যে সময় আমি ইন্ডিয়া ২০২০ মানসচিত্র হৃদয়ঙ্গম করার জন্য বিধানসভা এবং সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজেকর্মে নিযুক্ত ছিলাম তখন আর-এক সাংবিধানিক পদাধিকারী রাজ্যপালের দপ্তরকে এই লক্ষ্যে কাজে লাগানোর প্রয়োজন ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাজ্যপালদের সঙ্গে বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
ভারতবর্ষ ২০২০ সালের মধ্যে এক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীজির এই নিশ্চয়তার অঙ্গীকারের পশ্চাদপটে ২০০৩ সালের বৈঠক পরিচালিত হয়েছিল। যে রূপরেখার ইঙ্গিত তিনি পূর্ববর্তী বছরে লালকেল্লা এবং সংসদ অভিভাষণে দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালের রাজ্যপাল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একই উদ্দেশ্যে ভারতকে সরকারের নেতৃত্বদানের অঙ্গীকারে নিশ্চিত করলেন।
বৈঠকের হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতাগুলো আক্ষরিকভাবে মনে নেই যদিও যা বলা হয়েছিল তা আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি এবং দ্রুত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তরিক অঙ্গীকার প্রকাশের জন্য আজও তা মনে রেখেছি।
বাজপেয়ীজি বলেছিলেন, শাসনব্যবস্থার প্রতিটা অংশ অবশ্যই উন্নয়নের চাহিদা সম্পর্কে অবহিত থাকবে এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাবে যাতে আমাদের লক্ষ্য পূরণের উপলব্ধি যত শীঘ্র সম্ভব ঘটা সম্ভব হয়। একটা সম্মিলিত লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিভাগকে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে কত প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয় সেটা দেখার পরে আমি এর প্রশংসা করি। … অংশগ্রহণকারী রাজ্যপালগণ কুণ্ঠাহীনভাবে খোলাখুলি বলার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। সামগ্রিকভাবে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল যাতে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী সমস্যা এবং তার সমাধান আলোচনা করতে পারেন।
২০০৫ সালের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি দপ্তরের নির্দেশিত আলোচ্যসূচিভিত্তিক শিক্ষা, সন্ত্রাস, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা এবং ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সেশন) প্রয়োগ বিষয়ে ড. মনমোহন সিং তাঁর মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্যদের নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিচালন, উন্নয়নে রাজ্যপালদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দান করেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতির উৎসাহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। আমি এর উল্লেখ করে দেখাতে চাই কীভাবে রাষ্ট্রপতির দপ্তর আমার লক্ষ্যপূরণে প্রভাবশালী মঞ্চ হয়ে উঠেছিল।
ভারতবর্ষের ট্রায়ালকোর্ট, হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টে বিস্ময়করসংখ্যক মামলা-মোকদ্দমা অমীমাংসিতভাবে বকেয়া থাকে। এর সঙ্গে নতুন কোনও মামলা দাখিল করায় সেগুলো সংখ্যার গণনায় লক্ষাধিক হয়ে যায়। যারা এই মামলায় জড়িত তাদের পক্ষে সময় ও অর্থের বিপুল অপচয় এবং ভোগান্তির কোনও সীমাপরিসীমা থাকে না।
২০০৫ সালে, সর্বভারতীয় বিচার বিভাগীয় সংস্কার আলোচনাসভার সঙ্গে বকেয়া আদালত মামলার বিশেষ সূত্রে আমার ভাষণ প্রদানের সৌভাগ্য হয়েছিল, যেখানে আমি জাতীয় অমীমাংসিত মামলা অপসারণ মিশনের উদ্ভব সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলাম। বিচারে রায়দানের বিলম্বের কারণগুলো আমি বিশ্লেষণ করেছিলাম, যা হল: ১. যথেষ্টসংখ্যক বিচারালয়ের অভাব; ২. যথেষ্টসংখ্যক বিচার বিভাগীয় আধিকারিকের অভাব; ৩. বিচার বিভাগীয় আধিকারিকরা বিশেষ জ্ঞানসমন্বিত মামলা মোকাবিলায় সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত নয়; ৪. মামলা দায়েরকারী এবং তাঁদের আইনজীবী, যাঁরা বারে বারে মুলতুবির জন্য আবেদন করেন এবং দস্তাবেজ দাখিল করতে বিলম্ব করেন। এই দীর্ঘসূত্রী কৌশল তাঁদের দ্বারা অনুসরণ করা হয়; এবং ৫. শাসন বিভাগীয় কর্মচারীদের ভূমিকা।
আমার বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে আমি মানবতার স্পর্শের মাধ্যমে লোক আদালতের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির দ্বারা জাতীয় অমীমাংসিত মামলা হ্রস্বীকরণ মিশন গঠনের দ্বারা; সালিশি বা ফার্স্ট-ট্র্যাক কোর্টের মতো মামলার বিকল্প প্রতিবিধানের সুসমন্বিত কর্মপ্রক্রিয়ার আশ্বাস দানের দ্বারা; ভ্রান্তির সরলীকরণে উৎসাহ দানের পরামর্শ দিয়েছিলাম।
উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি-অধীন মামলায় বিশেষ বিশেষ সূত্রে আমি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তার মধ্যে কালভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল অর্থাৎ, উত্তর প্রজন্মের অপ্রয়োজনীয় মামলার প্রতি নিরুৎসাহের কারণে সেগুলো অদরকারি হিসেবে চিহ্নিত করা।
আমার প্রাথমিক সুপারিশের মধ্যে ই-বিচার বিভাগ শুরু হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে, কাল বিশ্লেষণ করে প্রচলিত মামলা নথিভুক্ত করার জন্য আমি কম্পিউটার চালিত নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছিলাম। কাল বিশ্লেষণের দ্বারা অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা অবশ্যই কমে যাবে। আমাদের একটা ডাটাবেস-এর প্রয়োজন ছিল, যা মামলা নথিভুক্ত হওয়া থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত তথ্যানুসরণ করবে। এই ধরনের বৈদ্যুতিন অনুসরণ সহজেই অনুসন্ধান, পুনরুদ্ধার শ্রেণিবদ্ধকরণ, তথ্যসমূহের প্রক্রিয়াকরণ, বিচার বিভাগীয় নথি প্রক্রিয়াকরণ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে মামলায় নিষ্পত্তি এবং প্রক্রিয়া গতিশীল করতে সহজে সক্ষম হবে। অভিযোগকারী যে-কোনও সময় মামলাটি কোন পর্যায়ে আছে, কোন বিচারালয়ে এবং কবে শুনানি হবে, বিচারালয় দ্বারা কোন বিষয় উত্থাপিত হবে, সে-সম্পর্কে জেনে সম্পূর্ণভাবে মামলার পক্ষে প্রস্তুত হতে সক্ষম হবে। সামগ্রিক স্বচ্ছতা আনা ছাড়াও বিচারকরাও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে, মুলতুবি মামলার সংখ্যা খুঁজে বার করে তার ভিত্তি অকিঞ্চিৎকর নাকি গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য তথ্য যা রায়দানে সাহায্য করে সে-সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন।