গ. বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ইন্ডিয়া ২০২০ মিশন উপলব্ধির উদ্দেশ্য অভিমুখী হওয়া উচিত।
ঘ. বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তরুণদের মধ্যে গবেষণা এবং অনুসন্ধান, সৃজনশীলতা এবং নৈতিক নেতৃত্বের সক্ষমতা অবশ্যই গড়ে তুলবে যাতে তাঁদের ইন্ডিয়া ২০২০ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অবদান থাকে।
ঙ. প্রতিবছর এক হাজারজন তরুণ ছাত্রছাত্রী যাতে বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে জীবিকার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেই উপায় উদ্ভাবন করার বিশেষ পথ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পরে এই বিজ্ঞান গোষ্ঠীর কর্মনিয়োগের সুবিধা প্রয়োজন।
৭. বলা যায়, যেখানে চিকিৎসা, প্রযুক্তিবিদ্যা এবং ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ কলেজগুলো আবেদনকারীর দ্বারা পূর্ণ যেখানে মৌলিক বিজ্ঞান পাঠ্যক্রমগুলো কোনও ছাত্র পায় না। সেক্ষেত্রে কী বিশেষ কর্মপন্থা বা কৌশল থাকা প্রয়োজন যা ছাত্রদের মৌলিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে এবং গবেষণা করতে উৎসাহিত করবে?
আপনি হয়তো জানেন, বিজ্ঞান-গবেষণা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (Institute of Science, Research and Education) সরকার দুটো রাজ্যে প্রচলন করেছেন। আমাদের একটা বিশ্বব্যাপী মানবসম্পদ সংগঠন গড়ে তোলার জন্য ক্রমান্বয়ে কাজ করার প্রয়োজন যা তরুণসমাজকে হয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং গবেষণার জন্য উচ্চতর শিক্ষা প্রদান করবে নয়তো শিল্পক্ষেত্রে নিয়োগযোগ্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দক্ষতা নিবেদন করবে, যা রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। আমি মনশ্চক্ষে দেখতে পাই ২০৫০-এর মধ্যে ভারতীয় যুবসমাজের ৩০ শতাংশ ক্রমবর্ধনশীলভাবে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, এখনকার ১০ শতাংশের তুলনায়। এবং বাকি ৭০ শতাংশের শিল্প, সেবামূলক ক্ষেত্র ও কৃষিতে উন্নত দক্ষতা থাকবে।
৮. সরকারের ১০০ কোটি টাকা আইআইএসসি-তে বিনিয়োগ করে বিশ্বমানের রিসার্চ এবং ডেভলপমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলা নিশ্চয়ই প্রশংসার্হ কাজ, কিন্তু এত বড় একটা লক্ষ্যপূরণের জন্য বিজ্ঞানীরা নিজেদের যথেষ্ট অপ্রতুল মনে করছেন। MIT এবং স্ট্যানফোর্ডে তাদের নিজস্ব বৃহত্তর সম্পদ ছিল, অন্যদিকে আইআইএসসি বলে, পর্যাপ্ত ডক্টোরাল ছাত্র গবেষণা বিভাগগুলিতে পাওয়া যায় না।
সরকার পক্ষ থেকে এ এক অন্যতম পদক্ষেপ। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতেও সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। পরিকাঠামোগত উৎকর্ষসাধনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নানা উৎস থেকেও আসতে পারে। বিজ্ঞান সংগঠনে যে পরামর্শ দিয়েছিলাম, আমি নিশ্চিত এর দরুন বেশ কিছুসংখ্যক তরুণ ছাত্র বিশুদ্ধ গবেষণাকার্য করতে চাইবেন।
৯. ন্যানো প্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তি, কার্বন বিমিশ্র, ধাতুবিদ্যা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বমানের গবেষণা করেছে, বিজ্ঞান গবেষণা নিয়ে সম্প্রতি আমাদের এই দাবি সত্ত্বেও দেশের এই কাজের জন্য বিগত ষাট বছরে একটাও নোবেল পুরস্কার আমরা পাইনি। এতে প্রশ্ন ওঠে আমরা কি সত্যি বিশ্বমানের গবেষণা করছি নাকি আমাদের কাজ অন্য কোনও কারণে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
বেশিরভাগ নোবেল পুরস্কার মৌলিক গবেষণার জন্য দেওয়া হয়। বর্তমানে মৌলিক গবেষণার জন্য বরাদ্দ বিপুল পরিমাণ অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন তরুণ ছাত্রদের মধ্যেকার সৃজনশীলতার বন্ধনমুক্তি ঘটানো যাতে তাঁরা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নবতম উন্মেষ ঘটাতে পারেন এবং তাঁদের প্রচেষ্টা ভিন্ন ভিন্ন দিকে বিক্ষিপ্ত না করে নির্দিষ্ট বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সংহত করতে পারেন। আমি ন্যানো প্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রযুক্তিসমূহের অভিসরণ ঘটিয়ে নির্দিষ্ট কেন্দ্রাভিমুখী গবেষণার পরামর্শ দেব। ভারতবর্ষ গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং উচ্চতর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্দিষ্ট গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কর্মদক্ষতা এবং অর্থভাণ্ডার থাকতেই হবে। যদি আরও গবেষক অধ্যাপক এবং বিজ্ঞানীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দ্বারা প্রতিপালিত হন তা হলে আরও গবেষক ছাত্ররা আকর্ষণ বোধ করবেন। এর দরুন উদ্ভাবনী গবেষণার সফলতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে এর প্রভাব রাখবে। কিছু কিছু গবেষণা হয়তো পুরস্কার বিজয়ী গবেষক গড়ে তুলবে। এখানে আমি এক অভিজ্ঞতার কথা বলব যে, কীভাবে বৈজ্ঞানিক মহানুভবতা গবেষণা-পরিবেশের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে।
বৈজ্ঞানিক মহানুভবতা: ২০০৫ সালের ১৫ মার্চ দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এক প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী এবং ভারতের প্রথম সবুজ বিপ্লবের অংশীদার, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক নর্ম্যান ই বোর্লগ এম এস স্বামীনাথন পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। ৯১ বছরের অধ্যাপক বোর্লগের প্রতি উপস্থিত সবাই প্রশস্তিবাক্য বর্ষণ করছিলেন। যখন ওঁকে বলতে অনুরোধ করা হল, উনি উঠে দাঁড়িয়ে কৃষিবিজ্ঞান এবং উৎপাদনে ভারতবর্ষের অগ্রগতির কথা বললেন, আরও বললেন রাজনৈতিক দূরদ্রষ্টা সি সুব্রাহ্মনিয়াম এবং ড. এম এস স্বামীনাথন ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম সবুজ বিপ্লবের মূল রূপকার। তিনি গর্বের সঙ্গে ভার্গিস ক্যুরিয়েনকে স্মরণ করলেন, যিনি ভারতবর্ষের শ্বেতবিপ্লবের অগ্রগমন ঘোষণা করেছিলেন। ড. বোর্লগ দর্শকদের মধ্যে তৃতীয়, পঞ্চম এবং অষ্টম সারিতে বসা বিজ্ঞানীদের দিকে ফিরে গম বিশেষজ্ঞ ড. রাজা রাম, ভুট্টা বিশেষজ্ঞ ড. এস কে ভাসাল এবং বীজ বিশেষজ্ঞ ড. বি আর বারওয়ালেকে চিহ্নিত করলেন। তিনি বলেছিলেন এইসমস্ত বিজ্ঞানীরা ভারতবর্ষ এবং এশিয়ার কৃষি সংক্রান্ত বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন। তাঁদের তিনি দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং নিশ্চিত করলেন যাতে দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে এই বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান। এই দৃশ্য আমাদের দেশে আমি আগে কখনও দেখিনি। ড. বোর্লগের এই মনোভাবকে আমি বৈজ্ঞানিক মহানুভবতা বলি। বন্ধু, যদি আপনি জীবনে মহৎ কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা করেন আপনার প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক মহানুভবতা। আমার অভিজ্ঞতা বলে মহান কার্য এবং মহৎ হৃদয় যুগপৎ চলে। এই বৈজ্ঞানিক মহানুভবতা বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করবে। বৈজ্ঞানিকদলের সমষ্টি চেতনাকে প্রতিপালন করে নানা গবেষণা ক্ষেত্রে নতুনতর আবিষ্কার ও উদ্ভাবনার দিকে তাঁদের নিয়ে যাবে।