বাইরে থেকে দেখলে একে পছন্দ করে ডেভিড। পরিষ্কার এবং কার্যকরী–ঠিক যেন একটা এয়ারক্রাফটের পাখা। কিন্তু স্বাধীনতার ব্যাপারটা প্রহেলিকা। এটা একটা দুর্গ আর জেলখানা।
নিজের রেসিং কার নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে তাকিয়ে দেখল টাওয়ারের মতো মরগ্যান বিল্ডিংয়ের কাঠামোকে। এরপর র্যাম্পে উঠে গেল, যেখান থেকে পথ চলে গেছে নিচে আন্ডার গ্রাউন্ড গ্যারেজে।
একটু পরেই প্রবেশ করল এক্সিকিউটিভ অ্যাপার্টমেন্টে টপ ফ্লোর। পাশ কাটিয়ে গেল ডেস্কের লম্বা সারিতে বসে থাকা বাছাই করা সুন্দরী ও দক্ষ টাইপ রাইটারদের। প্রত্যেককে অভিবাদন জানাল ডেভিড। সুন্দর মুখগুলোতে হাসি ফুটে উঠল, যেন একসাথে ফুটে আছে বাগানের প্রতিটি ফুল। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে মরগ্যান বিল্ডিংয়ের মাঝে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ডেভিড।
অভ্যন্তরীণ অংশের রক্ষক মার্থা গুডরিখ নিজের অফিসে টাইপরাইটার থেকে মুখ তুলে তাকাল। কঠিন আর বিজনেস লুক।
‘সুপ্রভাত মিস্টার ডেভিড। আংকেল অপেক্ষা করছেন আপনার জন্যে আর আমার মনে হয় আপনার একটা স্যুট পরে এলে ভালো হতো।
‘তোমাকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে মার্থা। ওজন কমেছে আর তোমার চুলের ধরনটাও বেশ ভালো দেখাচ্ছে। কাজ হয়েছে, যেমনটা সব সময় হয়। মার্থার অভিব্যক্তি নরম হয়ে গেল।
‘আমাকে তেল দেবার চেষ্টা না করাই ভালো। সতর্ক করে দিল মার্থা।
পল মরগ্যান জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল নিচে মানচিত্রের মতো দাঁড়িয়ে থাকা শহরের দিকে। কিন্তু ডেভিড ঢোকামাত্র ঘুরে তাকাল তাকে অভিবাদনের জন্যে।
‘হ্যালো, আংকেল পল। আমি দুঃখিত, চেঞ্জ করার সময় পাইনি। মনে হয়েছে সরাসরি আসাই ভালো।
“ঠিক আছে, ডেভিড। নাভী পর্যন্ত উন্মুক্ত ডেভিডের ফুলের নকশা করা শার্ট, চওড়া লেদার বেল্ট, সাদা টিলা পাজামা আর ভোলা স্যান্ডেলের উপর চোখ বুলিয়ে নিলো পল মরগ্যান। ভালোই দেখাচ্ছে ছেলেটাকে, মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলো পল। এরকম অদ্ভুত আধুনিক কাপড়েও ভয়ঙ্কর লাবণ্যময় লাগছে তাকে।
‘তোমাকে দেখে ভালো লাগছে। নিজের গাঢ় রঙের সনাতন কাটের স্যুটের গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ভ্রাতুস্পুত্রের দিকে তাকাল মরগ্যান।
‘এসো, বসো। এখানে, ফায়ার প্লেসের কাছের চেয়ারে। সব সময়কার মতো খেয়াল করে দেখল তার নিজের যেটার কমতি আছে তাই আছে ছেলেটার উচ্চতা। খাটো পলের কাঁধ বেশ ভারী, সুগঠিত, মোটা পুরুষালি ঘাড় আর চৌকোনা মাথা। মেয়ের মতই তারও চুল নিকৃষ্ট, তারের মতো আর তার দৈহিক কাঠামোও কুমড়া ও পশুর মতো।
প্রায় সব মরগ্যানই এরকম। কিন্তু ডেভিডের অভিজাত অবয়ব এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়েছে। নিঃসন্দেহে সে তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে এহেন সৌন্দর্য। গাঢ় চুল আর উজ্জ্বল চোখ জোড়া আর এর পাশাপাশি দীপ্তিময় চলনবলন।
‘ওয়েল ডেভিড, প্রথমেই আমি তোমাকে অভিবাদন জানাতে চাই, তোমার ফাইনাল রেজাল্টের জন্যে। আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। গভীরভাবে বলে উঠল পল মরগ্যান, এছাড়াও আরো যোগ করতে পারতো-চিন্তা দূর হয়েছে এতে। ডেভিড মরগ্যানের শিক্ষার্থী জীবন ভরে আছে প্রবল সব ঝড়ে। অসম্ভব ভালো সাফল্যের পাশাপাশি এমন সব কদর্য কাণ্ড ঘটিয়েছে সে যে মরগ্যান পদবী আর সম্পদই একমাত্র পরিত্রাণ ছিল এক্ষেত্রে। গেমস মাস্টারের তরুণী স্ত্রীর। সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল সে। কতটুকু সত্যি জানে না পল, কিন্তু ভেবেছে এ ব্যাপারটার মসৃণ সমাপ্তির জন্যে বিদ্যালয়ের চ্যাপেলে অনুদান আর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেমস্ মাস্টারের জন্যে স্কলারশিপ হতে পারে চমৎকার পদক্ষেপ। এর পরপরই ডেভিড গণিতে জিতে নেয় ওয়েসেলস প্রাইজ। তাই ভুলে যাওয়া হয় সবকিছু–যতক্ষণ পর্যন্ত না ডেভিডের ইচ্ছে হয় হাউজমাস্টারের নতুন স্পোর্টস কার পরীক্ষা করে দেখার। ভদ্রলোকের অজ্ঞাতে ঘণ্টায় নব্বই মাইল বেগে চালানো হয় এটি। বলাবাহুল্য, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি গাড়িটা। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে কব্জিতে কাটা দাগ সমেত বের হয়ে আসে ডেভিড। পল মরগ্যানের সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগেই কেবলমাত্র হাউজমাস্টারের রাগ প্রশমিত হয়। এর সাথে আরো যুক্ত হয় নতুন দামী মডেল কার আর মরগ্যান গ্রুপ ইস্ট হাউজের স্নানের অংশকে নতুন করে তৈরি করতে আর্থিক অনুদান প্রদান করে।
পল ভালো করেই জানে যে ছেলেটা বন্য প্রকৃতির আর এটাও জানে যে একমাত্র সেই তাকে বশ মানাতে পারবে। আর তাহলেই হয়ে উঠবে ক্ষুরধার অস্ত্র। পল মরগ্যান তার উত্তরাধিকারীর মাঝে যেসব গুণ দেখতে চায় তার সবগুলোই বিদ্যমান ডেভিডের মাঝে। জ্যোতি আর আত্মবিশ্বাস, উজ্জ্বল, দ্রুত মস্তিষ্ক, অভিমানপ্রিয়তা–কিন্তু সবকিছুর উপরে হলো তার দুর্ধর্ষ মনোভাব, প্রতিযোগিতার স্পৃহা, যেটা পলের মতে খুনীর মনোভাব।
‘ধন্যবাদ, আংকেল পল’, চিন্তিত মনে আংকেল পলের অভিবাদন গ্রহণ করল ডেভিড। নিঃশব্দে একে অন্যকে মেপে দেখছে। দুজন দুজনের সাথে কখনোই সহজ হতে পারে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই একে অপরের ঠিক বিপরীত আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি এক রকম। সবসময় তাই মনে হয় যে দু’জনের পছন্দ পরস্পরের সাথে যুদ্ধে নেমেছে।
পল মরগ্যান এগিয়ে গেল জানালার কাছে। তাই পেছন থেকে আলো ছড়াতে লাগল সূর্য। এটা তার একটা বেশ পুরোনো কৌশল, অপরপক্ষ পড়ে যায় অস্বস্তিতে।