ্রিড: জাতীয় জ্ঞান কমিশন বা NKC (National Knowledge Commission) পরিকল্পনা করছে সমগ্র দেশ জুড়ে নলেজ গ্রিড প্রতিষ্ঠা করবে কমপক্ষে ৫০০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ১০০ mbps নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্কিং দ্বারা।
ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়: ১৫০ বছরের পুরনো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলন করেছে এবং আমি ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছি ও ২০,০০০ ছাত্রছাত্রীর উদ্দেশে অভিভাষণ দিয়েছি।
গ্রামীণ জ্ঞান কেন্দ্র: যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক বা এমসিআইটি (মিনিস্ট্রি অফ কমুনিকেশনস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি) দ্বারা ১০০,০০০ সাধারণ সেবাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে যাতে গ্রামীণ নাগরিকদের মূল্যভিত্তিক পরিষেবা দেওয়া যায়।
ই-গভর্ন্যান্স: জাতীয় আইডি বা পরিচয়পত্র এবং G২G এবং G২C পরিষেবার জন্য ই-গভর্ন্যান্স গ্রিড স্থাপনা গতি অর্জন করছে। ভারত সরকার G২C ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবার জন্য ২৩,০০০ কোটি টাকা ঘোষণা করেছিল এবং রাজ্য বিস্তৃত ক্ষেত্র নেটওয়ার্ক বা SWAN (State Wide Area Network) স্থাপনা করেছে।
১২. দপ্তরভার ছেড়ে দেবার পরে আপনার বিপুল প্রতিভা, উৎসাহ এবং মহান আত্মোৎসর্গতা কি আপনার কোনও প্রিয় পরিকল্পনায় নিবেদন করার অভিপ্রায় রাখেন? যেমন বিজ্ঞান গবেষকদের পথপ্রদর্শন ও ডক্টোরাল ছাত্রদের শিক্ষাদান করা? আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার আগের কাজ কি আপনি আবার শুরু করবেন?
২০২০-র পূর্বে উন্নত ভারত স্বপ্ন উপলব্ধি করায় আমি অক্লান্তভাবে কাজ করে যাব। শিক্ষকতা এবং গবেষণাকার্য করব। ছাত্রছাত্রী ও তরুণ সমাজের সঙ্গে আমার ভাববিনিময় চলতেই থাকবে।
এ ছাড়াও প্রতি বছর বেশ কিছু সময় আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যয় করব। ওখানকার জনজীবনের মানোন্নয়নের সময়-নির্দিষ্ট উন্নত প্রভাব বিস্তারকারী প্রকল্পের প্রয়োগের সক্ষমতা এবং উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গঠনের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। ফলে ওই অঞ্চলের যুবসমাজকে উচ্চ পারিশ্রমিকযুক্ত কর্মনিয়োগের অজস্র সুযোগ নিবেদন করা যাবে।