১। আমি মনে করি ঈশ্বর আমাকে এক অনন্য সুযোগ দিয়েছেন আমার পঞ্চায়েতের মানুষজনকে সেবা করার।
২। আমার ব্রত হল মানুষের সহযোগিতায় পঞ্চায়েতকে সমৃদ্ধ করা।
৩। আমি নিশ্চিত করে বলছি যে, মানষের সঙ্গে সব বিষয়ে আমি সৎ আর স্বচ্ছ থাকব।
৪। আমি নিশ্চিত করব যে, আমার পঞ্চায়েতের মানুষ হবেন জুয়া আর নেশা মুক্ত।
৫। আমার পঞ্চায়েতকে আমি ১০০ শতাংশ, মহিলা সমেত, শিক্ষিত করে তুলব।
৬। আমার পঞ্চায়েতের মানুষকে আমি বোঝাব যাতে পুত্রসন্তান আর কন্যাসন্তানকে সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে দেখা হয়।
৭। আমি নিশ্চিত করব যাতে, আমার পঞ্চায়েতের সকল গৃহে স্যানিটেশন আর নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকে।
৮। আমি নিশ্চিত করব যাতে আমার পঞ্চায়েত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং আমি বিশ্বাস করি পরিচ্ছন্নতা শুরু হয় নিজ গৃহে।
৯। আমার পঞ্চায়েতের যাবতীয় জলাধার আমি ব্যবহারযোগ্য করে দেব।
১০। আমার পঞ্চায়েতকে আমি এক আদর্শ পঞ্চায়েত করে তুলব।
.
দশ : স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী
সকলের জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছিয়ে দেওয়া ভারতের কাছে এক বিরাট উদ্বেগের বিষয়। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জনগণই একটি রাষ্ট্রকে মহান করে তুলতে পারে। সুস্বাস্থ্যের এক দেশ নির্মাণে হাসপাতাল, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ২০১৫ সালের যে হিসেব তাতে ভারতে ওই বছর ৯,৫০,০০০ জন অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন। হিসেবমতো, সরকারি হাসপাতালে প্রতি ১১,৫০০ জনের জন্য একজন ডাক্তার। গড়ে প্রত্যেক সরকারি হাসপাতাল ৬১,০০০ জন মানুষকে পরিষেবা দেয়। ১৮৩৩ জন রুগির জন্য আছে একটি মাত্র শয্যার ব্যবস্থা। সুতরাং, তার স্বাস্থ্য পরিষেবার চিত্রকে উন্নত করতে ভারতকে পার হতে হবে বহু পথ।
আমার চোখে একুশ শতকের এক হাসপাতাল
সমগ্র চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থায় মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতালগুলির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে। আমার দৃষ্টিতে একুশ শতকের হাসপাতাল এমন হওয়া উচিত:
১। প্রত্যেক রুগির ভিতর বিশ্বাস জাগাতে হবে যে, তিনি নিরাময় হবেন। পরিতৃপ্তি আর আশা সর্বত্র ছড়িয়ে দেবে হাস্যোজ্বল ডাক্তার, নার্স এবং হাসপাতালের সুন্দর পরিবেশ।
২। প্রত্যেক রুগি কী বলছেন তা শুনতে হবে। রুগির যন্ত্রণার উপশম করাই হবে প্রত্যেক ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য প্যারামেডিকাল স্টাফের ব্রত। যে-কোনও স্থানে এবং যখন প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দল রুগিকে পরীক্ষা করে সত্বর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
৩। হাসপাতাল গ্রিন হাউস ধারণার প্রয়োগে কমিয়ে আনবে বিদ্যুৎ আর জলের খরচ।
৪। হাসপাতাল ঘিরে থাকবে সবুজ গাছপালা আর মরশুমি ফুল।
৫। রুগিদের যাবতীয় পরীক্ষার রিপোর্ট একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে জমা থাকবে যাতে তা সহজলভ্য হয় এবং রুগি বা তাঁর আত্মীয়কে সময় ও শ্রম ব্যয় করে তা খুঁজতে না হয়।
৬। এমনভাবে হাসপাতালের ডিজ়াইন করতে হবে যাতে রুগিকে সময়মতো শুশ্রূষা করতে সহজেই স্থানান্তর করা যায়।
৭। হাসপাতালের সরঞ্জাম ও পরিবেশ রুগিদের দেবে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমক্ত পরিসেবা।
৮। হাসপাতাল এমন হবে যেখানে রুগি মনে করবেন যে, এই হাসপাতালই সব থেকে উৎকৃষ্ট স্থান যেখানে থেকে তিনি সব থেকে ভাল চিকিৎসা পাবেন।
৯। হাসপাতালকে হতে হবে সম্পূর্ণ আইটি নির্ভর যাতে, রুগির সঙ্গে ডাক্তার, নার্স এবং হাসপাতালের প্রধানের সর্বক্ষণ কম্পিউটার-যোগাযোগ থাকবে। দেশের অন্য বড় হাসপাতালগুলির সঙ্গেও হাসপাতালটির যোগাযোগ থাকবে যাতে পরামর্শ ও মতামত নেওয়া যায়।
১০। প্রতিদিন একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত কনফারেন্সের ব্যবস্থা করবে হাসপাতালটি যাতে, রুগিদের ভিন্ন ভিন্ন স্বতন্ত্র সব সমস্যাগুলি আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
একুশ শতকের এমন রুগি-বন্ধু হাসপাতাল পরিকল্পনা করে গড়তে প্রয়োজন বিভিন্ন বিষয়ে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ, যাতে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে থাকে পরিকল্পিত বৃদ্ধির সুযোগ। সাফল্যের চাবিকাঠি হল বিভিন্ন স্তরে মননশীল নেতৃত্ব।
মননশীল স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের কিছু বৈশিষ্ট্যাবলি
আমার জীবনে আমি তিনটি স্বপ্নকে দেখেছি প্রথমে লক্ষ্য হিসেবে, তারপরে ব্রত হিসেবে এবং শেষে বাস্তবায়িত হয়ে মূর্ত হতে: ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (আইএসআরও বা ‘ইসরো’)-র অন্তরিক্ষ প্রকল্প, ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-র ‘অগ্নি’ প্রকল্প, এবং প্রোভাইডিং আরবান অ্যামেনিটিস ইন রুরাল এরিয়াজ় বা ‘পুরা’ প্রকল্প। অবশ্য, এই তিনটি প্রকল্পই সাফল্য পেয়েছে নানান চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার মধ্য দিয়ে। এই তিনটি প্রকল্প থেকে আমি নেতৃত্ব সম্পর্কে যা শিখেছি তা হল:
১। নেতার চাই এক ধরনের বীক্ষণ।
২। নেতার প্রয়োজন তার লক্ষ্যকে বাস্তবে পরিণত করার আবেগ।
৩। নেতার থাকবে অনাক্রমণ পথে যাওয়ার ক্ষমতা।
৪। নেতাকে জানতে হবে কীভাবে সাফল্য এবং অসাফল্য— দুই-ই স্বীকার করে নিতে হয়।
৫। নেতার থাকবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
৬। নেতার ব্যবস্থপনায় থাকবে আভিজাত্য।
৭। নেতার প্রতিটি কাজে থাকবে স্বচ্ছতা।