ব্রিগ তাকালো ডেভিডের দিকে। জমকালো পেইন্টিং করা হেলমেট পরে আছে মাথায়। হাই-সাইন দেখাল ডেভিডকে। একই ভাবে উত্তর দিল ডেভিড। বন্ধ করে দিল ক্যানোপি। সামনে দ্রুত উপর দিকে ভাঁজ হয়ে উঠে গেল স্টিলের ব্লাস্ট ডোর। উপরে আলো জ্বলে উঠল লাল থেকে সবুজ।
টেক-অফের জায়গায় ট্যাক্সিং করার কোন জায়গা নেই, অপ্রয়োজনীয় এতটুকুও জায়গা নেই। সরাসরি একের পর এক বাঙ্কার থেকে সূর্যের আলোয় বেরিয়ে এলো তারা। সামনে বাদামী দীর্ঘ রানওয়ে। ডেভিড থ্রটলে চাপ দিল, আফটার বার্নারস জ্বালিয়ে দিল। নিজের সিটের কুশন ভেদ করে অনুভব করল শক্তিশালী জেটের স্পন্দন। সবুজ শস্যের ক্ষেতের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলল তারা। উড়ে গেল আকাশে। আরো একবার বিমোহিত হয়ে পড়ল ডেভিড।
চল্লিশ হাজার ফিটের সামান্যে নিচে স্থির হলো সকলে। কোন ফ্লাইট প্যাটার্নও নেই তাদের। ব্রিগের লেজের কাছে নিজের মেশিনকে স্থির করল ডেভিড। থ্রটল টেনে সহজ হলো, ফ্লাইটের পরিচিত কাজ করতে পেয়ে বেজায় খুশি হাত দুটো, হেলমেট পরিহিত মাথাটা ক্লান্তিহীনভাবে ঘুরছে এদিক সেদিক রুটিন মোতাবেক সার্চের জন্য। আকাশের প্রতিটি ইঞ্চিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে চোখ।
অসম্ভব শুদ্ধ বাতাসে চারপাশ এতটাই স্বচ্ছ যে দূরের পবর্তমালা ও দেখা যাচ্ছে একেবারে পরিষ্কারভাবে, আরো দূরের নীলের ছায়া। উত্তরে সূর্যের আলোয় গলিত রূপার মতো ঝকঝক করছে ভূমধ্যসাগরের পানি। অন্যদিকে গালিলি সাগর নরম ঠাণ্ডা সবুজ আর আরো দূরে দক্ষিণে দেখা যাচ্ছে ঘন ডেড সী, নিষিদ্ধ মরুভূমি।
কামেলের উপর দিয়ে উত্তরে উড়ে গেল তারা। নিচে আরো পড়ল হাইফার সাদা বিল্ডিংগুলো, কমলা সোনালি বিচ্ যার গায়ে আছড়ে পড়ছে ক্রিম রঙা লেসের মতো মসৃণ, ছোট ছোট ঢেউ। এরপর একসাথে ঘুরে গিয়ে আস্তে আস্তে নেমে এলো প্যাট্রলিংয়ের জন্য বিশ হাজার ফিট নিচুতে। মাউন্ট হারমানের চূড়া পার হলো সকলে। তুষারের শেষ কণা চিকচিক করছে এখনো।
নরম স্বপ্নময় সবুজ রঙের প্রকৃতি মনে হলো কেউ এঁকে রেখেছে রঙিন পেন্সিল দিয়ে। আনন্দিত হয়ে উঠল ডেভিড। কেননা আফ্রিকার একঘেয়ে বাদামী রং দেখতেই অভ্যস্ত সে। পাহাড়ের মাথায় ঝুলে আছে গ্রামগুলো। ঘন কৃষি জমি আর ঢালের উপর সাদা দেয়ালগুলো উজ্জ্বলভাবে চোখে পড়ছে।
আবারো দক্ষিণ দিকে ঘুরে গেল তারা। জর্দান উপত্যকা বেয়ে নামতে শুরু করল। গালিলি সাগরের স্বচ্ছ সবুজ জলের চারপাশে দেখা গেল খেজুর গাছের সারি আর পরিষ্কারভাবে চাষ করা কিবুতজিমের ক্ষেত। পাহাড়ের চারপাশে ওয়াদিকে মনে হলো কোন ভয়ঙ্কর শিকারি পশুর থাবা। | বাম পাশে উঠে গেছে ইডম পর্বত। এই রুক্ষ্ম প্রকৃতির নিচে জেরিকো শহরকে মনে হচ্ছে বনের মাঝে সবুজ মরূদ্যান। সামনে পড়ে আছে ডেডসির চকচকে পরিবেশ। নিচে নেমে গেল ব্রিগ। লবণাক্ত পানির উপর নিচু শব্দে উড়ে চলল জেট।
ডেভিডের কানে ভেসে এলো ব্রিগের কণ্ঠস্বর–এত নিচু দিয়ে আর কখনোই উড়ে যাওনি তুমি–বারোশ ফিট নিচেই সমুদ্র।
সমুদ্রের দক্ষিণ অংশে খনির কাজ চলায় আবারো উপরে উঠে এলো তারা। মুখোমুখি হলো দুর্ধর্ষ মরুভূমির।
‘হ্যালো, ক্যাকটাস ওয়ান, মরুর ফুল বলছি।’ আবারো ভঙ্গ হলো রেডিওর নীরবতা। কিন্তু এবার কমান্ড নেটের কল সাইন চিনতে পারল ডেভিড। সরাসরি এয়ারফোর্স কমান্ডের অপারেশনস সেন্টার থেকে কল করা হয়েছে তাদেরকে। এত গোপন একটি আন্ডার গ্রাউন্ড বাঙ্কারে এর অবস্থান যা ডেভিড কখনোই জানতে পারেনি। রাডারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান সঠিকভাবেই জেনে যাচ্ছে কমান্ড সেন্টার।
হ্যালো, মরুর ফুল। উত্তর দিল ব্রিগ। তৎক্ষণাৎ এমনভাবে আলোচনা শুরু হলো যেন বহুদিন পর দেখা হয়েছে দুই বন্ধুর। যদিও এই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা মোটেও তা নয়।
‘ব্রিগ, মোটি বলছি, এই মাত্রই তোমার অঞ্চলে গ্রাউন্ড সাপোর্টের অনুরোধ পেয়েছি আমরা। দ্রুত কো-অডিনেশন বলে গেল লোকটা।
‘সীমান্ত পুলিশের মোটর প্যাট্রলে অচেনা এয়ারক্রাফট নাক গলিয়েছে। একটু দেখে আসবে না?’
“ঠিক আছে, মোটি। ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সিতে ফিলে এলো ব্রিগ।
ক্যাকটাস টু, আমি দিক বদল করছি। সাথে থাকো। ডেভিডকে জানানো শেষ করেই নতুন দিকে ঘুরে গেল প্লেনের নাক।
রাডার স্ক্যানের চেষ্টা করার কোন মানে হয় না। চিৎকার করে বলে উঠল ব্রিগ। নিচেই কোথাও আছে এটা। ঐ পর্বতগুলো থেকে বের হতে দেয়া যাবে না শুকরটাকে। শুধু চোখ দুটো খোলা রাখো।
‘ঠিক আছে। ডেভিড ইতিমধ্যেই বুঝে গেছে যা ববাঝাতে চেয়েছে ব্রিগ। সবার পছন্দের এই হিব্রু শব্দটা এমন একটা দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে যেখানকার খুব কম জিনিসই ‘ঠিক আছে।’
সবার আগে দেখতে পেল ডেভিড। উজ্জ্বল নীল দিগন্তে বাতাস না থাকলেও দেখা গেল ধোয়ার চিকন কালো একটি রেখা। মনে হলো পেন্সিল দিয়ে লাইন টানা হয়েছে।
গ্রাউন্ড স্মোক। হেলমেট মাইক্রোফোনে কথা বলল ডেভিড। নিচে ঘড়ির এগারো কাটার ঘরে।
নিঃশব্দে সামনে তাকিয়ে আঁতিপাতি করে খোঁজা শুরু করে দিল ব্রিগ। অবশেষে দৃষ্টিসীমার একেবারে শেষ মাথায় দেখতে পেল এটিকে। মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে ছেলেটার অন্তত একটা দিক পুরোপুরি নির্ভুল, রাসটাস ঠিক কথাই বলেছে-শকুনের মতো চোখ।