আমাদের বুঝতে হবে এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির নেপথ্যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হল তার সৃষ্টির জন্য শান্তি ও সুখ নিশ্চিত করা।
আ:কা: ভারতকে উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে আমার মনে হয় তিন শ্রেণীর লোক দরকার– পূণ্য আত্মা (সচ্চরিত্রবান লোক), পূণ্য নেতা (আদর্শবান নেতা) ও পণ্য অধিকারী নীতিবান অফিসার)। আমাদের সমাজে যদি এই তিন শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বাড়ানো যায় তাহলে ভারতবর্ষ জগৎগুরুতে পরিণত হবে। কিন্তু স্বামীজি, তাদের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
স্বামীজি : সমাজে এজাতীয় লোকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি আমাদের স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে আধ্যাত্মিক ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বর্তমানে ধর্মীয় স্কুল কলেজের সিলেবাস থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। যে নৈতিক শিক্ষাগুলো শৈশবেই একটি মানুষের জন্য দরকার সেটাই এড়িয়ে চলা হচ্ছে। কিন্তু জীবনের শুরু থেকে জন্মের পর থেকে নৈতিক শিক্ষা পেলে তবেই একটি শিশু আদর্শবান নাগরিক হয়ে উঠবে। নৈতিকমূল্যবোধ সম্পন্ন জাতিগঠনের জন্য আমাদের পাঠ্যসূচীর সিলেবাসে সাধু ও জ্ঞানতাপসদের জীবনী ও বাণী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনীতির ক্ষেত্রে যেসব মহান নেতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় তাদের সঠিক মূল্যায়নের জন্য তাদের মহানশিক্ষাও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অতীতে, আমাদের গুরুকুল পদ্ধতির শিক্ষানীতিতে এ ধরণের পাঠ্য বিষয় চালু ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেই সত্যবড়া, ধর্মছড়া, পারস্পরিক সহযোগিতা, ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়ানো হত।
আ: কা: সরকারের আইন ছাড়া কখনও উত্তম নাগরিক গড়ে তোলা যায়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কি একাজটি করতে পারছে? আপনি কি পিতামাতাকে তাদের বাচ্চাদেরকে পনেরো বছরের অধিক বয়সের মানুষের নাগরিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য নির্দেশ দিতে বলবেন? একইভাবে বাচ্চাদেরকে বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপদেশ দেওয়া সমস্ত স্কুল শিক্ষকদেরও উচিত। যদি আমরা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হই তাহলে সরকারও সৎ ও ভালো নাগরিক সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হবে। স্বামীজি কি আমার সংগে একমত হবেন?
স্বামীজি : অবশ্যই। একথা সত্যি। একথা সর্বাংশে সত্যি। প্রথম থেকেই তো আমরা বলছি বাড়িতে পিতামাতার কাছ থেকে, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আর পরবর্তী জীবনে গুরুর নির্দেশ মত জীবন গঠন করতে হবে।
আ: কা: স্বামীজি, আমি যখন প্রথম একটি রকেট উৎক্ষেপন করি– সেটি ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু আইএসআরওর সহযোগীতা ও প্রেরণায় দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে আমার টিম ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করে। একই ঘটনা ঘটেছিল তিরুয়াভালুবার উৎক্ষেপনের সময়। প্রথমে ব্যর্থ হয়ে, ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সে মিশনেও সফল হয়েছিলাম।
স্বামীজি : এমন মহান উচ্চাশা ও আকাঙ্ক্ষা থাকলে দেশপ্রেম আপনিই জাগ্রত হয়। একারণেই আমরা বলি, জীবনের শুরুতে যদি কারও মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের জন্ম দেওয়া যায় তাহলে আপোসেই তার মধ্যে জাতির প্রতি, সমাজের প্রতি এবং ধর্মের প্রতি ভালোবাসা পয়দা হবে। মোট কথা, ধর্মীয় অনুভূতি জীবনের পোক্ত ভিত্তি রচনা করে।
আ: কা: ও আধ্যাত্মিক শক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর সংগে আমি মনে করি অর্থনৈতিক শক্তিও দরকার। মানে আমি বলতে চাইছি আধ্যাত্মিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির সম্মিলন হওয়া জরুরী। আর এ দুটো অর্জনের জন্য অপরিহার্য বিষয় হলো শ্রম-ঘাম। কঠোর পরিশ্রম অবশ্যই দরকার।
স্বামীজি: আমরা প্রায়ই বলি, ঈশ্বরের আশীর্বাদ আর মানুষের কর্ম। এমন কি এই যে একটু আগে তুমি বললে তোমার প্রথম রকেট উৎক্ষেপন ব্যর্থ হয়েছিল; তার মধ্যেও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমার প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তুমি কাজটি আরও নিখুঁতভাবে করতে পেরেছিলে। ঈশ্বর স্বাভাবিকভাবেই অবশেষে তোমাকে সাফল্য দিয়েছেন।
আ: কা: ভারতবর্ষের উন্নয়নের জন্য পাঁচজন মহান ব্যক্তিকে সংগে নিয়ে আমি ভিশন ২০২০ নামে একটি গণমত আন্দোলন গড়তে চাচ্ছি। আমি আপনার আশীর্বাদ চাচ্ছি।
স্বামীজি: তোমার ওপর এমনিতেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে। আমি প্রার্থনা করি তোমার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক ভাবে যেন উন্নত হয়। আমার প্রার্থনা ভারতবাসী যেন আধ্যাত্মিক ও নৈতিক সম্পদে ঐশ্বর্যবান হয়। ঐশ্বর্যশালী ইচ্ছাশক্তির মানুষের কাছে পৃথিবীর তাবৎ ঐশ্বর্য আপনিই ধরা দেয়। তুমি যদি শুধু পার্থিব ধনের পাহাড় গড়ে তোল তাহলে মানুষ জাগতিক ও পার্থিব ভোগবিলাসীতায় হারিয়ে যাবে। আধ্যাত্মিক শক্তি তার সহগামী হলে ধ্বংসের পথ থেকে তাকে তা রক্ষা করবে। বাস্তবতায় আমরা জনগণের ভাত, কাপড়, আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এসবের সংগে তার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের দিকেও আমাদের খেয়াল করতে হবে। যখন একজন মানুষ তার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে তখন সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।