ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগল ডেভিড। গাড়ি দ্রুত এগিয়ে গেল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কংক্রিটের কাঠামোর দিকে। ক্ষেতে বেগুনি রঙের ট্রাক্টরগুলো কাজে ব্যস্ত, উপরের বাতাসে অস্ট্রিসের পাখার মতো স্প্রে ছিটাচ্ছে সেচের যন্ত্র।
কংক্রিটের তৈরি শস্যাগারের কাছে পৌঁছালো গাড়ি। চওড়া দরজা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঢুকে গেল ব্রিগ। অবাক হয়ে ডেভিড দেখতে লাগল সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা বাস আর আটোমোবাইলের দিকে। না হলেও শত শত মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে এখানে। অথচ মাত্র কয়েকজন ট্র্যাক্টর ড্রাইভার ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়েনি বাইরে।
আবারো গার্ড এগিয়ে এলো, প্যারাট্রুপার ইউনিফর্ম পরা শস্যাগারের গোলাকার কাঠামোর কাছে ডেভিডকে নিয়ে গেল ব্রিগ। হঠাৎ করেই পুরো ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেল ডেভিডের কাছে। বুঝতে পারল শস্যাগার আসলে একটা জমি। সলিড কংক্রিট দিয়ে বানানো বিশাল বোমাপ্রুফ কাঠামো। আধুনিক ফাইটার বেসের সমস্ত অস্ত্র আর রাডার যন্ত্রপাতির সব বন্দোবস্ত আছে এখানে। চারটি সম্পূর্ণ মিরেজ ফাইটারদের স্কোয়াড্রন আছে এঁটে যাবে এই যৌথ কন্ট্রোল টাওয়ারে। এলিভেটর করে ব্রিগের সাথে মাটির নিচে নেমে যেতে যেতে সব জানা হয়ে গেল ডেভিডের।
এলিভেটর থেকে বের হয়ে রিসেপশন এরিয়ায় বেরিয়ে এলো তারা। আবার পরীক্ষা করা হলো ব্রিগের কাগজপত্র। একজন প্যারাট্রুপার মেজরকে ডেকে ডেভিডকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হলো। খুশি মনেই দায়িত্ব পালন করল মেজর। এরপর পথ দেখিয়ে কার্পেটে মোড়া এয়ারকন্ডিশন্ড আন্ডার গ্রাউন্ড টানেলে পাইলটদের ড্রেসিংরুমে ডেভিডকে নিয়ে এলো ব্রিগ। দাগবিহীন টাইলস করা মেঝে টয়লেট, শাওয়ার, লকার সবকিছু মিলিয়ে মনে হলো কাউন্টি ক্লাবের চেঞ্জিংরুম।
ডেভিডের সাইজ অনুমান করে তার জন্য কাপড় আনার আদেশ দিল ব্রিগ। আনার পর দেখা গেল অনুমান একেবারেই নির্ভুল হয়েছে। কর্পোরাল ডেভিডকে পরিয়ে দিল ওভার অল, বুটস, জি-স্যুট গ্লাভস, হেলমেট।
নিজের লকার থেকে কাপড় বের করে পরে নিল ব্রিগ। এরপর দুজনেই প্রস্তুতি রুমে গেল। জি-স্যুটের খানিকটা আড়ষ্ট হয়ে গেল চলাফেরা, বগলের নিচে হেলমেট।
দু’জনে ঢুকতেই দাবা খেলা আর ম্যাগাজিন থেকে চোখ তুলে তাকাল কর্তব্যরত পাইলট। জেনারেলকে দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়াল কিন্তু পুরো পরিবেশটাই বেশ সহজ আর অনানুষ্ঠানিক। ছোট্ট একটা জোক্স বলল ব্রিগ। হেসে ফেলল সবাই। এরপর ডেভিডকে ব্রিফিং রুমে নিয়ে এলো ব্রিগ।
দ্রুত কিন্তু কোন কিছুই চোখ এড়ায়নি এমনভাবে উড়তে যাওয়া পুরো পেট্রোলকে ব্রিফ করল ব্রিগ। ডেভিডকে চেক করে দিল রেডিও চালনা, এয়ারক্রাফটের পরিচিতি, অন্যান্য জরুরি বিষয়।
‘সব ঠিক আছে? অবশেষে জানতে চাইল সে। ডেভিড মাথা নাড়াতেই আবারো বলে চলল ‘মনে রাখবে তোমাকে যা বলেছি। আমরা যুদ্ধ করছি। যখনি এমন কিছু খুঁজে পাবে যেটা আমাদের নয়, সজোরে আঘাত করবে, ঠিক আছে?
‘ইয়েস স্যার।
‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সবকিছু সুন্দর চুপচাপ ছিল। কিন্তু মাত্র গতকাল ইন যাদবের কাছে নিচে খানিকটা সমস্যা হয়েছে। আমাদের একটা বর্ডার পেট্রোলের সাথে অসদাচারণ করেছে তারা। তাই পরিবেশ খানিকটা থমথমে হয়ে আছে এই মুহূর্তে। নিজের হেলমেট আর মানচিত্রের কে তুলে নিয়ে ডেভিডের দিকে ফিরল ব্রিগ। কাছে এসে তাকিয়ে রইল ভয়ঙ্কর বাদামী সোনালি চোখজোড়া দিয়ে।
‘আজই দফারফা হয়ে যাবে সব। চল্লিশ হাজারে গেলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে তোমার কাছে। রোজ হানিক্রা থেকে সুয়েজ, মাউন্ট হারমন থেকে এইলাতের প্রতি ইঞ্চি দেখতে পাবে তুমি। দেখবে এটি কতটা ছোট আর চারপাশের শত্রুর কাছে কতটা অসহায়। তুমি বলেছিলে এমন কিছু খুঁজছে যেটার জন্য জান বাজি রাখা যায়। তাই তিন মাইল মানুষের ভাগ্য পাহারা দেয়ার কাজ কী এর উপযুক্ত কিনা এই সিদ্ধান্ত নেবার ভার তোমার উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি আমি।’
লম্বা আন্ডার গ্রাউন্ড প্যাসেজে ছোট ইলেকট্রিক পার্সোনেল ক্যারিয়ারে করে নিচে নেমে এলো তারা। প্রবেশ কংক্রিটের বাঙ্কারে লাফ দিয়ে নামল গাড়ি থেকে।
এক সারিতে দাঁড়িয়ে আছে ছয়টি মিরেজ। মসৃণ চকচকে শরীর, সুচের মতো নাক। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে ওঠা পশুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। মনে রাখতে কোন সমস্যাই হবে না এমন আউটলাইনে তৈরি। কিন্তু মরুভূমির মতো বাদামী আর মেটে সবুজের ক্যামোফ্লেজের ফলে চট করে অন্য কেউ বুঝতেও পারবে না। লেজের কাছে ডেভিডের স্মারক চিহ্ন নীল তারা।
দুইটা মেশিনের জন্য সাইন করল ব্রিগ। ডেভিডের নাম্বারের কাছে এসে হেসে ফেলল, লিখলো বুচ বেন ইয়ক।’
‘যেমন ভালো নাম তেমনি ভালো তার অধীনে উড়তে পারাটা। রায় দিয়ে দিল ব্রিগ।
ছোট ককপিটে ঢুকে বসল ডেভিড। মনে হলো যেন নিজের ঘরে ফিরে এসেছে। এখানকার সবকিছুই ওর পরিচিত। একগাদা সুইচ ইনস্ট্রমেন্টস্ আর কন্ট্রোলের উপর উড়ে বেড়াতে লাগল আঙুল। চেক করে নিল ফ্লাইটের আগের সবকিছু।
বাঙ্কারের সংকীর্ণ জায়গায় কামান দাগার মতো গুরুগম্ভীর শব্দ করতে লাগল জেট। কানে তালা লেগে যাবার যোগাড়। এখনো সবাই টিকে আছে পুরো বেস্ কাঠামোর মাঝে স্টিলের গায়ে ছিদ্র থাকার ফলে।