৪. এমন এক রাষ্ট্র যেখানে নৈতিক মূল্য সমম্বিত শিক্ষাব্যবস্থা সমাজ সংক্রান্ত বা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে কোনও মেধাবী ছাত্রকে অস্বীকার করে না।
৫. এমন এক রাষ্ট্র যা প্রতিভাবান পণ্ডিত, বিজ্ঞানী এবং বিনিয়োগকারীর মূল গন্তব্য হয়।
৬. এমন এক রাষ্ট্র যেখানে উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় সবাই থাকে।
৭. এমন এক রাষ্ট্র যেখানে শাসন বিভাগ দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত হয়।
৮. এমন এক রাষ্ট্র যেখানে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ উৎপাটিত, অশিক্ষা দূরীভূত এবং নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ থাকবে না এবং সমাজের কেউ নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাববে না।
৯. এমন এক রাষ্ট্র যা সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যবান, সুরক্ষিত, শান্তিপূর্ণ, সুখী এবং এক নিরবচ্ছিন্ন বৃদ্ধির পথ অনুসরণ করে।
১০. এমন এক রাষ্ট্র যা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবাসভূমি এবং যে রাষ্ট্র তার নেতৃত্বের জন্য গর্ববোধ করে।
কীভাবে দেশের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা করবেন তা এই প্রাতরাশকালীন বৈঠকে নির্ণয় করা হত। নিশ্চয়ই রাষ্ট্রপতি ভবন হল একমাত্র স্থান যেখানে দলগত পার্থক্য মুছে গিয়ে সমস্ত সাংসদদের কাছে সম্পূর্ণ অখণ্ড রাষ্ট্ররূপে ধরা পড়ত।
রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও দুটি সভার উদ্দেশে ভাষণের সুযোগ আমি দশবারের বেশি পেয়েছি।
ভাষণ ভাবগম্ভীর পরিবেশে হয়ে থাকে এবং সেন্ট্রাল হলের উপছে পড়া ভিড়ে আমার ভাষণের সময় পিন পতনের নৈঃশব্দ্য বিরাজ করত। সংসদের সঙ্গে আমার দু’ধরনের ভাবের আদানপ্রদান হত। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, পাঁচটা বাজেট বক্তৃতার মতো সম্পূর্ণ সরকারি বক্তৃতা আর অন্যটা হল আমার নিজস্ব ভাবনাচিন্তা, ধ্যানধারণাসমৃদ্ধ বক্তৃতা। সরকারি প্রেজেন্টেশনেও আমি আমার নিজস্ব কিছু ভাবনার অনুপ্রবেশ ঘটাতাম যা আমি আলোচনা করতে চাইতাম। বাজপেয়ীজি এবং ড. সিং আমার পরামর্শ গ্রহণ করতেন।
দেশের প্রতি সাংসদদের কী ভূমিকা ও দায়িত্ববোধ থাকা উচিত সে বিষয়ে তাঁদের প্রভাবিত করতে আমি এই মঞ্চ ব্যবহার করতাম। ২০০৭ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক স্মারক অনুষ্ঠানে সাংসদদের উদ্দেশে ভাষণকালে আমি যে বার্তা দিয়েছিলাম তার দ্বারা স্ব-স্ব নির্বাচন ক্ষেত্র, তাঁদের রাজ্য এবং রাষ্ট্রের প্রতি তাঁদের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। আমি বক্তব্য রেখেছিলাম, ‘প্রকৃত মুক্তি এবং স্বাধীনতার জন্য আমাদের আন্দোলন আজও অসম্পূর্ণ, আমাদের কাহিনি আজও উন্মোচিত হচ্ছে। সাংসদ এবং বিধানসভা সদস্যদের নতুন লক্ষ্য এবং নেতৃত্বের সঙ্গে অগ্রসর হওয়ার সময় এসে গেছে, যাতে আমাদের রাষ্ট্র শুধুমাত্র আলোকিত, ঐক্যবদ্ধ, সুসংবদ্ধ, সম্পদশালী এবং সমৃদ্ধ হয়ে না থেকে, সর্বোপরি এক সুরক্ষিত রাষ্ট্র, বহিঃশত্রু এবং সীমান্ত অনুপ্রবেশকারীদের কাছে চির অভেদ্য হয়…
রাষ্ট্রের জনগণের ভেতর জাতীয় নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলবে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা লক্ষ্যের দিকে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে নতুন নতুন জাতীয় মিশন সূত্রাকারে এবং রূপায়ণের দ্বারা সাহসিকতার সঙ্গে উদ্ভাসিত হবে। ভারতবর্ষ গত ষাট বছরে অর্থনীতি, সমাজ এবং রাজনীতির প্রাঙ্গণে বহু সাফল্যজনক কৃতিত্বের জন্য যথেষ্ট গর্ববোধ করতে পারে। কিন্তু অতীতের সাফল্যে আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে থাকতে পারি না এবং প্রযুক্তি, শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তনের আহ্বানকেও উপেক্ষা করতে পারি না। অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া প্রয়োজন। যেমন, স্থায়ী সরকার গঠন করতে বহুদলীয় জোটের উত্থান ঘটাতে হবে যা দ্রুতগতিতে স্থায়ী, দ্বি-দলীয় শাসনব্যবস্থায় পরিণত হবে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার জন্য এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। মোট অন্তর্দেশীয় উৎপাদন বা জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বদলে সার্বিক জাতীয় উন্নয়নসূচক (ন্যাশনাল প্রসপারিটি ইনডেক্স) না থাকায় আশানুরূপ বিকাশের সময়েও আর্থিক অসমতা বড় প্রকট দেখায়। পৃথিবী জুড়ে জৈব জ্বালানির ভাণ্ডারের দ্রুত ক্ষয়ের ফলে শক্তিক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়া, নতুন ধরনের যুদ্ধের সংকেতের উদ্ভাবন আমাদের নিরাপত্তার প্রতি আতঙ্ক বাড়াচ্ছে…।
আমি আরও বলেছিলাম: যখন আমি আপনাদের দেখি, মাননীয় সাংসদগণ, বিশেষত তরুণ সদস্যগণ, তখন আপনাদের মধ্যে আমাদের দেশের অনেক দূরদর্শী নেতা, যেমন— মহাত্মা গাঁধী, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, সর্দার পটেল, সুভাষচন্দ্র বোস, ড. অম্বেডকর, আবুল কালাম আজাদ, রাজাজি প্রমুখের শাশ্বত চৈতন্যের সন্ধান পাই। সব কিছুর ঊর্ধ্বে দেশকে স্থাপন করে আপনারা কি ভবিষ্যৎদর্শী পথপ্রদর্শক হতে পারবেন? ভারতবর্ষের মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আপনি কি অন্যতম একজন হতে পারবেন? হ্যাঁ। হ্যাঁ আপনি পারবেন। আপনি পারবেন যদি, ভারতবর্ষকে ২০২০ সালের আগে একটা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ, সুখী, শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত রাষ্ট্র হিসেবে রূপান্তরিত করার মহান লক্ষ্যে ব্রতী হয়ে সংসদকে আপনার নেতৃত্ব দ্বারা উজ্জীবিত করতে পারেন। বাস্তবে এর রূপায়ণ ঘটাতে, মাননীয় সদস্য, আপনার থাকতে হবে মহৎ উদ্দেশ্য এবং দেশের জন্য আপনাকে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে কাজ করতে হবে। ক্ষুদ্র এবং খণ্ডিত কার্যকলাপ থেকে লক্ষণীয়ভাবে অপসারণ করে দেশের জন্য এক মহান, সাহসী এবং তড়িদ্গতি মিশন শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার উৎসাহর জন্য ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে।