‘এমন না যে আমরা তোমার কাছ থেকে এর চেয়ে কম আশা করি।’ হাসল পল মরগ্যান, উত্তরে ডেভিডও হাসল। স্বীকার করল যে আজকাল সহজ হয়ে গিয়েছে।
‘আর এখন ভাবতে হবে তোমার ভবিষ্যত নিয়ে। বলে উঠল পল মরগ্যান, শীঘ্রি পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছু। যদিও আমার মনে হয় আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা বিজ্ঞান আর আইন-ই হবে উপযুক্ত। এই স্পষ্ট লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে আমি আমার পুরোন কলেজে তোমার ভর্তির ব্যাপারে প্রভাব খাঁটিয়েছি।’
‘আংকেল পল, আমি উড়তে চাই। নরম স্বরে বলে উঠল ডেভিড। থেমে গেল পল মরগ্যান। অভিব্যক্তি খানিকটা পরিবর্তন হয়ে গেল।
‘তুমি তোমার পেশাগত জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছ মাই বয়। কোন আমোদ সম্পর্কে আলোচনা নয়।’
‘না, স্যার। আমি বলতে চেয়েছি যে আমি উড়তে চাই–জীবনের পথে।
‘তোমার জীবন এখানে-মরগ্যান গ্রুপ। এটি এমন কিছু নয় যে তোমার কাজের স্বাধীনতা আছে।’
‘আমি আপনার সাথে একমত নই, স্যার।
জানালা ছেড়ে ফায়ার প্লেসের কাছে গেল পল মরগ্যান। হাতে একটা সিগার তুলে নিয়ে ডেভিডের দিকে না তাকিয়েই কথা বলা শুরু করল নরম স্বরে।
তোমার বাবা বেশ রোমান্টিক ধাঁচের ছিল ডেভিড। এটা পেয়েছিল প্রথার বাইরে গিয়ে মরুভূমিতে ট্যাংক নিয়ে ঘুরে বেড়নোর সময়ে। মনে হচ্ছে। উত্তরাধিকার সূত্রে এই রোমান্টিসিজম পেয়েছো তুমি। এমন ভাবে বলল যেন কোন অসহ্যকর রোগ। ফিরে এলো যেখানে ডেভিড বসে আছে।
‘আমাকে বলল তোমার প্রস্তাব কী?
‘আমি এয়ারফোর্সে নাম লিখিয়েছি স্যার।
করে ফেলছো? সাইন করে ফেলেছা?”
‘হ্যাঁ, স্যার।’
কত দিন?
‘পাঁচ বছর। শর্ট সার্ভিস কমিশন।
‘পাঁচ বছর’ ফিসফিস করল পল মরগ্যান। ওয়েল ডেভিড, জানি না কী বলব। তুমি জানো তুমিই শেষ মরগ্যান। আমার কোন পুত্র নেই। তাই এই বশাল কর্মযজ্ঞে আমাদের কোন প্রতিনিধি না থাকাটা অতীব দুঃখের ব্যাপার হবে। আমি ভাবছি তোমার বাবা থাকলে কী ভাবতেন
‘এর কোন মানে হয় না, আংকেল পল।’
‘আমার তা মনে হয় না, ডেভিড। আমার মনে হয় তুমি প্রতারণা করছে। মরগ্যান শেয়ারে তোমার ট্রাস্ট ফান্ড একটা বিশাল বাধা। এছাড়া আছে অন্যান্য সম্পত্তি। তোমার দায়িত্ব আর কর্তব্য নিয়ে ভাবছো না তুমি’
যদি সে চিৎকার করতো তবেই, ভয়ঙ্কর ভাবে ভাবল ডেভিড, জানে যে বার্নি যেমনটা বলেছে তাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। যদি সে আমাকে এটা করতে বলতো তবেই আমি তাকে বলতাম এটা ঠেলে ফেলে দিতে। কিন্তু সে জানে যে দক্ষ লোকের পাল্লায় পড়েছে সে। এমন এক মানুষ যে সারা জীবন ধরে মানুষ আর অর্থ দিয়ে অনর্থ ঘটিয়েছে। যার হাতে সতেরো বছর বয়সী একটা বালক ময়দার তাল ছাড়া আর কিছুই নয়।
‘দেখো ডেভিড, এর মাঝেই তোমার জন্ম। অন্য যে কোন কিছু হবে কাপুরুষোচিত, আত্মমর্যাদা লঙ্ঘন’ শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে গেছে মরগ্যান গ্রুপ। কোন একটা মাংশাসী গাছের মতে, গিলে ফেলবে, হজম করে ফেলবে। –তোমার ভর্তির কাগজ হাওয়া করে দেয়া কোন ব্যাপারই না। মাত্র একটা ফোন কল’ই এক্ষেত্রে যথেষ্ট।
‘আংকেল পল, প্রায় চিৎকার করে উঠল ডেভিড, চেষ্টা করছে শব্দের স্রোত বন্ধ করে দিতে।
‘আমার বাবা। সেও এটা করেছিল। সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।”
‘হ্যাঁ, ডেভিড। কিন্তু সময় তখন ভিন্ন ছিল। আমাদের একজনকে যেতেই হতো। ও ছিল ছোেট–আর অবশ্যই ব্যক্তিগত কারণও ছিল। তোমার মা এক মুহূত থেমে গিয়ে আবারো বলে চলল,—আর যখন এটা শেষ হয়েছে তখন ফিরে এসে এখানে নিজের সঠিক দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা তাকে এখন মিস্ করি ডেভিড। তার শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা কারো নেই। আমি সবসময় আশা করি তুমি হয়তো তা পারবে।
কিন্তু আমি তা চাই না। মাথা নাড়াল ডেভিড। আমি আমার জীবন। এখানে অপচয় করতে চাই না। চারপাশের ম্যামথের সুবিশাল গ্লাস আর ইট, কাঠের কাঠামো দেখিয়ে বলল, আমি প্রতিটি দিন কাগজের স্তূপের উপর উবু। হয়ে কাটাতে চাই না’
‘এটা এমন নয়, ডেভিড। এটা বেশ চমকপ্রদ, চ্যালেঞ্জিং, পরিবর্তনশীল–’
‘আংকেল পল।’ আবারো গলার স্বর উঁচুতে উঠে গেল ডেভিডের।
‘এমন কোন লোককে তুমি কী বলবে যার পেট ভরে আছে ভালো খাবারে তার পরেও সমানে খেয়ে চলেছে?
শান্ত হও, ডেভিড। প্রথমবারের মতো বিরক্ত শোনাল পল মরগ্যানের কণ্ঠস্বর। অধৈর্য ভাবে একপাশে ঠেলে দিল প্রশ্নটা।
কী বলবে সে মানুষটাকে? আবারো জোর করল ডেভিড।
‘আমার মনে হয় তুমি তাকে পেটুক বলবে। উত্তর দিল পল মরগ্যান।
‘আর এমন কোন লোককে কী বলবে যার কোটি কোটি অর্থ থাকার পরেও জীবন কাটাচ্ছে আরো তৈরির আশায়?
পাথরের মতো জমে গলে পল মরগ্যান। দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইল নিজের রক্তের দিকে উত্তর দেবার আগে।
‘তুমি উদ্ধত হয়ে উঠছে। অবশেষে বলে উঠল পল মরগ্যান।
না, স্যার। আমি এটা বোঝাতে চাইনি। তুমি পেটুক নও–কিন্তু আমি হয়তো হয়ে যাবো।
ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের ডেস্কের কাছে গেল পল মরগ্যান। পিছনে অত্যাধিক উঁচু চামড়ার চেয়ারে বসে অবশেষে আগুন ধরালো সিগারে। আবার দীর্ঘ সময় ধরে চুপ করে রইল দুজনে। অবশেষে কথা বলল পল মরগ্যান।
তুমি ঠিক তোমার বাবার মতোই করবে। কিন্তু কীভাবে আমি তোমার পাঁচটা বছর বাঁচাবো অপচয়ের হাত থেকে।
‘অপচয় হবে না আংকেল পল। আমি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হয়ে ফিরব।’