যুবসমাজের প্রজ্বলিত মন পৃথিবীতে,
পৃথিবীর ওপরে এবং গভীরে সবচেয়ে শক্তিশালী মূলধন।
জামগাছের ওপর একটা হলুদ পাখির গানে আমার প্রতিদিনকার প্রাতঃকালীন ভ্রমণ ভীষণ আনন্দজনক হয়। এক জোড়া ধনেশ পাখি মাঝে মাঝে আমার বাগানে উড়ে আসে, তাদের দিকে আমি নজর রাখার চেষ্টা করি। রাষ্ট্রপতি ভবনের পর আমার বাসস্থান এখন দশ রাজাজি মার্গ। আমায় বলা হয়েছিল নিউ দিল্লির স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স একসময় এখানে বাস করতেন। সময় বাতাসের বেগে এগিয়ে চলে, আমাকে দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা আর গবেষণায় ব্যস্ত রাখে। তরুণসমাজের যে উদ্দীপনা আর অটল সংকল্প আমি ক্লাসরুমের ছাত্রদের মধ্যে দেখেছি তা আমার মধ্যেও উৎসাহ ছড়ায়।
উন্নত ভারতের লক্ষ্য উপলব্ধি করার উদ্দেশ্যে মানুষের আবেগমথিত আকাঙ্ক্ষার প্রমাণ শেষ কিছু বছরে আমি পেয়েছি, জেনেছি ক্ষমতানুযায়ী নিজেদের নিবেদন করার প্রতিজ্ঞার কথা। যখন আমি পুরনো দিনের কথা চিন্তা করি আর রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন দিনগুলোর কথা ভাবি, কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়, যা এই বৈচিত্র্যময় দেশের বিচিত্র বৈশিষ্ট্যর সঙ্গে ঐতিহ্যমণ্ডিত অতীত এবং চ্যালেঞ্জিং বর্তমানের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু একটা বার্তা সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুটিত : ভারতবর্ষ ২০২০ সালে এক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে ১০ জুন, ২০০২-এর সকালটা অন্যান্য যে-কোনও দিনের মতো ছিল। ওখানে আমি ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল, প্রশান্ত পরিবেশে গবেষণার প্রজেক্ট এবং শিক্ষকতায় যুক্ত অধ্যাপক এবং কৌতূহলী ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করে সময়টা আমি সুন্দরভাবে উপভোগ করছিলাম। আমার ক্লাসে ষাটজন ছাত্রের অনুমোদন ছিল। কিন্তু প্রতিটি লেকচার চলাকালীন ক্লাসে ছাত্রসংখ্যা সারে তিনশো ছাড়িয়ে যেত এবং কোনওভাবে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত না। আমার উদ্দেশ্য ছিল যৌবনের আকাঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করা, নানা ধরনের জাতীয় মিশন থেকে লব্ধ আমার অভিজ্ঞতা বণ্টন করা এবং স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য বিশেষভাবে পরিকল্পিত দশ লেকচারের কোর্সের মাধ্যমে সামাজিক রূপান্তরের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগের কার্যসাধন পদ্ধতি উন্মোচন করা।
জাতীয় মিশন বলতে আমি কী বোঝাতে চাই? আমি বলছি মহাকাশযান নিক্ষেপ, SLV-3, Ig MDP (Integrated Guided Misile Development Programme), 1998 পারমাণবিক পরীক্ষা এবং TIFAC (Technology Information, Forecasting and Assesment Council) দ্বারা প্রস্তুত India ২০২০ রিপোর্ট-এর কথা। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের উন্নয়নে এবং বৃদ্ধির বিকাশপথে এসব পরিমাপ যোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। SLV-3 প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের রোহিণী উপগ্রহকে পৃথিবীর সন্নিবিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করার জন্য দেশীয় উপগ্রহের উৎক্ষেপণ। উপগ্রহটির উদ্দেশ্য ছিল আয়ন-মণ্ডলীয় পরিমাপ নেওয়া। লক্ষ্য ছিল IgMPD দ্বারা জাতীয় প্রতিরক্ষার শক্তির বহুবিধ মিসাইল পদ্ধতির চাহিদা পূরণ করা হবে। রণকৌশলগত এবং রণনীতিগত, উভয়ভাবেই। ‘অগ্নি-৫’ ক্ষেপণাস্ত্র এর শেষতম সাফল্য। ১৯৯৮ সালে ১১ এবং ১৩ মে-তে এই পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পাদিত হয়েছে। এইসঙ্গে ভারতবর্ষ পারমাণবিক সশস্ত্র দেশ হিসেবে পরিগণিত হল। ২০২০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার দিকনির্দেশিক ভারতের সৃষ্টি করতে TIFAC সফল হল।
আমার নবম লেকচারের নাম ছিল ‘লক্ষ্যের স্বপ্ন’ বা লক্ষ্যের প্রতি সুগভীর অন্তর্দৃষ্টি (Vision to Mission)। এতে বেশ কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। যখন লেকচার শেষ করেছিলাম, আমায় অজস্র প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছিল এবং ক্লাসে আমার পড়ানোর সময় এক ঘণ্টা থেকে বেড়ে দু’ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছিল। লেকচারের পরে আমার অফিসে ফিরলাম অন্যান্য দিনের মতো এবং গবেষক ছাত্রদের সঙ্গে লাঞ্চ সারলাম। পাচক প্রসঙ্গম হাসিমুখে আমাদের সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেছিল। দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের পরে আমি পরের ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এবং তারপর সন্ধেবেলায় আমার ঘরে ফিরলাম।
আমি যখন ফিরছিলাম আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, অধ্যাপক এ কালানিধি আমার সঙ্গ নিলেন। তিনি জানালেন আজ সারাদিনে আমার অফিসে অগুনতি টেলিফোন এসেছে এবং কেউ একজন পাগলের মতো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছিলেন। যে মুহূর্তে আমার ঘরে পৌঁছলাম, শুনলাম আমার ফোন বাজছে। ফোন তুলে জবাব দিতেই অপর প্রান্তের কণ্ঠস্বর বলল, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।’ আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রতীক্ষারত তখনই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু আমার সেলফোনে ফোন করলেন। তিনি আমায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটা জরুরি ফোনের প্রতীক্ষায় থাকতে বললেন এবং সে-সঙ্গে যোগ করলেন, ‘দয়া করে আপনি না বলবেন না।’
আমি যখন চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে কথা বলছি, অটলবিহারী বাজপেয়ীর টেলিফোন তখনই এল। তিনি বললেন, ‘কালাম, আপনার অধ্যাপনার জীবন কেমন চলছে?’