মনোযোগ ফিরিয়ে নিল ডেভিডের দিকে। পাকস্থলীতে কেমন অদ্ভুত উত্তেজনা এলো। ডেভিডের দিকে তাকালেই মনে হয় দেহত্বকে বৈদ্যুতিক শকের মতো কিছু একটা হচ্ছে।
‘হুম, বড়সড় স্ট্যালিয়ন একটা।’ আনন্দিত মনে ভাবতে লাগল ডেবরা। এবার আর এত সহজে পালাতে পারবে না। এবার আমি বুদ্ধি করেছি ধরে রাখার জন্য আর ব্রিগকেও লাগিয়ে দিয়েছি।’
গ্লাস তুলে ডেভিডের দিকে তাকিয়ে চশমার উপর দিয়ে মিষ্টি করে হাসল ডেবরা।
তুমি যার পেছনে ছুটছে তা অবশ্যই পাবে; কিন্তু কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে তবেই। মনে মনে হুমকি দিল ডেবরা; কিন্তু সবার সামনে উঁচুস্বরে বলে উঠল
‘লিচেইম! জীবনের জন্য!’ একই কথা উচ্চারণ করল ডেভিডও।
‘এবার এত সহজে হাল ছাড়ছি না আমি।’ প্রতিজ্ঞা করল ডেভিড মনে মনে। তাকিয়ে দেখল ডেবরার চোখে সোনালি আলোর ফোঁটা। আমি তোমাকে পাবই, যত সময় লাগুক, যাই করতে হোক।’
.
ভোরবেলা বিছানার পাশে রাখা টেলিফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো ডেভিডের। চনমনে স্বরে কথা বলে উঠল ব্রিগ। মনে হলো ইতিমধ্যে দিনের কাজ সাড়া হয়ে গেছে তার।
‘আজকের জন্য যদি তোমার জরুরি কোন পরিকল্পনা না থাকে আমি তোমাকে কিছু দেখাতে চাই। জানিয়ে দিল ব্রিগ।
‘অবশ্যই স্যার।’ ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে ডেভিড।
পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মাঝে তোমাকে হোটেল থেকে তুলে নেবো আমি। এই সময়ের মাঝে নাস্তা করে ফেলল। লবিতে অপেক্ষা করো আমার জন্য।
ছোট, অনাড়ম্বর আর সাধারণ একটা গাড়ি ড্রাইভ করে এলো ব্রিগ। দ্রুত আর স্বচ্ছন্দ্য গতিতে চলতে লাগল গাড়ি। ব্রিগের সময়ানুবর্তিতা আর কর্মতৎপরতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল ডেভিড। কম করে হলে ডেবরার বাবার বয়স পঞ্চাশের ঘরে। এই বয়সে নিজের কথা ভেবে ভয়ঙ্কর লাগল তার।
প্রধান হাইওয়ে ধরে দক্ষিণে তেল আবিবের দিকে এগিয়ে চলল গাড়ি। দীর্ঘ নীরবতা ভাঙ্গলো ব্রিগ।
‘গত রাতে তোমার পুরাতন সি.ওর সাথে কথা বলেছি আমি। তুমি কোথায় তা জানতে পেরে অবাক হয়ে গেছে সে। আমাকে জানিয়েছে যে নেমে আসার আগে তোমাকে স্টাফ র্যাঙ্কে পদোন্নতির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
‘এটা ছিল ঘুষ’ ডেভিড তাড়াতাড়ি বলে উঠল। মাথা নেড়ে আবারো কথা শুরু করল ব্রিগ। চুপচাপ তার কথা শুনতে লাগল ডেভিড। খুশি মনে দেখতে লাগল পাহাড় থেকে নেমে যেতে যেতে কেমন করে পরিবর্তীত হয়ে যাচ্ছে চারপাশের দৃশ্যবলী। নিচু সমভূমি দিয়ে দক্ষিণে বারসেবা আর মরুভূমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি।
‘আমি তোমাকে একটা এয়ারফোর্স বেসে নিয়ে যাচ্ছি। আর এ সাথে যুক্ত করতে চাই যে, এই কারণে সব ধরনের সিকিউরিটি রেগুলেশন্ ভাঙ্গতে হচ্ছে আমায়। রাসটাস আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে তুমি উড়তে জানো। আমি দেখতে চাই ও সত্যি কথা বলছে কিনা।
দ্রুত একবার ব্রিগের উপর চোখ বুলিয়ে নিল ডেভিড।
‘আমরা প্লেন চালাতে যাচ্ছি?
ব্রিগ ইতিবাচক মাথা নাড়াতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল ডেভিড। উত্তেজনা বোধ করতে লাগল মনে মনে।
‘আমাদের এখানে যুদ্ধ হচ্ছে। তাই কমব্যাট প্লেন চালাবে তুমি আর সেই সাথে বইয়ের সব নিয়ম-কানুন ভেঙ্গেচুরে ফেলবে। কিন্তু বইয়ের কথা মতো সব সময় তো চলাও যায় না।
এরপর আস্তে আস্তে ইস্রায়েল সম্পর্কে, এর যুদ্ধ আর সফলতার সুযোগ সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যাখ্যা করল ব্রিগ। ডেভিডের কানে বাজতে লাগল কয়েকটা অদ্ভুত বাক্য।
–আমরা একটা জাতি গঠন করছি আর ফাউন্ডেশনে যে রক্ত মিশিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা, তা একে আরো মজবুত করবে’
–আমরা একে শুধুমাত্র দুনিয়াজুড়ে মার খাওয়া ইহুদিদের আশ্রয়স্থল বানাতে চাই না। আমরা শক্তিশালী উজ্জ্বল ইহুদিদেরও চাই’।
আমরা আছি তিন মিলিয়ন আর শত্রুর সংখ্যা দেড়শ মিলিয়ন। যাদের লক্ষ্যই হলো আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া
যদি তারা একটা যুদ্ধে হেরে যায় তাহলে হয়তো মরুভূমির কয়েক মাইল হারাবে মাত্র আর যদি আমরা হেরে যাই তাহলে হয়তো অস্তিত্বই মুছে যাবে
‘–তাদেরকে আরো একবার হারাতে হবে আমাদের। অন্যকিছু গ্রহণ করবে না তারা। তারা বিশ্বাস করে যে ১৯৪৮ সালে তাদের অস্ত্রে সমস্যা ছিল। সুয়েজের পর লাইন ঠিক হয়ে যাওয়াতে কিছুই হারাতে হয়নি তাদের। ৬৭’তে তারা ভেবেছে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আরো একবার তাদেরকে হারাবো আমরা আর আমাদেরকে একা ছেড়ে যাবে তারা—-
মনে হলো কোন মিত্র বা বন্ধুর সাথে কথা বলছে এমনভাবে মনের কথা ডেভিডকে খুলে বলল ব্রিগ। তার প্রতি বিশ্বাস দেখে খুশি হয়ে গেল ডেভিড আর আবারো প্লেন চালাবার সম্ভাবনায় তো রীতিমত রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল তার।
রাস্তার পাশে ঘন করে লাগিয়ে রাখা ইউক্যালিপটাসের ফলে দৃষ্টিগোচর হলো না কিছুই। তারের বেড়ার গায়ে লাগানো গেইটের কাছে এসে গাড়ি থামালো ব্রিগ। উভয় ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড দেখা গেল ঝুলছে : ‘চেইম ওয়েইসম্যান কৃষি পরীক্ষণ কেন্দ্র।
গেইটের ভেতরে ঢুকে আবার সাইড রোডে নেমে গেল গাড়ি, দ্বিতীয় আরেকটা বেড়া আর গার্ড পোস্ট দেখা গেল গাছ-পালার মাঝে।
গেইটে থাকা গার্ড দ্রুত ব্রিগের কাগজপত্র চেক করে দেখল। ভালোভাবেই ওকে চেনে তারা। আবারো চলতে শুরু করল গাড়ি বেরিয়ে এলো পরিষ্কার ভাবে ব্লক করা বিভিন্ন শস্যক্ষেতের মাঝে। ওটস, বার্লি, গম, ভুট্টা চিনতে পারল ডেভিড-বসন্তের উষ্ণ তাপে চমৎকার দেখাচ্ছে সবকিছু। প্রতিটি ক্ষেতের মাঝে চওড়া রাস্তা। এই দুই মাইল লম্বা মসৃণ রাস্তার মাঝে কিছু একটা আছে যা ঠিক স্বাভাবিক নয়। সঠিক কোনা করে কাটা হয়েছে। প্রতিটি রাস্তা, যদিও ডেভিডের কাছে তেমন অপরিচিত নয় পথটুকু। বুঝতে পেরে মাথা নাড়ল ব্রিগ। হ্যাঁ’ ব্যাখা দিল ব্রিগ, ‘রানওয়ে ৬৭’তে যে কৌশল ব্যবহার করেছি তা নয় কিন্তু।