কথা বলা শেষ করল ডেভিড। ফিরে তাকাল মিটজির দিকে।
‘সে আসছে না।
‘আমি জানি।
‘কিন্তু বার্নিকে পাঠাচ্ছে আমাকে তুলে নিতে।
এর মানে মাথা নেড়ে পিতাকে অবিকল অনুকরণ করল মিটজি।
‘তোমার ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদেরকে ভাবতে শুরু করতে হবে এখন, মাই বয়। নিয়তি তোমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তার জন্যে প্রশিক্ষণ দিতে হবে তোমাকে।
বিড়বিড় করতে করতে ড্রয়ার হাতড়াতে লাগল ডেভিড রানিং শর্টসের খোঁজে।
‘আমার মনে হয় এখন তাকে বলা উচিৎ আমার।
হ্যাঁ। মিজি ও একমত হলো।
‘তোমার অবশ্যই তা করা উচিত। শর্টস পরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল ডেভিড।
‘আমার জন্যে প্রার্থনা করো ডল।
‘প্রার্থনার চেয়েও বেশি কিছু দরকার তোমার হে সৈনিক। আয়েশ করে বলল মিটজি।
সমুদ্রের ঢেউ এসে বেলাভূমিকে মসৃণ করে রেখে গেছে। এত সকালে আর কারো পা পড়েনি এখানে। স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে দৌড়ানো শুরু করল ডেভিড। পেছনে রেখে গেল ভেজা পায়ের ছাপ।
সমুদ্রের উপর গোলাপি আভা ছড়িয়ে উদয় হলো সূর্য। অটেনিকা পর্বতমালা স্পর্শ করতেই উড়তে লাগল ধোয়া কিন্তু কিছুই দেখল না ডেভিড। অভিভাবকের সাথে সম্ভাব্য সাক্ষাৎকারের ভাবনায় চিন্তিত সে।
জীবন এখন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছে। হাই স্কুল শেষ হয়েছে। সামনে তাই অসংখ্য খোলা পথ। সে জানে যে সে যে পথ বেছে নিতে চায় তার বিরোধিতা করবে সবাই। তাই এই শেষ কয়েক ঘণ্টা নিজের সংকল্প দৃঢ় করে নিতে চাইল মনে মনে।
একটা মৃত মাছের উপর ঝাক বেঁধে বসে আছে সামুদ্রিক পাখির দল। ডেভিড কাছে আসতেই উড়ে গেল মেঘের কাছে। সূর্যের কাছাকাছি গিয়েই ডেভিড জায়গাটা পার হতেই আবারো ফিরে এলো আগের জায়গায়।
লিয়ার জেটের শব্দ শোনার আগে এটাকে উড়ে আসতে দেখল সে। সূর্যোদয়ের বিপরীতে নিচ দিয়ে উড়ে এসে প্রায় নিঃশব্দে ডেভিডের কাছে এগিয়ে আসতে লাগল।
থেমে গেল ডেভিড। দীর্ঘক্ষণ দৌড়ানোর পরেও হালকাভাবে শ্বাস ফেলে দু’হাত মাথার উপর তুলে অভিবাদন করল। দেখতে পেল বার্নিও তাকে দেখে মাথা ঘুরিয়ে হেসে হাত তুলে প্রতিউত্তর জানাল।
লিয়ার প্রায় সমুদ্রে গিয়ে পড়ল। একটা পাখা প্রায় ঢেউয়ের মাথা ছুঁয়ে দিল। এরপর ফিরে এলো ডেভিডের কাছে। ডেভিড শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। লিয়ারের স্টিলের নাক নিচু হতে হতে মনে হলো বর্শার মতো এগিয়ে আসতে লাগল তার দিকে।
ভয়ঙ্কর শিকারি পাখির মতন এসে থামলো তার পাশে। একেবারে শেষ মুহূর্তে ডেভিডের ধৈর্য ভেঙ্গে ভেজা বালিতে পড়ে গেল সে। লিয়ার উঠে নাক ঘুরিয়ে শুকনো এয়ারফিল্ডের দিকে চলে গেল।
‘সন অব আ বিচ’, বিড়বিড় করতে করতে উঠে দাঁড়াল ডেভিড। নগ্ন বুক থেকে ঝেড়ে ফেলতে লাগল ভেজা বালি। মনে ভেসে উঠল বার্নির হাসি মুখ।
‘ভাল শিক্ষা দিয়েছি ওকে,’ ভাবল বার্নি, লিয়ারের কো-পাইলটের সিট থেকে দেখল ডেভিডকে।
মরগ্যানদের অন্ন ভোজনের পর থেকে ওজন বাড়তে শুরু করেছে বার্নির। বেল্টের উপর দিয়ে লজ্জিত ভাবে উঁকি দিচ্ছে মেদ। মুখটাও চওড়া হয়ে ঝুলে পড়ছে নিচের দিকে। মাথা ঢেকে রাখা টুপির আশপাশ দিয়ে রুপালি ঝলক দেখা যাচ্ছে।
ডেভিডকে উড়তে দেখে ছেলেটার জন্যে আবারো স্নেহ অনুভব করল বার্নি। তিন বছর ধরে মরগ্যান গ্রুপের চিফ পাইলটের দায়িত্ব পালন করছে সে। আর ভালো ভাবেই জানে যে কার তদারকিতে এটা হয়েছে। এখন তার সম্মান এবং নিরাপত্তা উভয়ই আছে। আরামদায়ক মেশিনে বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের নিয়ে উড়ে বেড়ায় সে। জানে নিজের জন্যেও চিন্তা নেই। মরগ্যান গ্রুপ নিজেদের খেয়াল রাখে।
এই জ্ঞান পাকস্থলিতে জমে যাবার সাথে সাথে খেয়াল করল তার শিষ্য জেট চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে। এভাবে উড়ে যেতে পুরো মনোযোগ দরকার পড়ে। আর ছেলেটার চোখের তারায় এর কোন অভাব দেখল না বার্নি।
তাদের নিচে সমান্তরালে পড়ে আছে আফ্রিকার দীর্ঘ সোনালি সমুদ্রতট। মাঝে মাঝে পাথরের বাড়ি, ছোট রিসর্ট, মাছ ধরার গ্রামগুলো উপকূলরেখা ধরে এগিয়ে চলেছে লিয়ার জেট।
সামনে পড়ে আছে আরো একটা সমুদ্রভূমি। কিন্তু নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়ায় দেখতে পেল এ তটে মানুষের অভাব নেই।
একজোড়া নারী দেহ সার্ক করতে এগিয়ে গেছে। হাই ওয়াটার মার্কের কাছে পড়ে থাকা তোয়ালে আর বিকিনির দিকে দৌড় লাগাল দ্রুত। কফি ব্রাউন ট্যান্ড চামড়ার সাথে অসামঞ্জস্য ঠেকল সাদা পশ্চাৎদেশের, আনন্দিত ভঙ্গিতে হাসল তারা।
‘তাদেরকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখাটা তোমার জন্যে ভালোই হলো ডেভিড।’ ছোট শরীরগুলো পেছনে ফেলে আসতেই হাসল বার্নি। উড়ে চলল দক্ষিণে।
কেপ আগুলহাস থেকে স্থলভূমিতে প্রবেশ করল তারা। পর্বতমালার উপর দিয়ে খাড়া উঠে গিয়ে থ্রটল হালকা করল ডেভিড। শহরের উপর দিয়ে এগিয়ে গেল ধীরগতিতে।
পাশাপাশি হেঁটে হ্যাঙ্গারে যেতে যেতে বার্নি খেয়াল করল ডেভিড এখন তার চেয়ে ছয় ইঞ্চি উঁচু।
‘ও যাতে তোমাকে ভয় দেখাতে না পারে, মাই বয়। সতর্ক করে দিল বানি। তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। দেখো যেন এর নড়চড় না হয়।’
ডেভিড নিজের ব্রিটিশ রেসিং সবুজ এম.জি নিয়ে দে ওয়াল ড্রাইভে উঠে এলো। পর্বতের উপর থেকে নিচে শক্তি আর সম্পদের অন্যান্য নিদর্শনের মাঝে চারকোনা মরগ্যান বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।