‘আক্রমণের গতিতে যাচ্ছি আমি।’ ব্রিগের কথা শুনতে পেয়ে আফটারবার্নারস জ্বালিয়ে নিল ডেভিড। সিটের পেছন দিকে যেন তাণ্ডব নৃত্য শুরু হয়ে গেল। সনিক ব্যারিয়ারের মাঝ দিয়ে শু্যটিং শুরু করল মিরেজ।
ধোঁয়ার রেখার পাশে বাদামী মাটির গায়ে চকচক করে উঠল কিছু একটা। চোখ সরু করে তাকাল ডেভিড। দৃষ্টি নিবদ্ধ করল ছোট্ট আকৃতিটার উপর। পাখির মতো দ্রুত চলতে থাকা আকৃতিটা মরুভূমির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে মিলে গেছে। একটা ছায়া ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।
‘ঘুরে যাচ্ছে দুবৃর্তটা। দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠল ডেভিড।
আমি পেয়েছি তাকে। জানিয়ে দিল বিগ। কমান্ড নেটের সুইচ অন করল।
‘হ্যালো, মরুর ফুল। আমি ওর পিছু নিয়েছি। আঘাত করার অনুমতি দাও প্লিজ।’ এই সিদ্ধান্ত একমাত্র কমান্ড লেভেল থেকেই আসতে হবে। সাদামাটা উত্তরটা শোনা গেল পরিষ্কার ভাবে।
‘ব্রিগ, মাটি বলছি। আঘাত করো!’
কথা বলতে বলতেই দ্রুত নিচে নেমে এলো তারা। ফলে ছোট্ট নাটিকাটা মনে হলো চোখের পলকে ঘটে গেল।
সীমান্তের ধূলি মাখা রাস্তায় থেমে গেছে বর্ডার পুলিশের তিনটি টহলদার গাড়ি। রাস্তার সাথে প্রায় একই রঙের আঁকা গাড়িগুলোতে। বিশাল মরুভূমিতে গাড়িগুলো দেখাচ্ছে বাচ্চাদের খেলনার মতো।
পথের অর্ধেকটাই পুড়ে গেছে। তেলতেলে কালো ধোঁয়া উঠে আসছে বাতাসে। রাস্তায় পড়ে আছে একটা মানব শরীর। কোন কারণ ছাড়াই মৃত্যু এসে নিয়ে গেছে তাকে। এই দৃশ্য দেখে তিক্ততার ভাব এলো ডেভিডের মনে। যেমনটা শেষবার অনুভব করেছিল মাদ্রিদের ষাড়ের লড়াইয়ের জায়গায়।
রাস্তার পাশে কাত হয়ে পড়ে আছে আরেকটা গাড়ি। আরোহীদেরকে পাথর আর ধুলার মাঝে কাতরাতে দেখতে পেল ডেভিড। তাদের কেউ কেউ আবার ছোট অস্ত্র দিয়ে আততায়ীর উপরে পরবর্তী আঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই ধাচের প্লেন আগে কখনো দেখেনি ডেভিড। কিন্তু আগে অনেকবার ছবিতে দেখায় সাথে সাথে চিনতে পারল। সিরিয়ান এয়াফোর্সের রাশান মিগ ১৭, লম্বা লেজ ভুল হবার কোন কারণ নেই। মরুভূমির বাদামী রঙের সাথে মিলিয়ে ছদ্মবেশের মাঝে উজ্জ্বল হয়ে আছে লাল, সাদা আর কালো রং। ফিউজিলাজে সবুজ রং আর পাখা মোটা ও বেটে।
দ্রুত নিচের দিকে নামতে লাগল মিগ। এগিয়ে যাচ্ছে পার্ক করে রাখা গাড়িগুলোর দিকে। পাথরের কাছে পড়ে থাকা অসহায় মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে পাইলট। তাই উপর থেকে নেমে আসা বিপদ সম্পর্কে একটুও আঁচ করতে পারল না সে।
সিরিয়ান প্লেনের লেজের উপর নেমে এলো ব্রিগ। ক্লাসিক স্টাইলে আঘাত করল পেছন থেকে আর উপর থেকে। মাঝামাঝি অবস্থান নিল ডেভিড। ব্রিগকে কাভার দেয়ার পাশাপাশি প্রথম আঘাত ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় আঘাত করার দায়িত্ব তার।
আবারো আক্রমণ করল সিরিয়ান পাইলট। নিচে থাকা মানুষ আর ট্রাকগুলোর উপর গর্জে উঠল কামান। ড্রাগনের বিষাক্ত নিঃশ্বাসের মতো ধোঁয়া আর আগুনের শিখা নিয়ে বিস্ফোরিত হলো আরেকটা ট্রাক।
‘বেজন্মা, কুত্তা, ব্রিগের পেছনে থেকে ফিসফিস করে উঠল ডেভিড। তাকিয়ে দেখল নিজের লোকদের উপর নেমে এলো নরক। এই প্রথমবারের মতো তাদেরকে আপন মনে হলো তার। ঠাণ্ডা রাগের স্রোত নেমে গেল শরীর বেয়ে, মনে হলো সে একজন মেষপালক আর তার মেষের পালের উপর আঘাত এসেছে।
কোথা থেকে একটা কবিতার লাইন চলে এলো মাথার মাঝে “আসিয়ীররা এমন ভাবে নেমে এলো যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে নেকড়ের পাল।” স্বেচ্ছায় নিজের কামানকে লক করল ডেভিড। জয়স্টিকের ট্রিগার টেনে দিল সামনে। নরম সবুজ আলো জ্বলে উঠল কামানের পাশে, হয়ে উঠল জীবন্ত। চোখ পিটপিট করল ডেভিড।
খুব কাছে থেকে আক্রমণের প্রস্তুতি নিল ব্রিগ। কিন্তু ঠিক যে মুহূর্তে মনে হল সে আঘাত করবে ডেভিড পেল সিরিয়ান প্লেনটার পাখা উল্টে গেল। নিজের কাজের ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চিত ডেভিড তৎক্ষণাৎ যা গুরুতুপূর্ণ সেটাই করবে বলে ঠিক করল। নিজের গতি কমিয়ে নিল রাতারাতি। ফলে এক দিকের পাখা কাত হয়ে মাটির দিকে ঝুঁকে গেল একশ ফিট নিচে।
ব্রিগের গোলা লক্ষ্যচ্যুত হলো। ঠিক সে সময় নিচে নেমে গেল সিরিয়ান প্লেন। মনে হলো কোন এক মুষ্টিযোদ্ধা প্রতিপক্ষের ভয়ঙ্কর পাঞ্চ এড়িয়ে নেমে গেছে। ধুলা রঙের এয়ারক্রাফটের অনেক উপরে বিস্ফোরণ দেখতে পেল ডেভিড। এরপরেও মিস্ করল ব্রিগের প্রতিটি শেল। ভেতরে ভেতরে ক্ষেপে উঠল ব্রিগ।
ঠিক তখনই মিগ প্লেনের কাঠামো দেখে পুরোপুরি অবচেতনে ঠিক কাজটাই করল ডেভিড। নিজের পাওয়ার বন্ধ করে দিয়ে মিরেজের গতি বন্ধ করে দিল।
মিগ চেষ্টা করল দ্রুত ফিরে যেতে যেখান থেকে এসেছে সেখানে। হঠাৎ করেই ঘূর্ণায়মান দুটি এয়ারক্রাফটের সামনে পথ রোধ করে দাঁড়াল খাড়া পাহাড়ের চূড়া।
পাহাড়ের উপরে ওঠার কোন চেষ্টাই করল না মিগ। এর বদলে পাহাড়ের মাঝে সরু একটা গলি ঠিক করে ঢুকে গেল। পালিয়ে যাবার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে মিগ।
কিন্তু এই ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত নয় মিরেজ। ডেভিড অনুভব করলো তার উচিত আফটারবার্নারস জ্বালিয়ে পাহাড় শ্রেণীর উপর উঠে যাওয়া–কিন্তু এর মানে হবে মিগটাকে পালিয়ে যেতেই দেয়া আর এটা চিন্তা করেই রেগে গেলে সে।