২. পরিকল্পিত উন্নয়নে আপনার পথনির্দেশিকা কি অতিরিক্ত হিসেবে বার্ষিক এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে? এই দুয়ের মধ্যে কি কোনও বিরোধ আছে?
যখন পথনির্দেশিকা তৈরি করছিলাম তখন সমস্ত মন্ত্রক, রাজ্য সরকার এবং পরিকল্পনা কমিশন থেকেও আমরা বিস্তারিত বিবরণ জানতে চেয়েছিলাম। পরিকল্পনা কমিশন এক আট সূত্রের মানদণ্ডের (an eight point criteria) উন্নয়নমূলক র্যাডার প্রস্তুত করেছিল যা আমরা গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন র্যাডারের সমস্ত মাপকাঠির উৎকর্ষ ঘটানো এবং সমস্ত উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করা যা অভীষ্টের ত্বরান্বিত উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায়। আমরা যে মিশনগুলির প্রস্তাবনা করেছিলাম তা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কর্মদক্ষতাভিত্তিক এবং রাজ্য পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা কমিশনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সম্পূরক। ২০১৫-এর আগে উন্নত এক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে আমরা এক দীর্ঘমেয়াদি পরিপ্রেক্ষিত দিয়েছিলাম, কারণ উন্নত রাজ্যগুলিই ভারতবর্ষকে ২০২০-র আগেই উন্নত বানাবে।
৩. আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রশস্ততা ও সুগভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত প্রয়োগের হাতেকলমের অভিজ্ঞতা পথনির্দেশিকার আকার দান করতে এক গুরুতর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আপনার এই বৈশিষ্ট্য কি মহান দপ্তরে আপনার উত্তরসূরিদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতিফলিত হয় না?
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যে-কোনও সুব্যবস্থা কোনও নির্ভরতা নির্বিশেষে টিকে থাকে। গত চার বছরে আমি দেখেছি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক সর্বব্যাপী জাগরণ ঘটেছে। কিছু সু-সাফল্য লাভ করেছে। আমি মনে করি সেইজন্যই বেশ কিছু রাজ্য বিধানসভা আমার উন্নয়ন মিশনগুলি আলোচনা করার সুযোগ দিয়েছে। যখন আমি একটা বা দুটো বিধানসভায় কাজ শুরু করেছিলাম, অন্যান্য রাজ্য বিধানসভাগুলিও তখন আমায় আমন্ত্রণ করে, আমি সেখানে যাই এবং অভিভাষণ দিই। ফলে আমি দেখি যে ভারতীয় জনগণ এবং ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা, জাতীয় বিকাশের জন্য মিশন-কেন্দ্রিক উন্নয়নের কার্যক্রমের ধারণায় বিশ্বাসী হতে শুরু করেছে। এরজন্য প্রয়োজন পথনির্দেশিকা এবং একটি কার্যনির্বাহী পরিকল্পনা, যা হয়তো মধ্যপথে পর্যালোচনা দ্বারা সুসমন্বিত হবে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রপতির দপ্তরে এক পেশাদার কর্মীবৃন্দ থাকা উচিত যাঁরা বিধানসভায় নানা ধরনের নথিপত্র প্রস্তুত করবেন। আপনি ঠিকই বলেছেন রাষ্ট্রপতির দপ্তরের অবশ্যই এ এক নতুন পদক্ষেপ এবং সেটা খুবই উদ্দেশ্যমূলক জাতীয় মিশন এবং সেসঙ্গে রাষ্ট্রপতিকে দেশের নাগরিকের চাহিদার সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখার জন্যও এক সুযোগ দেয়।
৪. যদিও সংবিধানে রাষ্ট্রপতি এবং সরকারের দায়িত্বসমূহ সংজ্ঞায়িত করা আছে, বিগত চার বছরে আপনি কি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে অনেক সমাপতিত ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছেন, সম্পর্কে কি দ্বন্দ্ব এবং অস্পষ্টতার জায়গা আছে?
এই ব্যবস্থা অত্যন্ত সুন্দর ও স্থিতিস্থাপক যা একসঙ্গে কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়। দেশ যে-কোনও একজন ব্যক্তির চাইতে গুরুত্বপূর্ণ, এই দর্শন মনে রেখে যদি কোনও কাজ করা হয় তা হলে কোনও সম্পর্কসম্বন্ধীয় সমস্যা থাকে না। রাজ্যপালদের সঙ্গে দুটো অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর একত্রিত হয়ে কাজ করার ধরন প্রকাশিত হয়েছে।
৫. লাভজনক পদ আইন প্রণয়ণের ক্ষেত্রে যে মতপার্থক্য ছিল তা জনগণের সামনে প্রকাশিত হয়েছিল। আপনার অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও বিলটি ফেরত এল এবং আপনার উত্তমতর বিবেচনাকে বিচার না করে আপনাকে যে বাধ্য করা হল স্বাক্ষর করতে, সে-বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
লাভজনক পদ বিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি যথেষ্ট স্বচ্ছ। আমরা আক্ষরিক এবং বিষয়াগতভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা দৃঢ়ভাবে সাংবিধানিক নির্দেশের অনুবর্তী। আপনি লক্ষ করবেন যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি (Joint Parliamentary Committee) গঠন করার ক্ষেত্রে সংসদের উভয় কক্ষের এবং জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলির সাধারণ মনোভাব আমাদের অবস্থানের যাথার্থ্য প্রতিপাদন করেছিল। সাংসদদের লাভজনক পদ বিলের সংজ্ঞাদান করার জন্য নির্দেশিকা তৈরির কারণে জেপিসি-র গঠনের পর আমি বিলে স্বাক্ষর করেছিলাম।
৬. আপনার প্রিয় বিষয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুযোগের প্রতি তরুণ হৃদয়ে জাগরণে আপনার লক্ষণীয় উদ্যোগ আছে, আপনার মতানুসারে আর কী কী নতুন পদক্ষেপ সরকারের নেওয়া উচিত?
ক. ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল করে তোলার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার এক পুনর্গঠন প্রয়োজন। অবশ্যই সংসদে শিক্ষার অধিকার বিল অনুমোদন পেয়েছে রাজ্য বিধানমণ্ডলগুলিতে আলোচনার মাধ্যমে। পরিশেষে, শিক্ষার অধিকার আইন দেশের সমস্ত ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের আবশ্যিক এবং বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ করে দেবে।
খ. প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভূত সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ দল প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এক সৃজনশীল পাঠ্যক্রম, সৃজনশীল ক্লাসরুমের উদ্ভাবনা করবেন এবং সর্বোপরি প্রশিক্ষিত সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগ করবেন।