‘আর এখন? আরেকটু জানতে চাইল ডেবরা।
এখন আমার খারাপ লাগছে।’ কাঁধ ঝাঁকালো ডেভিড। খারাপ লাগছে। এটা ভেবে যে কাজটা করতে হয়েছে আমাকে।
‘আমার বাবা, সব সময়ে যাকে সৈন্য হিসেবেই দেখেছি, বলে যে যারা সত্যিকারের যুদ্ধ করে তারাই শুধু জানে যে যুদ্ধকে ঘৃণা করা বলতে কী বোঝায়।
মাথা নাড়াল ডেভিড, হ্যাঁ। এখন আমিও বুঝতে পারছি এটা। আমি উড়তে পছন্দ করি। কিন্তু ঘৃণা করি ধ্বংস করতে।’
আবারো চুপচাপ হয়ে গেল দু’জনে। দু’জনেই মনে মনে ভাবছে যুদ্ধ নিয়ে নিজস্ব ভাবনা। দু’জনেই শব্দ খুঁজে বেড়াচ্ছে একে প্রকাশ করার।
‘আর তারপরেও এটা জরুরি। নীরবতা ভাঙ্গলো ডেবরা। আমাদেরকে যুদ্ধ করতেই হবে আর কোন পথ নেই।’
‘আর কোন উপায় নেই–পেছনে সমুদ্র আর গলার মাঝে আরবীয়।
‘তুমি একজন ইস্রায়েলির মতোই কথা বলছো। নরম স্বরে জানাল ডেবরা।
‘আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ–অথবা এমনো বলা যায় যে তোমার বাবাও এতে ভূমিকা রেখেছে। তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে আমার হিব্রু ঝালাই করে নেয়ার আর অভিবাসনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার।
আর তারপর? ডেভিডের দিকে ঝুঁকে এলো ডেবরা।
‘এয়ারফোর্সে একটা কমিশন। শুধুমাত্র এই কারণেই রয়ে যাচ্ছি আমি। আমি ঠিক সেই র্যাংক চাই যা হয়তো স্বদেশে ফিরে গেলে পেতাম। মনে হয়েছিল সে সেকেন্ডহ্যাণ্ড কাপড় বিক্রেতার মতো আচরণ করছিল। কিন্তু আমিও তাকে বশ করে ফেলেছি। তাই অবশেষে মেনে নিয়েছে। অ্যাক্টিং মেজর। এক বছর পরে র্যাংকের নিশ্চয়তা।
‘এটা তো বেশ ভালো খবর, ডেভি। সার্ভিসে একেবারে তরুণ মেজরদের একজন হবে তুমি।
হ্যাঁ, একমত হলো ডেভিড।
‘আর পরে ট্যাক্স দেয়ার পরে আমার বেতন হবে স্বদেশে একটা বাস ড্রাইভারের চেয়ে সামান্য কম।’
কিছু মনে করোনা। প্রথমবারের মতো হাসল ডেবরা। হিব্রু শিখতে আমি সাহায্য করব তোমাকে।
‘এই ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলতে যাচ্ছিলাম আমি। ডেবরার হাসির উত্তর দিল ডেভিড।
‘চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। আজ রাতে কেমন যেন লাগছে হাঁটতে চাই আমি।’
খ্রিস্টান কোয়ার্টারের ভেতরে হেঁটে বেড়ালো তারা। রাস্তার দু’পাশের দোকানগুলোও খোলা। পূর্ণ হয়ে আছে কাপড়, চামড়া আর গয়নার সম্ভারে। একই সাথে সরু গলিটাতে পাওয়া গেল বিভিন্ন মসলা, খাবার, নর্দমা আর মানবতার অপচয়ের গন্ধ, প্রায় মাথার উপরেই খিলানগুলো।
ডেবরা, ভিয়া ডলোরোজাতে একটা অ্যান্টিক শপে নিয়ে গেল ডেভিডকে। খুশিতে গদগদ দোকানি এগিয়ে এলো সামনে।
‘আহ মিস মোরদেসাই–আর তোমার বাবা কেমন আছে?’ এরপরই দ্রুত বেগে পিছনের দরজায় অদৃশ্য হয়ে গেল লোকটা তাদের জন্য কফি আনার উদ্দেশ্যে।
‘অর্ধেকটাই সৎ, এমন লোকদের একজন এই দোকানি আর ব্রিগকে যমের মতো ভয় পায়।
ডেভিডের জন্য সরু চেইনের মাঝে অ্যান্টিক সোনার তারা পছন্দ করল ডেবরা। এর আগে যদিও এভাবে কোন গয়না পরেনি ডেভিড, তারপরেও মাথা নামিয়ে দিল ডেবরার সামনে। চেইন পরিয়ে দিল ডেবরা। বুকের ঘন কালো কেশের মাঝে ফুটে রইল সোনালি তারা।
‘এইটাই একমাত্র পেলে তুমি-সাধারণত মেডেল দিই না আমরা।’ হাসতে হাসতে বলে উঠল ডেবরা।
কিন্তু যাইহোক, ইস্রায়েলে স্বাগতম।
‘এটা অনেক সুন্দর। আবেগ আপ্লুত হয়েও অস্বস্তি বোধ করল ডেভিড। ‘ধন্যবাদ।’ তাড়াতাড়ি শার্টের বোতাম লাগিয়ে নিল। এরপর ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল ডেবরার দিকে। বুঝতে পেরে সরে গেল ডেবরা। সাবধান করে দিল ডেভিডকে।
‘এখানে নয়। দোকানি মুসলিম। ভালোভাবে নেবে না ব্যাপারটা।
‘ঠিক আছে।’ বলে উঠল ডেভিড। চলো এমন কোথাও যাই যেখানে আমাদের জন্য কারো মর্যাদাবোধ আহত হবে না।
বিশাল দেয়ালের লায়ন গেইট দিয়ে বের হয়ে এলো তারা। মুসলিম কবরস্থানে জলপাই গাছগুলোর ভিড়ে খুঁজে পেল একটা পাথরের বেঞ্চ। আকাশে আধখানা চাঁদ, চারপাশে রহস্যময় রূপালি আলো, উষ্ণ রাত অপেক্ষা করছে কিছু একটার জন্য ঠিক যেন নব পরিণীতা বধূ।
ইন্টারকন্টিনেন্টালে থাকতে পারো না। ডেবরার কথা শুনে দু’জনেই মাথা তুলে উপত্যকার উপরে থাকা হোটেলটার খিলান আর আলো-ছায়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
‘কেন নয়?
‘ওয়েল, প্রথমত এটা বেশ ব্যয়বহুল। তুমি যে বেতন পাবে কখনোই টিকতে পারবে না।’
‘তুমি ভাবছো আমি বেতনের টাকায় চলতে পারব না? ডেভিডের অভিযোগ পাশ কাটিয়ে ডেবরা বলে উঠল।
‘আর সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো তুমি কোন মতেই আর ট্যুরিস্ট নও। তাই তুমি সেভাবে থাকতে পারো না।
তাহলে তোমার পরামর্শ কী?
‘আমরা তোমাকে একটা অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে দিতে পারি।’
‘তাহলে ঘরের কাজ, রান্না, কাপড় ধোয়া এগুলো কে করবে?’ প্রায় চিৎকার করে অভিযোগ জানাল ডেভিড। এইসব কাজে আমার তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই।
‘আমি করব।’ জানিয়ে দিন, ডেবরা। এক মুহূর্তের জন্য জমে গেল। ডেভিড। এরপর আস্তে করে ঘুরে তাকাল ডেবরার দিকে।
কী বলছো তুমি?
‘আমি বলেছি আমি করব। স্থিরপ্রতিজ্ঞা সহযোগে উত্তর দিল ডেবরা। এরপর হঠাৎ করে শান্ত হয়ে গেল কণ্ঠস্বর। যদি তুমি চাও আমি করি।’ বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো ডেভিড।
‘দেখো ডেবস, তুমি কী লিভিং টুগেদারের কথা বলছো? মানে আমি বলতে চাইছি ফুল-টাইমের জন্য ঘরবাড়ি খেলা খেলা?
“ঠিক এই জিনিসটাই বলতে চাইছি আমি।’