সংসদকে এখন এক নতুন লক্ষ্যে এবং নেতৃত্বে বিকশিত হতে হবে যা শুধু আমাদের রাষ্ট্রকে জ্ঞানসমৃদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ, সংগতিপূর্ণ, সচ্ছল এবং সমৃদ্ধই করবে না, সর্বোপরি সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশ ও আক্রমণে চির-অভেদ্য একটি সুরক্ষিত রাষ্ট্র করবে। আমি মনশ্চক্ষে ২০২০ সালের ভারতবর্ষের জন্য এই বিশেষ রেখাচিত্র দেখি— এক দৃঢ়, সমৃদ্ধ এবং সুখী রাষ্ট্র, যদি সংসদ আজ মিশন ইন্ডিয়া ২০২০ প্রয়োগ করার সংকল্প গ্রহণ করে।
উন্নত ভারত ২০২০ লক্ষ্য উপলব্ধির চ্যালেঞ্জ, শাসনব্যবস্থা এবং আইনগত কর্মপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনার সুযোগ তৈরি করে। যখন আমরা একুশ শতকে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং আইনগত প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করি তখন প্রযুক্তিগত আন্দোলন, জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী সংযোগস্থাপন, বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার সম্পূর্ণ সুযোগ এবং তাৎপর্য গণ্য করতে হবে।
সাংসদগণ রাষ্ট্রের জন্য এক স্বপ্ন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংবদ্ধ নেতৃত্ব-সহ এই পরামর্শ নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন এবং বিকশিত হতে পারেন ঠিক যেমনভাবে আমাদের সংবিধান প্রথম রচিত হওয়ার সময় হয়েছে। ভারতবর্ষের জন্য এই একুশ শতকের সংসদীয় স্বপ্নর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিপ্রেক্ষিত থাকা প্রয়োজন। জাতীয় সমৃদ্ধি সূচককে মাপকাঠি ধরে এবং ২০৩০-এর আগে শক্তি স্বনির্ভরতা অর্জন-সহ ভারতবর্ষকে ২০২০-র মধ্যে একটা উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করার জন্য প্রায়োগিক কৌশল, অখণ্ড কাঠামো এবং কর্মপরিকল্পনা জোরালো করা প্রয়োজন।
এটাই সেই অনন্য সংসদীয় লক্ষ্য এবং এর কার্যকরী প্রয়োগ আমাদের কোটি কোটি দেশবাসীর মুখে হাসি আনবে। জাতীয় লক্ষ্যের জন্য আমাদের সাংসদদের এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংবদ্ধভাবে কাজ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবশ্যিকতা।
দুর্নীতি, শাসনপদ্ধতি এবং অন্যান্য বিষয়ে জাতীয় জাগরণ সংসদকে তৎপরতা এবং অন্তর্দৃষ্টি-সহ সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
.
পরবর্তীকালে
যতদিন না আমি আচার্য মহাপ্রজ্ঞার দর্শন পেয়েছি আমার মনে সবসময় এক অনুভূতি হত যে, পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে আমি যা করেছি তা বিশ্বাস, দর্শন এবং মহান মানবকীর্তির পরিপন্থী। আচার্য মহাপ্রজ্ঞা ছিলেন জ্ঞানের উৎস, তাঁর সংস্পর্শে আসা প্রতিটি আত্মা তাঁর দ্বারা শুদ্ধ হবে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাস, প্রায় মধ্যরাত্রি, আচার্য তাঁর আশ্রমবাসী ভিক্ষুদের নিয়ে দেশ এবং দেশবাসীর কল্যাণের জন্য তিনবার প্রার্থনা করেছিলেন। প্রার্থনা শেষে তিনি আমার দিকে ফিরে যে কথাগুলি বলেছিলেন তা আজও আমার মনে প্রতিধ্বনিত হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘কালাম, তুমি তোমার টিমের সঙ্গে মিলে যা কাজ করেছ তার জন্য ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করবেন। কিন্তু পরমেশ্বর তোমার জন্য আরও বড় কোনও লক্ষ্য স্থির করে রেখেছেন এবং সে কারণেই তুমি আজ আমার সঙ্গে রয়েছ। আমি জানি আমাদের দেশ আজ একটি পারমাণবিক রাষ্ট্র। কিন্তু তুমি এবং তোমার সহকারীরা মিলে যে কাজ করেছ তোমার লক্ষ্য তার চেয়েও মহত্তর, যে কোনও মানবকীর্তির চাইতেও মহত্তর। পারমাণবিক অস্ত্র বিশ্বে অতি দ্রুত হারে বর্ধিত হচ্ছে। আমি আমার সমস্ত ঐশ্বরিক আশীর্বাদ-সহ তোমায় আদেশ করছি— তুমি এবং শুধুমাত্র তুমি এমন একটি শান্তিপূর্ণ পদ্ধতির বিকাশ করো যাতে প্রত্যেকটি পারমাণবিক অস্ত্র নিষ্ক্রিয়, তাৎপর্যহীন এবং রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।’
যখন আচার্যজি তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন তখন সভাকক্ষে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। আমার মনে হয়েছিল সমগ্র প্রকৃতি যেন ওই পুণ্যশ্লোক মহাত্মার কথার সুরে সুর মেলাচ্ছে। জীবনে প্রথমবার আমি যেন কেঁপে উঠেছিলাম। তখন থেকে আচার্যর বার্তা আমার জীবনের পথপ্রদর্শনকারী আলোকশিখা আর তাকে বাস্তবায়িত করা আমার জীবনের একটা চ্যালেঞ্জ, যা আমার জীবনকে নতুন অর্থ দিয়েছে।
প্রথম অধ্যায়ে একটি ছোট মেয়ের চিঠির কথা উল্লেখ করেছিলাম। ওই চিঠি পড়ে আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম তাতে বেশ বিস্ময়কর ও আনন্দজনক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। এক ব্যাঙ্ককর্মীকে আমরা তাকে সহায়তার জন্য নিযুক্ত করেছিলাম। তিনি ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে মিলে সমস্ত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হয়েছিল। মেয়েটি এখন সুখী বিবাহিত জীবনযাপন করছে। আমরা আনন্দিত যে আমাদের ব্যবস্থাগ্রহণ তাকে তার স্বপ্নপূরণে সহায়তা করেছে।
.
পরিশিষ্ট-১ : সাক্ষাৎকার
২০০৬ সালে বেশ কিছু রাজ্য পরিদর্শনের পর আমি যখন মিজোরামে তখন এনই টিভি চ্যানেলের মনোরঞ্জন সিং আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ওই সাক্ষাৎকার আমি পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই কেননা সেটা বেশ কিছু বিষয়, উদ্বেগ এবং কার্যকলাপের ওপর আলোকপাত করেছিল।
১. আপনার প্রদত্ত রাজ্যগুলির বিস্তারিত উন্নয়নমূলক মিশন অনুযায়ী রাজ্য সরকার কর্ম সম্পাদন করছে কি না আপনি কি তারও তদারকি করেন? এখানে কি কার্যকরী তদারকির সুসংগঠিত কর্মপ্রক্রিয়া আছে?
পরিকল্পনা কমিশন, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে পরিযোজন ও স্বাধীন মূল্যায়ন দ্বারা রাজ্য পরিদর্শনের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম সেগুলো ব্যবহার করে আমি পথনির্দেশিকা দিয়েছি। এই প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে আমার টিম বিনিদ্র রাত্রিযাপন করেছে। আমি জোর দিয়েছিলাম যে রাজ্যের উন্নয়ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজ্য রাজনৈতিক দল থেকে অনেক বড়। অংশগ্রহণকারী সদস্যদের এই মিশনের ওপর আলোচনা করতেও আমি অনুমতি দিয়েছিলাম। আমার প্রেজেন্টেশন পেশ করার পর বেশ কিছু রাজ্য বিধানসভা প্রস্তাবিত মিশনের রূপায়ণ পরিকল্পনা আলোচনার জন্য পুরোদস্তুর অধিবেশন পরিচালনা করেছিল। এ ছাড়াও পরে যখনই সেই রাজ্যে গেছি ও বিশ্ববিদ্যালয়, বণিকসভা ও অন্যান্য বাণিজ্য ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে অভিভাষণ দিয়েছি, আমি সবসময় মিশনের উল্লেখ করেছি ও প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে রাজ্য মিশনের যোগসূত্র তৈরি করেছি। উদাহরণস্বরূপ কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, বিহার সমস্ত মিশন পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কেরলে প্রচারমাধ্যমও প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়ে সরকার, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা সহজসাধ্য করেছে। তারা মিশনের রূপায়ণের জন্য একটা কর্মপরিকল্পনা দিয়েছে। এভাবে প্রচারমাধ্যম রাজ্য সরকারের অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আমি সিকিম, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং মেঘালয়কে মিশনগুলি প্রদান করেছিলাম। এই রাজ্যগুলিকে বিশেষভাবে জলবিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনে এবং জলাশয়গুলির সংযুক্তিকরণে মনোযোগ দিতে হবে এবং বাঁশগাছে ফুল ধরার সময় কৃষি উৎপাদনে ক্ষয়ক্ষতি রোধ করায় সক্রিয় হতে হবে।