বিশৃঙ্খল মিটজির অ্যাপার্টমেন্টে সবকিছুই প্রায় আগে মতই আছে। আগন্তুকদের জন্য খোলা আছে তার ঘর, যারা ওর দেয়া ড্রিংক পান করে, খাবার খায় আর কে কার চেয়ে বেশি উন্মাদ হতে পারে তার প্রতিযোগিতা করে।
প্রথম বেডরুমে ঢু মেরে ডেভিড দেখল অদ্ভুত একটা মেয়ে কোঁকড়া চুল। ছড়িয়ে ছেলেদের পাজামা পরে ঘুমিয়ে আছে বিছানায়, মুখে আবার বুড়ো আঙুল।
দ্বিতীয় রুমে ভাগ্য খুলে গেল তার। কেউ নেই। যদিও বিছনার অবস্থা যাচ্ছে-তাই আর কেউ একজন পাশের টেবিলের উপর নাশতার ডিম ফেলে চলে গেছে।
কাঁধের ব্যাগ বিছানার উপর রাখল ডেভিড। স্নানের জিনিসপত্র বের করে নিল। দ্রুত বেশবাশ বদলে পাশের সিঁড়ি যেটা ধাপে ধাপে নেমে গেছে সমুদ্রতটে, দৌড়ানো শুরু করল–প্রথম দিকে হালকা পায়ে; তারপর হঠাৎ করেই এত জোরে দৌড়াতে লাগল যেন ভয়ঙ্কর কোন জন্তু তার পিছু ধাওয়া করে আসছে। চতুর্থ বিচের শেষে যেখান থেকে শুরু হয়েছে পাথর, বরফ শীতল পানিতে নেমে গেল ডেভিড। বাকোভেন পয়েন্টের কিনার পর্যন্ত চলে এলো। খোলা হাতে সাঁতার কাটায় হাড় পর্যন্ত যেন জমে গেল ঠাণ্ডায়। তাই তীরে উঠে এলে দেখা গেল ও নীল হয়ে কাঁপছে। কিন্ত বিমর্ষতা কেটে গেল পুরোপুরি। আর মিটজির অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশে জগিং করার সময় আবারো উষ্ণ হয়ে উঠল শরীর।
বাথরুম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মেয়েদের অন্তর্বাসের পাহাড় ছড়িয়ে তবেই স্নান শেষ করল ডেভিড। বের হতেই সামনের দরজা খুলে উত্তরের বাতাসের মতে এগিয়ে এলো মিটজি।
‘কোথায় ছিলে তুমি, ওয়ারিওর?’ দরজার গায়ে তাল বাজাচ্ছে মিটজি। আমি গ্যারাজে তোমার গাড়ি দেখেছি। বুঝতে পেরেছি তুমি এখানে এসেছে!’
‘এখানেই আছি, ডল। জানাল ডেভিড। দরজায় দাঁড়িয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসল তারা। ওজন বেড়ে গেছে মিটজির। স্কার্টের ভাঁজ শক্ত হয়ে এঁটে আছে শরীরে। শরীর ভারী। বেগুনি সোয়েটারের নিচে যৌবন উঁকি দিচ্ছে। অবশেষে হার মেনেছে মায়োপিয়ার কাছে। ছোট্ট নাকের শেষ মাথায় বসে আছে মেটাল ফ্রেমের চশম। ইতস্তত ছড়িয়ে আছে চুল।
‘তুমি অনেক সুন্দর হয়ে গেছ।’ চিৎকার করে এগিয়ে এসে ডেভিডকে কি করল মিটজি। সোয়েটারে লেগে গেল ডেভিডের সাবান। সে অবস্থায় তাকে জড়িয়ে ধরল মিটজি।
‘ড্রিংক না কফি? জানাতে চাইল মিটজি। অ্যালকোহলের চিন্তায় বিবমিষা বোধ হলো ডেভিডের। কফিই ভালো হবে, ডল।
মগ ভর্তি কফি নিয়ে এসে বাথরুমের টয়লেট সিটে বসল মিটজি। বাথটাবে স্নানরত ডেভিড।
‘এবার বলল সবকিছু! আদেশ দিল মিটজি। কথার মাঝেই সুন্দরী কালো চুলের মেয়েটা ঢুকলো রুমে। এখনো পায়জামা পরিহিত অবস্থায় মুখে নিদ্রার আবেশ।
‘আমার কাজিন, ডেভিড। ও খুব সুন্দর তাই না? মিটজি পরিচয় দিল ডেভিডের। আর ও হো লিজ, ডেভিড।
কর্ণারে রাখা নোংরা ঝুড়ির উপর গিয়ে বসল মেয়েটা। আর এমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ডেভিডের দিকে যে সাবধান করে দিল মিটজি। ধীরে ডার্লিং। এখান থেকেও আমি টের পাচ্ছি যে তোমার ওভারি নাচানাচি করছে পিং পং বলের মতো।
কিন্তু মেয়েটা এমন চুপ করে আছে যে শীমিই তার অস্তিত্ব ভুলে কথা বলা শুরু করল ডেভিড আর মিটজি। হঠাৎ করে কোন ভূমিকা না করেই বলে উঠল সে, ‘পাপা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ঠোঁট চাটছে লতা পেঁচানো রাক্ষসের মতো। শনিবার রাতে তাদের সাথে ডিনার করেছিলাম আমি–এক কোটিরও বেশি বার তোমার নাম নিয়েছে। ওখানে টপ ফ্লোরে তোমাকে দেখাটা বেশ অদ্ভুত হবে। ধূসর রঙের স্যুট, সোমবার সকালের কনফারেন্স
হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়াল ডেভিড। গায়ে থেকে ঝরে পড়ছে পানি। সবেগে সাবান ঘসতে লাগল নিম্নাগ্নে। আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েরা। কালো চুলের মেয়েটার চোখ দুটো এত বড় হয়ে গেল যেন সারা মুখে আর কিছু নেই।
আবারো বসে পড়ে গায়ে পানি দিল ডেভিড। বাথটাব উপচে পড়ছে পানি।
‘আমি যাচ্ছি না।’ ঘোষণা করল সে। নেমে এলো দীর্ঘ নীরবতা!
“মানে কী–তুমি যাচ্ছো না?’ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে মিটজি।
‘এটাই। ব্যাখা করল ডেভিড।
‘আমি যাচ্ছি না মরগ্যান গ্রুপে।
‘কিন্তু তোমাকে যেতেই হবে!
কেন? জানতে চাইল ডেভিড।
‘ওয়েল, আমার কথার অর্থ যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে তুমি বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলে এয়ারফোর্সের পড়াশোনা শেষে ফিরে আসবে।
না।’ জানাল ডেভিড। আমি কোন প্রতিজ্ঞা করিনি। সে এমনিতেই মেনে নিয়েছিল। এক মুহূর্ত আগে তুমি যেমন বলছিলে সোমবার সকালে কনফারেন্সে উজ্জ্বল উপস্থিতি–আমি জানি আমি এসব পারব না। আমার ধারণা আমার সম্পর্কে ভালোই জানা আছে সবার।’
‘তাহলে কী করবে তুমি? প্রথম শোকের ধাক্কা কাটিয়ে উঠল মিটজি। গালগুলো উত্তেজনায় হয়ে উঠল গোলাপি।
‘আমি জানি না। আমি শুধু জানি যে আমি অন্যদের অর্জন পাহারা দিতে পারব না। মরগ্যান গ্রুপ মানে আমি নই। এটা তৈরি করেছে পূর্বপুরুষ, বাবা আর আংকেল পল। এটা অনেক বড় আর বেশ ঠাণ্ডা
উজ্জীবিত হয়ে উঠল মিজি, উজ্জ্বল চোখে নিজের সম্মতি জানাল। বিদ্রোহের সম্ভাবনায় নেচে উঠল তার মন।
ডেভিড নিজেও এটা ভেবে গরম হয়ে উঠল। আমি আমার নিজের পথ খুঁজে বের করব চলার জন্য। আরো অনেক কিছু আছে করার। এর চেয়ে বেশি কিছু থাকতেই হবে।