ওপরে শক্তির যে ফলাফলের কথা বলেছি, তা হলো মোটিভ। এই শক্তি ব্যক্তিমানুষের জাড্য এবং কাজের পরিবেশে তার আচরণের ভিত্তি গঠন করে। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অধিকাংশ মানুষের ভেতরে রয়েছে বিপুল শক্তি, বেড়ে ওঠার ঝোঁক, প্রতিযোগিতা। সমস্যা হয়েছে কাজের পরিবেশের অভাব যা তাদের উদ্দীপ্ত করতে পারবে আর পূর্ণ অভিব্যক্তি দিতে পারবে তার অভীষ্টের দিকে। নেতারা উঁচু উৎপাদনশীতার স্তর সৃষ্টি করতে পারেন জব ডিজাইন আর যথার্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে। আর কঠোর কাজের স্বীকৃতি দিয়ে।
আমি এ ধরনের সহায়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলাম ১৯৮৩ সালে আইজিএমডিপি উৎক্ষেপণের সময়। সেই সময়ে প্রকল্প ডিজাইন পর্যায়েই ছিল। কর্মতৎপরতার ক্ষেত্রে ফলাফল বেড়ে দাঁড়াল চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ। এখন বহুমুখী প্রকল্প প্রবেশ করছিল ডেভলপমেন্ট ও ফ্লাইট-টেস্টিং স্তরে, যেসব বড়ো ও ছোটো মাইলস্টোনে পৌঁছান গিয়েছিল সেগুলোর কারণে কর্মসূচি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। আত্মভূতকরণের ভেতর দিয়ে তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি দলের গড় বয়স নামিয়ে আনা হলো ৪২ থেকে ৩৩ বছরে। আমি অনুভব করলাম তখন দ্বিতীয়বার রিঅর্গানাইজেশনের সময় হয়েছে। কিন্তু সেটা করব কীভাবে? সে সময়ে সহজলভ্য মোটিভেশনাল ইনভেনটরি কাজে লাগালাম আমি-তিন ধরনের বোধশক্তি তার মূল ভিত্তি: এই প্রয়োজনীয়তা বোঝা যে লোকেরা কাজ করে তৃপ্ত হতে চায়, ফলাফল বোঝ যে জব ডিজাইন চলমান রয়েছে, এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির আচরণে ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধির ক্ষমতা বোঝ।
১৯৮৩ সালে রিঅর্গানাইজেশন করা হয়েছিল নবায়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে: খুব জটিল এ কাজ করেছিলেন এভি রঙ্গ রাও এবং কর্ণেল আর স্বামীনাথন। নতুন যোগদান করা তরুণ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একজন মাত্র অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা একটা দল গঠন করেছিলাম আর তাদের চ্যালেঞ্জ তুলে দিয়েছিল। স্ট্র্যাপ-ডাউন ইনার্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম এবং একটা অন-বোর্ড কম্পিউটার ও প্রপালসন সিস্টেমে একটা র্যাম রকেট তৈরি করার। দেশে এই চেষ্টা ছিল এটাই প্রথম, আর যে ধরনের প্রযুক্তি এতে ব্যবহৃত হয়েছিল তা ছিল বিশ্বমানের। তরুণদের দলটি শুধু যে এই সিস্টেমের ডিজাইন তৈরি করল তাই নয়, তার সেটাকে অপারেশনাল ইকুইপমেন্টেও রূপদান করল। পরবর্তী সময়ে পৃথ্বী ও অগ্নিতে একই গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিল আর ফল পাওয়া গিয়েছিল অসাধারণ। এই তরুণ দলের প্রচেষ্টায় সংরক্ষিত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল।
.
পৃথ্বীর কাজের প্রায় শেষের দিকে নতুন বছর শুরু হলো-১৯৮৮। দেশে প্রথমবারের ন্যায় ব্যবহৃত হতে যাচ্ছিল গুচ্ছভুক্ত লিকুইড প্রোপেল্যান্ট (এলপি) রকেট ইঞ্জিন। সুযোগ ও নীতি নির্ধারণের মান সত্ত্বেও সুন্দরম ও আমি পৃথ্বীর দলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করছিল সৃজনশীল আইডিয়ার ওপর, যা অনুপ্রবিষ্ট করা যাবে কর্মযোগ্য উৎপন্ন দ্রব্যে। ওয়াই জ্ঞানেশ্বর ও পি বেনুগোপালনের সঙ্গে সরস্বৎ এক্ষেত্রে বিশাল কাজ করেছিলেন। তাদের দলের ভেতর তারা সাফল্যের ও গর্বের বোধ সঞ্চারিত করেছিলেন। এই রকেট ইঞ্জিনের গুরুত্ব সীমাবদ্ধ ছিল না পৃথ্বী প্রকল্পের কাছে এটা ছিল একটা জাতীয় অর্জন। যৌথ নেতৃত্বের অধীনে বিপুলসংখ্যক প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ দলের লক্ষ্য বুঝতে পেরেছিলেন আর নিজেদের তারা অঙ্গীকারবদ্ধ করেছিলেন। তাদের পুরো দল কাজ করত এক ধরনের আত্মনির্দেশনায়।
সুন্দরম ও সরস্বতের দক্ষ ও নিরাপদ হাতে ভেহিকল ডেভলপমেন্ট ছেড়ে দিয়ে আমি মিশনের সমালোচনাযোগ্য বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলাম। মিসাইল সাবলীলভাবে উত্তোলনের জন্য লঞ্চ রিলিজ মেকানিজম (এলআরএম) তৈরির সতর্ক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এক্সপ্লোসিভ বোল্টের যৌথ নির্মাণে ডিআরডিএল ও এক্সপ্লোসিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ল্যাবরেটরি (ইআরডিএল) ছিল বহু-কর্মকেন্দ্র সমন্বয়ের এক চমকপ্রদ উদাহরণ।
আকাশ ভ্রমণকালে নিচের ভূদৃশ্যের দিকে মুগ্ধ চোখে আমি তাকিয়ে থাকতাম। তা ছিল কী অপরূপ সুন্দর, কী বৈচিত্র্যময়, কী শান্তিপূর্ণ। সেই এক দূরত্ব থেকে, আমি অবাক হয়ে কল্পনা করতাম কোথায় সেই বাউন্ডারিগুলো যা আলাদা করে এক জেলাকে আরেক জেলা থেকে, এক স্টেটকে আরেক স্টেট থেকে, এক দেশকে আরেক দেশ থেকে। হতে পারে ওই রকম এক দুরত্ব আর বিচ্ছিন্নতার বোধ প্রয়োজন হয় আমাদের জীবনের সকল তৎপরতা মোকাবেলা করার জন্য।
বালাসোরে ইন্টারিম টেস্ট রেঞ্জ সম্পূর্ণ হতে তখনও আরও এক বছর বাকি ছিল, সুতরাং আমরা পৃথ্বী উৎক্ষেপণের জন্য এসএইচএআরে একটা বিশেষ স্থাপনা তৈরি করে নিয়েছিলাম। এতে ছিল একটা লঞ্চ প্যাড, ব্লক হাউজ, কন্ট্রোল কনসো আর মোবাইল টেলিমেট্রি স্টেশন। আমার পুরনো বন্ধু এমআর কুরুপের সঙ্গে এখানে আবার পুনর্মিলন ঘটল, তখন সে এসএইচএআর সেন্টারের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিল। পৃথ্বী উৎক্ষেপণ পর্যায়ে কুরুপের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টা আমাকে বিশাল তৃপ্তি দিল। কুরুপ পৃথ্বীর জন্য কাজ করেছিল একজন দলীয় সদস্য হিসাবে। যে বাউন্ডারি রেখা ডিআরডিও এবং আইএসআরওকে, ডিআরডিএল এবং এসএইচএআরকে বিভক্ত করেছিল তা সে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিল। আমাদের সঙ্গে লঞ্চ প্যাডে প্রচুর সময় খরচ করত কুরুপ। সে আমাদের সহযোগিতা করেছিল রেঞ্জ টেস্টিং ও রেঞ্জ সেফটিতে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে আর সে প্রোপেল্যান্ট ফিলিঙে কাজ করেছিল প্রচুর উদ্যম নিয়ে। পৃথ্বী উৎক্ষেপণটাকে সে স্মরণীয় অভিজ্ঞতার রূপ দিয়েছিল।