পিছনের সিটে বসে ডেবরার কোমর ধরে রাখল ডেভিড। এত ভিড়ের মাঝেও ঠিকই পথ করে নিয়ে এগিয়ে চলল ডেবরার স্কুটার। লেপ্টে বসে রইল ডেভিড। এমনকি বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির ভিড়কেও হাসিমুখে উড়িয়ে দিল স্কুটার।
‘আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে।’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল ডেবরা।
‘খুব ভালো! এই মুহূর্ত উপভোগের জন্য চলল বেঁচে থাকি।’
‘জো তোমাকে দেখলে অবাক হয়ে যাবে।
‘যদি কখনো পৌঁছাই তবেই না।
‘তোমার নার্ভ নষ্ট হয়ে গেছে নাকি?
মাত্র এই মিনিটখানেকের মাঝে হারিয়ে ফেলেছি এটা।
ইন কারেম উপত্যকার আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল ডেবরা। মনে হলো যেন ও একটা মিরেজ প্লেন চালাচ্ছে আর ওর পেছনে বসে আছে ভ্রমণ পিপাসু একটা মানুষ। এমনভাবে ডেভিডকে চারপাশের বর্ণনা দেয়া শুরু করল ডেবরা।
‘এটা মেরির কূয়ার আশ্রম। এখানেই তিনি জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট মায়ের সাথে দেখা করেছিলেন। খ্রিস্টান রীতি অনুযায়ী–এ ব্যাপারে তো তুমি বিশেষজ্ঞ।’
‘ইতিহাস বাদ দাও।’ আর্তনাদ করে উঠল ডেভিড। সামনের বাকের মুখে একটা বাস।
জলপাই গাছগুলোর মাঝে গ্রামটাকে দেখে মনে হলো এখানে সময় বোধহয় থমকে গেছে। গড়ানে ভূমির মাঝে গির্জা, আশ্রম, উঁচু দেয়াল ঘেরা বাগান, ছবির মতো সুন্দর মরূদ্যান আর অন্যদিকে আকাশের ওপারে দেখা যাচ্ছে আধুনিক জেরুজালেমের সু-উচ্চ সব বহুতল ভবনের বিশৃঙ্খলা।
প্রধান রাস্তা ছেড়ে সরু একটা গলির মুখে ঢুকে গেল ডেবরা। দু’পাশে বয়সের কোন গাছপাথর না থাকা পাথরের দেয়াল। লোহার দরজার সামনে ব্রেক কষলে স্কুটার।
‘হোম।’ জানিয়ে দিল ডেবরা। একটু দূরে গেইট হাউজের মাঝে স্কুটার লক্ করে দেয়ালের কোনায় থাকা ছোট দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো তারা।
বিশাল একটা বাগানে পৌঁছ গেল দু’জনে। চারপাশে চুনকামের ফলে সাদা যেখানে উঁচু প্লাস্টারের দেয়াল। মোটা মোটা কাওলা জলপাই গাছ দাঁড়িয়ে আছে বাগানের মাঝে। দেয়াল বেয়ে উঠে গেছে আঙুরলতা। থোকা থোকা আঙুর ও দেখা গেল ঝুলছে।
‘বিগ একজন আগ্রহী কিন্তু পাগল তরুণ প্রত্নতত্ত্ববিদ। জলপাই গাছগুলোর ভেতর ভেতরে থাকা রোমান আর গ্রিক মূর্তিগুলো দেখিয়ে বলল ডেবরা। দেয়ালের চারপাশেরও মাটির পাত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রাচীন আমলের মোজাইক টাইলস্ বিছানো রাস্তা চলে গেছে ঘরের দিকে। এটা আইন বিরুদ্ধ কিন্তু তারপরেও সে তার পুরো অবসর সময়টুকু পুরাতন জায়গা খুঁড়ে কাটায়।
রান্নাঘরে বিশাল খোলা চুল্লি, যেখানে আধুনিক ইলেকট্রিক স্টোভ মনে হলো বেমানান। কিন্তু তামার পাত্রগুলো যে নিয়মিত ঘষে মেজে পরিষ্কার রাখা হয়, তা স্পষ্টই বোঝা গেল। টাইলস করা মেঝেও বেশ পরিষ্কার আর সুগন্ধও ছড়াচ্ছে।
চুপচাপ স্বভাবের ডেবরার মা লম্বা আর কৃশকায়। দেখে মনে হলো ডেবরার বড় বোন। পারিবারিক আবহ বেশ আনন্দময়, সকলকে অভিবাদন জানাল ডেবরা। মনে মনে ব্যাপারটা ভেবে ডেভিড খুশিই হলো যে এই বয়সে ডেবরাকে এমনই দেখাবে। সকলের সাথে ডেভিডের পরিচয় করিয়ে দিয়ে ডেবরা ঘোষণা করল যে আজ রাতে ডেভিড তাদের সাথে ডিনার করবে। এক মুহূর্ত আগ পর্যন্তও এটা জানতো না ডেভিড।
‘প্লিজ।’ তাড়াতাড়ি বলে উঠল ডেভিড। আমি অনধিকার প্রবেশ করতে চাই না। সে জানে যে ইহুদী বাড়িতে শুক্রবারের রাত বিশেষ একটা সময়।
‘তুমি অনাধিকার প্রবশে করছে না। আমরা সম্মানিত বোধ করব যদি তুমি থাকো। ডেভিডের দাবি উড়িয়ে দিল ডেবরা। জোর স্কোয়াড্রনের বেশিরভাগ ছেলের এটাই ঘর। আমাদের ভালোই লাগে ব্যাপারটা।
ডেভিডকে একটা গোল্ডস্টার বিয়ার এনে দিল ডেবরা। এরপর ছাদে গিয়ে বসল দু’জনে। এমন সময় এলো ডেবরার বাবা। ছোট্ট গেইট দিয়ে ঢুকে পাথরে চৌকাঠের নিচে এসে দাঁড়াল ঋজু দেহ। বাগানে ঢুকে ইউনিফর্মের টুপি খুলে হাতে নিয়ে নিল ডেবরার বাবা।
গলার কাছে ভোলা সাধারণ ছটের ইউনিফর্ম পরে আছে ডেবরার বাবা। বুকপকেটের কাপড়ের গায়ে লাগানো সেনাবাহিনীর র্যাংকের চিহ্ন আর পদক সমূহ। কাঁধ সামান্য গোলে ধাচের, হতে পারে চওড়া দেহ সরু ফাইটার এয়ারক্রাফটের মাঝে থাকতে থাকতে এমন হয়ে গেছে। মাথা বাদামি। আর সন্তদের মতো হালকা চুল। কিন্তু গোঁফ বেশ বাঁকানো, যার ফাঁক দিয়ে চকচক করছে স্বর্ণের দাঁত। লম্বা, বাঁকানো নাক, প্রাচীন আমলের যোদ্ধাদের মতো। চোখজোড়া কালো আর ঠিক ডেবরার মতো সোনালি আভা ছড়াচ্ছে। পুরো অভিব্যক্তিটাই এমন যে সাথে সাথে শ্রদ্ধা ভাব এলো ডেভিডের মনে। স্বাভাবিকভাবেই তাই উঠে দাঁড়িয়ে জেনারেলের সাথে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল ডেভিড, সম্বোধন করল স্যার বলে।
খুব দ্রুত ডেভিডের উপর চোখ বুলিয়ে নিল বিগ। নিজের মন্তব্য অবশ্য প্রকাশ করল না। হাবে-ভাবে তাই আনন্দ বা হতাশা কিছুই ফুটে উঠল না।
পরবর্তীতে ডেভিড জানতে পারে যে ডেবরার বাবাকে তারা ‘দ্য ব্রিগ’ নামে ডাকে। যেটা ‘দ্য ব্রিগান্ড’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৯৪৮ সালের আগে প্যালেস্টাইনে হাগানাহর জন্য যুদ্ধজাহাজ আর অস্ত্র ছিনতাইয়ের জন্য ব্রিটিশরা এই উপাধি দেয় ডেবরার বাবাকে। সবাই এমন কী ছেলেমেয়েরাও তাকে এই নামেই ডাকে। শুধুমাত্র তার স্ত্রী ডাকে নিজস্ব নাম–জোশুয়া।
‘ডেভিড আজ রাতে আমাদের সাথে সাব্বাথ ভোজনে অংশ নেবে। ব্যাখা করল ডেবরা।