পরে আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম শক্তিকেন্দ্রের আশপাশের গ্রামগুলোর জন্য একটা লাগোয়া বিশেষ PURA কমপ্লেক্স গড়ে ওঠা প্রয়োজন যা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ সুযোগ এবং মূল্যসংযোজিত কর্মসংস্থানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা করবে।
এই বন্দোবস্তগুলি প্রয়োগ করা হয়েছে দেখে আমি আনন্দিত। সরকার ঘোষণা করেছেন যে, শক্তিকেন্দ্রের দ্বারা অর্জিত লভ্যাংশের ২ শতাংশ সমাজকল্যাণ, গ্রামীণ উত্তরণ এবং কুড়ানকুলাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যয় করা হবে। শক্তিকেন্দ্রের সম্পাদনকার্য শক্তিক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা লক্ষ্য অর্জনের অংশ হয়ে উঠবে।
.
গত পাঁচ বছর আমার অসংখ্য বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করার, দেশ-বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং অধ্যয়নে নিত্যসঙ্গী হওয়া, সমাজের রূপান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপকসংখ্যক ম্যানেজমেন্ট ছাত্রদের শিক্ষক হওয়া এবং তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিবেদন করার সৌভাগ্য হয়েছে। সর্বোপরি, আটটি রাজ্যে আপৎকালীন জরুরি ব্যবস্থাপন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জীবনরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করানোর অনুঘটন সম্ভব করেছিলাম।
১৫. উপসংহার / পরবর্তীকালে
১৫. উপসংহার
হে সাংসদগণ! ভারতমাতার ভাস্কর,
আমাদের আলোকের দিকে নিয়ে চলো,
মাদের জীবনকে সম্পদশালী করো।
তোমাদের সৎ পরিশ্রম আমাদের আলোকদিশা,
যদি তুমি কঠিন পরিশ্রম করো, আমরা সবাই সমৃদ্ধ হতে পারি।
২০০৭ সালে যখন আমি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার থেকে অব্যাহতি পেলাম, সংসদের উদ্দেশে আমি একটি ভাষণ দিয়েছিলাম। আগের পৃষ্ঠাগুলিতে আমি যা বলেছি, আমি অনুভব করি আমার ভাষণ সে-বিষয়ে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক এবং মনে রাখার মতো আরও কিছু সূত্রও দেয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিকতার অভিজ্ঞতা বিশ্বস্ততার একটি অনবদ্য ক্রিয়া। যখন ১৯৫১ সালে সার্বভৌমিক ভোটাধিকার অধিগ্রহণ করা হয় তখন সারা বিশ্ব জুড়ে এমন একটিও নজির ছিল না যেখানে লক্ষ-কোটি অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষ এক শান্ত এবং সমান গতিতে অগ্রসরমান সামাজিক আন্দোলন উদ্ভাবনার আশা নিয়ে রাতারাতি ভোটদানের অধিকারপ্রাপ্ত হয়েছেন। সমস্ত নাগরিককে আশ্বস্ত করা হয় তাঁদের যে অধিকারের অঙ্গীকার করা হয়েছে তা সমস্তই সংবিধানস্বীকৃত। এক মহত্তর জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ আনা এবং শতাব্দীর পর শতাব্দীর বৈদেশিক শাসনে অধীনে থাকবার ইতিহাসের যে-কোনও সময় অপেক্ষা অনেক বেশি জাতীয় সুরক্ষা, সুস্থিত ও সমৃদ্ধির প্রশ্নে আশ্বাস প্রদান করে।
রাষ্ট্র হিসেবে বিশেষত সাম্প্রতিককালে, ঐতিহাসিক অতীতের তুলনায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপে আমরা তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য লাভ করেছি। যদিও আমাদের সাফল্যের সিংহভাগ প্রকৃতিনির্ভর কারণ মানবোন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের ক্রিয়াকর্ম যতটুকু সম্ভব হয়েছে তাতে আরও দীর্ঘ পথ চলতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের জন্য সংগ্রামে ব্রতপালনের উদ্দীপনার জাতীয় মানসিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য একটা নতুন দর্শন এবং সত্যদ্রষ্টা নেতৃবৃন্দের প্রয়োজন কারণ এভাবেই আমরা বিশ্বের জন্যও যুদ্ধ করে যাচ্ছি।
সংসদ নিঃসন্দেহে ভারতবর্ষের প্রধান প্রতিষ্ঠান, প্রতিনিধিসুলভ গণতন্ত্রের প্রতিরূপ। শাসনকার্যের পদ্ধতি হিসেবে সংসদীয় গণতন্ত্র ও এক জাতীয় রাজনীতিক ব্যবস্থা, স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলিকে বজায় রেখে এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সুযোগ বর্ধন করে ভারতীয় সমাজের ঐতিহাসিক ক্ষমতা-কাঠামোকে শিথিল করে মহৎ উদ্দেশ্য প্রদর্শন করেছে। একুশ শতকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সংসদ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে কঠিনতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা ১৯৫১ সালের প্রতিষ্ঠাকালের পরে কখনও হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বিশেষত যেখানে বিষয়গুলি মানব উন্নয়ন এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত।
কিন্তু আমাদের স্পষ্টভাবে দেখতে হবে যে, ‘সংসদ নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান’ এই মনোভাবের পরিবর্তে শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগত যন্ত্র হিসেবে সংসদের কার্যকারিতা এবং আইন উদ্ভাবন ও বিবেচনার ক্ষমতা এবং রাষ্ট্র ও সরকারকে দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রদান করার ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের সক্রিয়তা, সক্ষমতা ও হিসেবনিকেশের ওপর নির্ভরশীলতা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্র যে-যে চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংসদও যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে আপনার সঙ্গে তা ভাগ করে নেওয়া কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করি এটাই তার মূল কারণ। ভারতবর্ষকে ২০২০ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এগোনোর নানা পথের পরামর্শ দিই।
সাধারণভাবে অনুভব এবং মূল্যায়ন করা হয় যে, ভারতের শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ পরিবেশ দ্রুত এবং আপাত অপরিবর্তনীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষত গত দুই দশকে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যা পরিবেশগত পরিবর্তনের দ্বারা উপস্থাপিত হয় তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দ্রুত মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়তন ও জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক সংগঠনগুলোর অবনমন ঘটে এবং সংকটপ্রবণ হয়ে ওঠে। সামাজিক সত্তা হিসেবে, ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থা মনে হয় সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে এবং এই সময়েই আত্ম-নবীকরণ এবং পরিবর্তনের তূর্যনিনাদ বেজে উঠেছে।