‘ইউ আর ওয়েলকাম।’ ডেভিডকে স্বাগত জানিয়ে স্ত্রী আর কন্যার দিকে হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে আলিঙ্গন করল ব্রিগ। গত সাবাথের পর থেকে কারো সাথে দেখা হয়নি তার। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এয়ার বেস কন্ট্রোলের দায়িত্ব পালন করেছে ব্রিগ এসময়।
একটু পরে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় এসে পৌঁছালো জো। গ্রীষ্মকালীন খোলা গলার খাকি ড্রেস। ডেভিডকে দেখতে পেয়েই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল জো। ভালুকের মতো বিশাল বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ধরল ডেভিডকে। কাঁধের উপর দিয়ে ডেবরাকে বলল আমি ঠিক বলেছিলাম, তাই না?
‘জো বলেছিল যে তুমি আসবে।’ ব্যাখা করল ডেবরা।
‘মনে হচ্ছে একমাত্র আমিই ব্যাপারটা জানতাম না। অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিল ডেভিড।
ডিনারের টেবিলে জড়ো হলো সব মিলিয়ে পনেরো জন। পলিশ করা বিশাল টেবিল আর রুপার থালা-বাসনের উপর প্রতিফলিত হচ্ছে মোমবাতির আলো। সংক্ষিপ্ত করে প্রার্থনা সারলো ব্রিগ। টাক মাথার উপর খানিকটা হাস্যকর লাগল সাটিনের গোল্ড অ্যামব্রয়ডারি করা ইয়ামুলকা, নিজের হাতে ওয়াইন ঢেলে বিড়বিড় করে স্বাগত জানাল উপস্থিত সব অতিথিকে। জো’র সাথে হান্নাহও এসেছে। সুন্দর দেখাচ্ছে ওর তামাটে চুল। ডেভিডকে দেখেও কিছু বলল না সে। ব্রিগের নিজের পরিবার ছাড়াও আরো উপস্থিত হয়েছে ওর দু’ভাই, তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী। সবাই বেশ উঁচুস্বরে কথা বলছে আর ভাষা দ্রুত হিব্রু আর ইংরেজিতে অদল-বদল হচ্ছে। খাবারের স্বাদ বেশ মসলাদার কিন্তু মুখরোচক! যদিও ডেভিডের কাছে ওয়াইনের স্বাদ একটু বেশি মিষ্টি মনে হল। ডেবরার পাশে চুপচাপ বসে তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করতে লাগল এহেন হাসি-খুশি পরিবেশে নিজের উপস্থিতি। হঠাৎ করেই চমকে গেল, যখন দেখল যে, ডেবরার কাজিন ঝুঁকে এলো তার সাথে কথা বলতে।
‘তোমার জন্য ব্যাপারটা নিশ্চয় বেশ দ্বিধার মতো–ইস্রায়েলের মতো দেশে তোমার প্রথম দিন আর হিব্রুও বুঝতে পারো না, তুমি তো ইহুদি নও।
যদিও কথাগুলোতে খারাপ কিছু ছিল না, কিন্তু মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেল সব কোলাহল। চোখ তুলে তাকাল বিগ, তার ঘরে বেড়াতে আসা অতিথির মর্যাদাহানিকর কিছু করতে চায় না সে।
ডেভিড বুঝতে পারল যে ডেবরা মনোযোগ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই তার মনে চিন্তা এলো যে কেমন করে তিন ধরনের প্রতিবাদ কোন ইস্যুকে সঠিক রূপ দেবে–নতুন টেস্টামেন্ট, মোহামেডান আইন আর সম্ভবত মোশির বিধানও। ডেভিড বুঝতে পারল সে এই ঘর থেকে বিতাড়িত হতে চায় না। এই মানুষগুলোর কাছ থেকে আলাদা হতে চায় না। আবারো একা হয়ে যেতে চায় না। বেশ ভালো লাগছে এখানে।
কাজিনের দিকে তাকিয়ে হাসল ডেভিড। মাথা নেড়ে বলল, এটা অদ্ভুত, সত্যি–কিন্তু তুমি যতটা ভাবছো ততটা খারাপও না। আমি হিব্রু বুঝতে পারি যদিও তেমন ভালো বলতে পারি না। আর শোন আমি কিন্তু ইহুদিও।
পাশে বসা ডেবরার চেহারায় খুশির মোলায়েম আলো ফুটে উঠতে দেখল ডেভিড। জো’র সাথে দৃষ্টি বিনিময় ও করল দ্রুত।
‘ইহুদি? জানতে চাইল ব্রিগ। তোমাকে তেমন দেখায় না। ব্যাখ্যা করল ডেভিড। মাথা নাড়ল ব্রিগ।
‘শুধু তাই না, ডেভিড বিমানও চালায়। ডেবরা বলে উঠতেই জীবন্ত প্রাণীর মতো নড়ে উঠল ব্রিগের গোঁফ জোড়া। ন্যাপকিন দিয়ে গোঁফ ঠিক করে সর্তকতার সাথে ডেভিডের দিকে তাকিয়ে রইল ব্রিগ।
‘কতটা অভিজ্ঞ? বিস্তারিত জানতে চাইল ব্রিগ।
‘বারোশ ঘণ্টা স্যার। জেট’এ প্রায় হাজার।
‘জেট?
‘মিরেজ।
‘মিরেজ! গোপনে ঝিক করে উঠল বিগের স্বর্ণের দাঁত।
‘কোন স্কোয়াড্রন?
‘কোবরা।
‘রাসটাস নড’সের শিক্ষার্থী? হাঁ করে ডেভিডের দিকে তাকিয়ে রইল ব্রিগ। পাল্টা প্রশ্ন করল ডেভিড।
‘আপনি রাসটাসকে চেনেন? অবাক হয়ে গেল সে।
‘আমরা একসাথে প্রথম স্পিট ফায়ার্সে উড়েছিলাম চেকোশ্লোভাকিয়াতে– ৪৮এর দিকে। আমার ওকে ডাকতাম বুচ বেন ইয়ক।
জেন্টিলি’দের পুত্র। কেমন আছে সে?
সবসময় যেমন ছিলেন তেমনই চঞ্চল। কৌশলে উত্তর দিল ডেভিড।
‘ওয়েল, যদি রাসটাস তোমাকে উড়তে শেখায় তাহলে তুমি মোটামুটি ভালো। সিদ্ধান্তে পৌঁছালো ব্রিগ।
সাধারণ একটা নিয়ম হলো যে ইস্রায়েলি এয়ারফোর্স কখনো বিদেশী পাইলট ব্যবহার করবে না। প্রথম শ্রেণীর ফাইটার পাইলট হিসেবে ইহুদিই বেশি মার্ক পায়। ডেভিডের ভেতরে একই গুণ দেখতে পেল ব্রিগ, যা খুঁজে পেয়েছে পল মরগ্যান। মোমবাতির আলোয় আবারো তরুণটিকে খেয়াল করে দেখল ব্রিগ। চোখ এড়ালো স্থির আর পরিষ্কার ডেভিডের দৃষ্টি যা খুঁজে বেড়াচ্ছে দূরের দিগন্ত। এটা একটা গান ফাইটারের চোখ আর ব্রিগের সব পাইলটরাই গান ফাইটার।
এ জাতীয় একটা পাইলটকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে বহু বছর আর প্রায় মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়। সময় এবং অর্থ নির্ভর করতে তার দেশের উপর–নিয়মও তাই বদলানো যায়।
ওয়াইন বোতল তুলে নিয়ে সাবধানে ডেভিডের গ্লাস পূর্ণ করে দিল ব্রিগ। ‘আমি রাসটাস নড়কে ফোন করব।’ নীরবে সিদ্ধান্ত নিল ব্রিগ। এই তরুণ সম্পর্কে আরো জানতে হবে।’
ব্রিগ যখন ডেভিডকে ইস্রায়েলে আসার কারণ, কারণ না থাকা আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করল, তাকিয়ে রইল ডেবরা।
ব্রিগের মনে কী চিন্তা চলছে তা পরিষ্কার বুঝতে পারল ডেবরা। এই সন্দেহই করেছিল সে। ডেভিডকে ডিনারের দাওয়াত দেয়া, ব্রিগের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া সবকিছু নিয়ে হিসাব কষা শুরু হয়ে গেল।