এই প্রথম ডেভিডের ডাক নাম ধরে ডাকলেন তিনি, পদবী নয়। ডেস্কের কর্ণারে ফ্লাইং হেলমেট রেখে চেয়ারে বসল ডেভিড, আঁটসাঁট জি-স্যুটে অস্বস্তি হচ্ছে।
সময় নিয়ে নিজের পাইপে ভয়ঙ্কর ম্যাগলিসবার্গ তামাক ভরলেন কর্নেল। মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে দেখতে লাগলেন বিপরীত প্রান্তে বসা তরুণটিকে। পল মরগ্যান যে গুণ দেখতে পেয়েছিল একই জিনিস লক্ষ্য করলেন কর্নেল রাসটাস। উদ্ধত আর প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। একজন পাইলটের জন্য যা গুণ হিসেবে অনন্য।
অবশেষে পাইপ ধরিয়ে ঘন নীল ধোঁয়ার মেঘ ছেড়ে ডেস্কের উপর দিয়ে ডেভিডের দিকে ঠেলে দিলেন একতোড়া কাগজ।
‘পড় আর সাইন করো’, বললেন তিনি। এটা অর্ডার। দ্রুত কাগজগুলোতে চোখ বোলালো ডেভিড। এরপর মুখ তুলে কর্নেলের দিকে তাকিয়ে হাসল।
‘আপনি এত সহজে ছাড়বেন না, স্যার।’ স্বীকার করল সে।
একটা দলিলে লেখা আছে ডেভিডের শর্ট সার্ভিস কন্ট্রাক্ট আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। অন্যটি পদোন্নতির দলিল ক্যাপ্টেন থেকে মেজর।
‘তোমাকে আজকের তুমি’তে তৈরি করার জন্য আমাদের অনেক সময় আর অর্থ অপচয় হয়েছে। তোমার মাঝে আছে কিছু অসাধারণ প্রতিভা, আর আমরা একে বাড়িয়ে উন্নত করেছি আমি শব্দের অপচয় করব না–তুমি, এখন পুরো দস্তুর পাইলট।
‘আমি দুঃখিত, স্যার।
সত্যি কথাই বলল ডেভিড।
‘ধুত্তোরি। রেগে উঠল রাসটাস।
কী দরকার ছিল তোমার মরগ্যান হয়ে জন্ম নেবার। এত অর্থ–তারা তোমার পাখা দুটোকে আটকে ডেস্কের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবে।’
‘এটা অর্থ নয়।’ তাড়াতাড়ি বাধা দিল ডেভিড। অনুভব করল নিজের রাগ মিশে গেল এ অভিযোগে।
মাথা নাড়ল রাসটাইস। হ্যাঁ।’ বলে উঠলেন তিনি। এই ব্যাপারটাকেও ঘৃণা করি আমি।’ ডেভিডের ফিরিয়ে দেয়া দলিল তুলে নিয়ে রেখে দিলেন কর্নেল। তোমাকে প্রলোভিত করার জন্য যথেষ্ট নয়, তাই না?
কর্নেল, এটা ব্যাখা করা বেশ কঠিন। আমার শুধু মনে হয় যে আরো বেশি কিছু আছে করার। গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা সম্পর্কে খোঁজ করতে হবে আমাকে আর এটা এখানে নয়। আমাকে এটার খোঁজে যেতে হবে।’
গভীরভাবে মাথা নাড়লেন রাসটাস। “ঠিক আছে, তাহলে আমি চেষ্টা করেছি। এখন তুমি তোমার বহুদিন ধরে কষ্ট করা কমান্ডিং অফিসারকে মেসে নিয়ে যাও আর মরগ্যান মিলিয়ন খরচ করে তাকে হুইস্কি দিয়ে ভরে তোলো। উঠে দাঁড়িয়ে ধূসর মাথায় চড়ালেন ইউনিফর্ম ক্যাপ। আজ রাতে তুমি আর আমি একসাথে মাতাল হবো। দুজনেই আমরা কিছু হারাচ্ছি। সম্ভবত তোমার চেয়ে আমি বেশি।
.
সব দেখে মনে হচ্ছে যে সুন্দর আর শক্তিশালী মেশিনের প্রতি ভালোবাসা ডেভিড পেয়েছে তার বাবার কাছ থেকে। ক্লাইভ মরগ্যান স্ত্রীকে নিয়ে নিজের নতুন কেনা ফেরারি স্পোর্টসকার চালিয়ে যাচ্ছিল একটা রসদ বোঝাই ট্রেনের পাশাপাশি। লেভেল ক্রসিংয়ের আলো ছিল নেভানো। ট্রাফিক পুলিশ হিসেব কষে জানিয়েছে যে সংঘর্ষের সময় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় দেড়শ মাইল।
এগারো বছর বয়সী পুত্রের জন্য বিস্তারিত আর বিস্তৃত বন্দোবস্ত করে গেছে ক্লাইভ মরগ্যান। বাচ্চাটা তৎক্ষণাৎ চলে যায় চাচা পাল মরগ্যানের হেফাজতে। লালন-পালনের জন্য রাখা হয়েছে ট্রাস্ট ফান্ডের সিরিজ।
স্নাতক হবার পর ফান্ডের প্রথমটিতে ডেভিডের সরাসরি ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। যার আয় প্রায় একজন সুপ্রতিষ্ঠিত সার্জনের সমকক্ষ। এই দিনে পুরাতন সবুজ এম.জি.র জায়গা নেয় পাউডার নীল মাজেরাতি, সত্যিকারের মরগ্যান প্রথানুযায়ী।
তেইশতম জন্মদিনে কারো ভেড়ার র্যাঞ্চের মালিকানা, দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকায় ক্যাটেল র্যাঞ্চ আর জাবুলানি, সাবি স্যান্ড ব্লকে গেম, র্যাঞ্চ সমস্তই। চলে আসে তার হাতে। ট্রাস্টিরা এগুলো পরিচালনা করতে থাকে দক্ষ ভাবে।
পঁচিশ বছর জন্মদিনে দু’নম্বর ফান্ডের সুদও তার হাতে আসবে। এর পাশাপাশি দুটি বিশাল শহর-দালানের আলোচনাযোগ্য কাগজ ও পদবী– অফিস, সুপার মার্কেট কমপ্লেক্স, হাই-রাইজ হাউজিং প্রজেক্ট।
ত্রিশ বছর বয়সে পরবর্তী ফান্ডের পথ খুলে যাবে তার জন্য। প্রথম দুটি একত্রিত করলে যত বড় হবে ততটাই বড়। আর শুরু হবে মরগ্যান স্টকের প্রথম পাঁচটি তাকে দেয়ার প্রক্রিয়া।
এরপর থেকে প্রতি পাঁচ বছরে পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত অন্যান্য ফান্ড খোলার পাশাপাশি মরগ্যান স্টকের অন্যান্য অংশও সে পেতে থাকবে। তাই সামনে পড়ে আছে সম্পদের পাহাড়, জমকালো বিত্ত, যেন সুস্বাদু খাবারের প্রদর্শনী, ফলে ক্ষুধাই মরে যায়।
দ্রুত দক্ষিণ দিকে ছুটে চলেছে ডেভিড। টারম্যাকে হিসহিস শব্দে গর্জে চলেছে মিশেলিন চাকা। ডেভিডের মনে বইছে চিন্তার ঝড়; এত সম্পত্তি; বিশাল স্বর্ণের খাঁচা, মরগ্যান গ্রুপ কোন প্রাগৈতিহাসিক দানবের মতো বিশাল মুখ হাঁ করে এগিয়ে আসছে তাকে গিলে খাবার জন্য। মনে হলো কোন জেলি ফিশের গহ্বরে যাবে সে। নিজের প্রাচুর্যের মাঝে বন্দী।
এহেন সম্ভবনায় মুষড়ে পড়ল ডেভিড। পেটের মাঝে কেমন শূন্য একটা অনুভব হলো।
আরো জোরে হোটতে লাগল মাজেরাতি। শক্তি আর গতির দ্বৈত মিশ্রণে শান্তি খুঁজতে চাইল। মন দিয়ে ছন্দের তালের মতো দ্রুত চালাতে লাগল। মাইলের মতই দ্রুত বেগে ঘণ্টাও পার হয়ে গেল। তাই দিনের আলো থাকতেই পৌঁছে গেল ক্লিফটন বীচ আর স্বচ্ছ সবুজ আটলান্টিকের দিকে মুখ করে থাকা মিটজির অ্যাপার্টমেন্টে।