‘আমার মনে হয় এ এতটুকু নিয়েই খুশি থাকতে হবে আমাদেরকে। ডেভিড উঠে আংকেলের চেয়ারের পাশে দাঁড়াল।
‘ধন্যবাদ। আমার জন্যে এটাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
‘পাঁচ বছর, ডেভিড। এরপর তোমাকে চাই আমি।’ এরপর হেসে খানিকটা কৌতুক করল পল মরগ্যান, ‘অন্তত তোমার চুল কাটবে তারা।
উষ্ণ মাংসের মতো রঙের পৃথিবী থেকে চার মাইল উপর দিয়ে তরুণ দেবতার মতো স্বর্গের দিকে উড়ে চলল ডেভিড মরগ্যান। হেলমেটের সূর্য প্রতিরোধক অংশ বন্ধ। তাই চোখের রহস্যময় দৃষ্টি ঢেকে আছে। মিরেজ প্লেনে উড়ে চলে যে শক্তির আবেগ আর বিচ্ছিন্ন হবার উদগ্র বসানা জেগে উঠেছে, তা থেকে পাঁচ বছর কিছুতেই টলাতে পারেনি তাকে।
এয়ারক্রাফটের উপর সরাসরি পড়ছে সূর্যের আলো। নিচে পৃথিবীর উপরে নেকড়ের মতো বাতাসের তাড়া খেয়ে মেষের মতো উড়ে চলেছে মেঘের দল।
আজকের ফ্লাইটে কেমন একটা মন খারাপ ভাব, বিষণ্ণতা মিশে আছে। আগামীকাল তার শেষ দিন। দুপুর বেলায় কমিশন শেষ হয়ে যাবে আর যদি পল মরগ্যান চায় তাহলে সে হয়ে যাবে মিস্টার ডেভিড-মরগ্যান গ্রুপের নতুন বালক।
চিন্তাকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে চাইল শেষ মুহূর্তের এই মূল্যবান মিনিটগুলো উপভোগ করতে। কিন্তু আবেশ কেটে গেল শীঘ্রিই।
জুলু স্ট্রাইকার ওয়ান, রেঞ্জ কন্ট্রেল থেকে বলছি। তোমার পজিশন রিপোর্ট করো।’
‘রেঞ্জ কন্ট্রোল, জুলু স্ট্রাইকার ওয়ান বলছি, রেঞ্জ পঞ্চাশ মাইল। স্ট্রাইকার ওয়ান, রেঞ্জ পরিষ্কার। তোমার টার্গেট চিহ্ন আট এবং বারো। উড়ে চলো সামনে।
হঠাৎ করে মিরেজের নাকের সামনে দিগন্ত বদলে গেল।
ডেভিড ডান হাতে দ্রুত উইপন সিলেক্টর প্যানেলের উপর এসে রকেট সার্কিট ল করে দিল।
সামনের দৃশ্য পুরোপুরি বৈচিত্র্যহীন। নিচু কাঁটা ঝোপে পূর্ণ মিরেজ নিচু করে আনায় পাখার মাথায় লাগছে। এ ধরনের উচ্চতায় গতি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। আর প্রথম টার্গেট চিহ্নটা এসে প্রায় সাথে সাথে আবার রুপালি নাকের আড়ালে চলে গেল।
পাঁচ, ছয়, সাত-সাদা ভূমিতে কালো অক্ষরগুলো হারিয়ে গেল একে একে।
বামপাশে রাভারের উপর স্পর্শ আর লেগে থাকা, প্রতিটি কাজ হয়ে গেল অবচেতনে। সামনে রকেটের রেঞ্জের গোলাকার কাঠামো। এটিই ‘ কোক, উড্ডয়নের কলাকৌশলের কয়েকটা অর্থহীন শব্দের একটি, এটাই তাই টার্গেট।
ভয়ঙ্কর মেশিনটাকে দ্রুত আর নিচুতে নিয়ে এলো ডেভিড, ওর দণ্ড মিটার এমন একটা স্পিড রেকর্ড করল যা প্রায় সব সৈনিক পর্যায়ের। সরাসরি ট্র্যাকে থেকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করল। কাছে আসতেই মিরেজের নাক গুতো দিল “পিচ আপ” অংশে। এরপর টার্গেটের উপর ট্রিগার টেনে দিল ডান হাতের অংশ।
কাঁপতে থাকা রূপালি মেশিনটা ঠিকঠিক নাক-নিচু করে রকেট চালানোর অলটিচ্যুড খুঁজে পেল একেবারে নির্দিষ্ট সময়ে। ডায়মন্ড আকৃতির রিফ্লেক্টর সাইটের একেবারে মাঝখানে দেখা গেল ‘কোক’ এর সাদা ধোঁয়া।
এ ধরনের বৈপ্লবিক কাণ্ড ঘটানোর জন্য নানা রকম দক্ষতা প্রয়োজন। স্প্রিং লোডে ট্রিগারে চাপ দিয়েছিল সে। এয়ারক্রাফটে বসে কোন কিছু বোঝা গেল না। জেটের গর্জনের নিচে রকেটের হিস্ শব্দটাও ঢেকে গেল। কিন্তু তার পাখার নিচ দিয়ে ধোয়ার লাইন টার্গেটে লাগাল। আর নিশ্চিন্তে ডেভিড থ্রটল টেনে দিল।
‘হোয়াইট আ ওয়ে টু গো।
উজ্জ্বল নীলে ভেসে গেল মিরেজের নাক। নিচের সিটে আরামে গা এলিয়ে বসল ডেভিড। হাসল। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি চাইছে তাকে সিটে ধরে রাখতে।
হ্যাল্লো, স্ট্রাইকার ওয়ান। রেঞ্জ কন্ট্রোল থেকে বলছি। একেবারে ঠিক ঠিক শুতে দিয়েছে নাক। এবার ডান পাশে। মানুষটাকে একটা কোক দাও। নাইস শ্যটিং। তোমাকে হারাতে খারাপ লাগছে ডেভি। রেঞ্জ ডিসিপ্লিন ছুঁয়ে গেল ডেভিডকে। ও অনেক মিস করবে–সবাইকে। নিজের জয়স্টিকের মাথায় লাগানো ট্রান্সমিট বাটনে চাপ দিল ডেভিড। কথা বলল হেলমেটের মাইক্রোফোনে স্ট্রাইকার ওয়ান থেকে বলছি, ধন্যবাদ আর বিদায়।’ ‘ওভার অ্যান্ড আউট।
গ্রাউন্ড ক্রুরাও ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। সবার সাথে হাত মেলালো সে। আজগুবি করদর্মন আর জঘন্য সব জোকস ঢেকে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে তাদের মাঝে গড়ে ওঠা সত্যিকারের স্নেহকে। এরপর তাদেরকে ছেড়ে গায়ে গ্রীজ আর তেলের গন্ধ নিয়ে এয়ারক্রাফটের সারির ধাতব অংশ দিয়ে চলে এলো ডেভিড।
থেকে একটির ঠাণ্ডা শরীরে চাপড় দিল। আর্দালি এসে দেখল উঁচু টেইল প্লেনের গায়ে আঁকা ফ্লাইং কোবরার দিকে তাকিয়ে আছে ডেভিড।
‘সি.ও.র কমপ্লিমেন্টস স্যার, এখনি ওনার কাছে রিপোর্ট করুন।
কর্নেল রাসটাস নড শুকিয়ে যাওয়া কাঠের মতো একজন মানুষ। বানরের মতো চেহারা। গায়ের ইউনিফর্মে মেডেল আর রিবনের অদ্ভুত ছড়াছড়ি। তিনি ব্যাটেল অব ব্রিটেনে হারিকেন, ইটালিতে মুসটাঙস, প্যালেস্টাইনে স্পিটফায়ার আর মেসারম্মিট ১০৯ আর কোরিয়াতে স্যাবারস চালিয়েছেন। বর্তমান। দায়িত্বের পক্ষে তার বয়স বেশি হলেও কেউই সাহস করে তাকে একথা বলতে পারে না। কেননা স্কোয়াড্রনের অনেক তরুণ সৈন্যের চেয়েও দক্ষ পাইলট আর যোদ্ধা তিনি।
‘তো অবশেষে তুমি আমাদের ছেড়ে যাচ্ছো ডেভিড। অভিবাদন জানালেন কর্নেল।
‘মেস পার্টি পর্যন্ত নয়, স্যার।
হ্যাঁ। মাথা নাড়লেন কর্নেল। এই পাঁচ বছর আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছো তুমি। আমার কাছে এক বালতি হুইস্কি পাওনা আছে তোমার। ডেস্কের পাশে শক্ত গদিওয়ালা চেয়ার দেখালেন ডেভিডকে। বসো ডেভিড।