অন্যরা এই ধরনের সফর কী চোখে দেখে তা জানা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। ‘Outlook’ পত্রিকায় একটা প্রতিবেদন আমি উদ্ধৃত করছি-‘কালাম একজন সদা ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রপতি, যিনি দফতরে ১০ মাসের মেয়াদে ২১টি রাজ্য ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। যা সম্ভবত ৫ বছরের মেয়াদকালে কোনও রাষ্ট্রপতি যা করে থাকেন তার চাইতেও বেশি। তিনি এই ধরনের ঝড়ের মতো ভ্রমণে যথেষ্টসংখ্যক এমনকী সংখ্যায় ১৫টি পর্যন্ত কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করেন, ব্যস্ত কর্মসূচিতে যাতে যথাসম্ভব সুস্থ থাকতে পারেন তার জন্য আগের দিন রাত্রে পৌঁছন…।’
রাষ্ট্রপতি মেয়াদকাল সমাপ্ত হলে পরে আমি দুটি ক্ষেত্রে সন্তুষ্টবোধ করেছিলাম। যখন আমি রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করি তখন ছাত্রমহলে একটা বিষণ্ণতা ও নৈরাশ্যবোধ কাজ করছিল। আমি তাঁদের কাছে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে বলতাম। চেষ্টা করতাম তাঁদের উৎসাহিত করতে। বলতাম, যুবসমাজের কারও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা করার প্রয়োজন নেই, কারণ ভারত ভালভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। ভারতবর্ষের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের উন্নতি ঘটছে, তাঁদের বলেছিলাম। অবশ্যই এই উন্নয়নের হার সাম্প্রতিককালে বর্ধিত হয়েছে। আমার মেয়াদকাল শেষে যুবসমাজের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছিল। তাঁরা উন্নত ভারতে বাস করতে চেয়েছিলেন এবং তার জন্য তাঁরা কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনের বাইরে কীভাবে আমি মানিয়ে নেব ভেবে অনেকে আশ্চর্য হতেন। যদিও রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে আমি সক্রিয়ভাবে লেখা, শিক্ষকতা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনুপ্রেরণা দান করা এবং সেমিনার ও বৈঠকে যোগদানে নিযুক্ত ছিলাম। এই রোজনামচায় ফিরে যাওয়াই আমার ইচ্ছে ছিল। আমার কাছে চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা আইআইআইটি (Indian Institute of Information Technology), পন্থনগরের জি বি পন্থনগর কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, অহমদাবাদ ও ইন্দোরের আইআইএম, খড়গপুর আইআইটি, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় বা বিএইচইউ এবং আরও অনেক স্থানে শিক্ষকতার প্রস্তাব এসেছিল।
মনশ্চক্ষে দেখতে গেলে ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত আমার জীবনের লক্ষ্য আরও বর্ধিত হয়েছে। আমার শিক্ষকতা এবং গবেষণা এখন পন্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুসংজ্ঞায়িত হয়েছে। আমার লক্ষ্য ছিল ছাত্ররা কীভাবে ভারতের দ্বিতীয় সবুজবিপ্লবে এক সঞ্চালক কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াতে পারে। পন্থ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় গবেষণামূলক কৃষি উৎপাদনের জন্য বিস্তৃত ক্ষেত্র আছে। ভারতের প্রথম আইআইটি খড়গপুরে আমি সাম্মানিক অধ্যাপক বা ডিসটিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে সামাজিক রূপান্তর ও নেতৃত্ব বিষয়ে অধ্যাপনা করেছিলাম। হায়দরাবাদের আইআইআইটি-তে আমি তথ্যপ্রযুক্তি এবং জ্ঞান উৎপাদিত বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু করেছিলাম যা ইন্ডিয়া ২০২০ লক্ষ্যে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। বিএইচইউ এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি প্রযুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতি রূপান্তর ঘটানোয় তার বহুমাত্রিক দিক বিষয়ে অধ্যাপনা করেছি। অহমদাবাদের আইআইএম এবং লেক্সিংটনে Gatton College of Business and Economics, USA-এ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ বিষয়ক একটি ইন্টার-অ্যাকটিভ কোর্স ম্যানেজমেন্টে স্নাতক ছাত্রদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ছাত্ররা ২০২০ সালের পূর্বে ভারতবর্ষের প্রতিযোগিতামূলক দশ দফা রেখাচিত্র উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে নানা কৌশল এবং উন্নয়নের জন্য অভিনব ধারণাগুলি নিবেদন করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ একদল ছাত্র PURA-কে সরাসরি বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে প্রচেষ্টা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছে।
বিদেশের অনেক আমন্ত্রণ পাই। এখনও, দফতর ত্যাগ করার পরেও আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, রাজনৈতিক এবং শিল্পমহল থেকে, এ ছাড়া আমেরিকা যুক্তরাজ্য, ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, কোরিয়া, ইজরায়েল, কানাডা, ফিনল্যান্ড, নেপাল, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরবশাহী, তাইওয়ান, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে বিশেষ আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সফর করেছি। সফরের সময়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন করেছি, শিল্প এবং বিশ্ব যুব সম্মেলনে যোগদান করেছি, এক উন্নত ভারতের লক্ষ্য মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি এবং মূল্যভিত্তিক শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্য রাষ্ট্রের অংশীদারিত্বের গুরুত্ব ব্যক্ত করেছি। এখনও পর্যন্ত আমি ১,২০০-এর বেশি কার্যক্রমে যোগদান করে ১৫ লাখ মানুষের সঙ্গে, বিশেষত তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তাদের সঙ্গে তরুণ সমাজের স্বপ্ন আমি বণ্টন করে নিয়েছিলাম, তারা কীভাবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উন্নয়নের মহান লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা সহযোগে অনন্যসাধারণ হয়ে উঠতে চায়। এই প্রচেষ্টা এখন ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০৩০-তে উন্নীত হয়েছে।