প্রতিটি ঘটনা আমার জীবনে নবদিগন্তের সূচনা করেছে। যখন আমি অতীতচারণ করি, তখন আত্মবিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করি ঘটনাগুলির দরুন যে পালাবদল ঘটেছিল সেখান থেকে আমি কী শিক্ষা পেয়েছিলাম। প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগুলি যথেষ্ট জটিল ও ঘটনাগুলি কালানুক্রমিকভাবে একে অপরের থেকে একেবারে আলাদা। তা সত্ত্বেও, নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য আমি যে আকাঙ্ক্ষা বোধ করি তা সমস্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তি। এইভাবে জীবন সমৃদ্ধ হয়।
একজন যা-কিছু করতে চায় তার সমস্ত কিছুর জন্য সময় বার করা খুব কঠিন। সত্যি কথা বলতে কী, আমার কার্যসূচিগুলো খুব জীবন্ত বলে মনে হয়। আগের তুলনায় আমার জীবন আরও কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল আর ভাবছিলাম নিজেকে কীভাবে আরও একটু জায়গা দেব। এই তো একদিন আগে আর কে প্রসাদ, যিনি আমার কর্মসূচি এবং কার্যক্রমসূচি দেখাশোনা করেন, তাঁকে ঠাট্টা করে বলছিলাম, কীভাবে শুক্রবার মহীশুর থেকে ফিরেই সোমবারের জন্য মোরাদাবাদ এবং রামপুরের কার্যক্রম নির্দিষ্ট করেছিল। গভীর রাত্রে গাড়িতে করে দিল্লি ফিরে আসার আগে ওখানে চারটে অনুষ্ঠানে যোগদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বুধবার প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্কে একটা অভিভাষণ এবং তারপর বৃহস্পতিবার গুয়াহাটি, শুক্রবার রাতে দিল্লি ফিরে আবার শনিবার সকালে মন্ত্রণাসভার জন্য লখনউতে বিমানে গমন। সাম্প্রতিক মাস, যেমন মে মাসের তালিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানসূচি নিম্নলিখিত। প্রতিদিনকার পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার যার সংখ্যা খুব-একটা সামান্য নয়, বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালের মে মাসের তালিকা:
১ মে, মঙ্গলবার
• বোকারো পরিদর্শন: বোকারো ইস্পাত কেন্দ্র পরিদর্শন, প্রযুক্তিবিদদের উদ্দেশে এবং চিন্ময় বিদ্যালয়ের উদ্দেশে অভিভাষণ প্রদান।
• ‘আমি কী দিতে পারি’ কার্যক্রমের উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করব, রাঁচিতে।
৫ এবং ৬ মে, শনিবার ও রবিবার
• চেন্নাই, ত্রিচি এবং কারাইকুড়ি পরিদর্শন
৭ মে, সোমবার
•ছত্তিশগড় সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩০ জন ছাত্র এবং শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা।
৯ মে, বুধবার
• মথুরায় ‘আমি কী দিতে পারি’ কার্যক্রম স্থাপন করার জন্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন।
• বৃন্দাবনে বিধবাদের আশ্রম ‘পাগল বাবা আশ্রম’ পরিদর্শন।
১১ মে, শুক্রবার
• বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিভাগের প্রযুক্তি দিবস উদ্যাপনের উদ্বোধন।
১২ মে, শনিবার
• বেদান্ত হাসপাতালের উদ্বোধন এবং আজমগড়ের ছাত্রদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশের আজমগড় পরিদর্শন।
১৫ মে, মঙ্গলবার
• জাতীয় সমবায় উন্নয়ন নিগমের সমবায়সমূহ ২০১২-এর আন্তর্জাতিক বর্ষের উদ্বোধন।
১৭-১৮ মে, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার
• সিএমআর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির স্নাতক দিবস উদ্যাপনে প্রধান অতিথি।
• মহীশূরের প্রতিরক্ষা খাদ্য গবেষণাগারে স্বর্ণজয়ন্তী বক্তৃতা।
• অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং-এ পরিদর্শন।
• জেএসএস বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন এবং ছাত্রদের উদ্দেশে অভিভাষণ প্রদান।
২১ মে, সোমবার
• মোরাদাবাদের তীর্থঙ্কর মহাবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি।
• রামপুর পরিদর্শন এবং রামপুর জেলার স্কুল ছাত্রদের অভিভাষণ প্রদান।
• সি এল গুপ্ত আই ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করা এবং ডাক্তার/কর্মীদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেওয়া।
• মোরাদাবাদ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি পরিদর্শন ও ছাত্রদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেওয়া।
২৩ মে, বুধবার
• আফ্রকীয় জাতির উদ্দেশে প্যান আফ্রিকীয় ই-নেটওয়ার্ক।
২৪ মে, বৃহস্পতিবার
• গুয়াহাটি পরিদর্শন এবং আইআইটি গুয়াহাটির বার্ষিক সমাবর্তনে অভিভাষণ প্রদান।
২৬ মে, শনিবার
লখনউ-এ হিন্দুস্তান টাইমস-এর হিন্দুস্থান উত্তরপ্রদেশ উন্নয়ন কনক্লেভে অভিভাষণ দান।
কর্মসম্পাদনের বৈচিত্র্যে, এতে যে-কেউ লক্ষ করতে পারবেন, প্রতিটি অভিভাষণে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা এবং বক্তৃতা তৈরি করাও একটা বিশেষ কাজ।
২৬ মে লখনউতে, উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা উদ্ভাবনের জন্য মন্ত্রণাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। যথারীতি বক্তব্য উপস্থাপনার প্রস্তুতির জন্য বেশ কিছু সময় নিয়েছিলাম। আমি যে-যে বিষয়গুলো তুলে ধরতে চেয়েছিলাম সেগুলো ওখানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞ এবং নতুন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে দেখে খুশি হয়েছিলাম। আটত্রিশ বছর বয়সি অখিলেশ যাদব দেশের কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরপ্রদেশ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদে সহজাতভাবে সমৃদ্ধ। দেশের ১০০ মিলিয়ন তরুণদের মধ্যে, প্রতি পঞ্চম ব্যক্তি উত্তরপ্রদেশের অধিবাসী। আমার বিশেষজ্ঞ বন্ধুরা আমায় বলেছেন ২০১৬ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে যে ১০০টা দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের সৃজন ঘটবে, তার মধ্যে শুধু এই রাজ্য থেকেই সরাসরি আটটি গড়ে উঠবে।
উত্তরপ্রদেশের অর্থনৈতিক রূপরেখা বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ অনুসারে এখানকার জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশ কৃষি এবং কৃষিজাত কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত এবং রাজ্যের উপার্জনের ৪৬ শতাংশ কৃষি থেকে অর্জিত হয়। একাদশতম পরিকল্পনা পর্বকালীন সময়ে রাজ্যে ৭.৩ শতাংশ মোট রাজ্য অন্তর্দেশীয় উৎপাদন বা জিএসডিপি (গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রডাক্ট) নথিবদ্ধ করেছে, যা তার ৬.১ শতাংশ লক্ষ্যকে অতিক্রম করেছে। রাজ্যে ২.৩ লক্ষেরও বেশি ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা রয়েছে। বর্তমানে ওখানে ২.৫ লক্ষেরও বেশি বেকার যুবক-যুবতী রয়েছে যার মধ্যে ০.৭ লক্ষ সংখ্যক হল ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে।