আর এটা আমাদের অনেক ভালো এটা।
‘রাইট অন, ডল। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসল ডেভিড আর মেয়েটা।
তো, জেরুজালেমে পৌঁছে গেছে তারা। কাস্টার্ড হলুদ রঙের পাথর দিয়ে বানানো লম্বা সব অ্যাপার্টমেন্ট, পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ স্তম্ভের মতো বিশাল দেয়াল ঘেরা দুর্গ প্রাচীরের মাঝে, এটিই হচ্ছে জেরুজালেমের হৃদয়।
ফ্লাইটে থাকা অবস্থাতেই ডেভিডের জন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে রুম বুক করে দিয়েছে টি.ডব্লিউ.এ.। রুমের জানালা দিয়ে পুরাতন শহরে গেৎশিমানি বাগানের দিকে তাকাল ডেভিড। দেখা যাচ্ছে ছোট গম্বুজ, সুক্ষাগ্র চূড়া আর সোনালি আভা মণ্ডিত পাথরের গম্বুজ। জুদাইজম আর খ্রিস্টিয়ানিটির কেন্দ্রস্থল মুসলিমদের পবিত্র স্থান, দু’হাজার বছরব্যাপী যুদ্ধের ক্ষেত্র, প্রাচীন ভূমি সব মিলিয়ে কেমন অদ্ভুত বোধ জাগলো ডেভিডের মনে। জীবনে প্রথমবারের মতো নিজের মাঝে এমন একটা অংশ উন্মোচিত হলো যা ইহুদি, মনে হল এ শহরে আসাটা কোন মতেই ভুল হয়নি।
‘সম্ভবত, চিৎকার করে বলে উঠল সে, এখানে আছে সবকিছু যা আমি খুজঁছি।’
সন্ধ্যার খানিকটা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার পার্কিংয়ের জায়গায় ট্যাক্সি ক্যাব ছেড়ে নামলো ডেভিড। মেইন গেইটের কাছে সারা শরীর সার্চ করে দেখল গার্ড। এখানে এভাবে সার্চ করাটা রুটিনের মতো, তাই কয়েক দিনের মাঝেই ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ল ডেভিড। কিন্তু ভেতরে ঢুকে খালি ক্যাম্পাস দেখে অবাক হয়ে গেল সে। কোথাও কেউ নেই। তারপর মনে পড়ল যে আজ শুক্রবার-সাব্বাতের জন্য কিছুই আজ ধীর গতিতে চলবে।
প্রধান প্লাজার চারপাশে ফুটে আছে লাল-পাপড়ির গাছ। অনিন্দ্যসুন্দর পুলের চারপাশেও তাই। অ্যাডমিন ব্লকে ঢুকে ডেবরার কথা জানতে চাইল ডেভিড। আরেকটু হলে পোর্টার প্রায় চলেই যাচ্ছিল ডেস্ক থেকে।
মিস মোরদেসাই– নিজের লিস্ট চেক করে দেখল পোর্টার। হ্যাঁ ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে, লটারম্যান বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায়।’ কাঁচের দরজা দিয়ে দিক নির্দেশ করে দেখাল লোকটা। আপনার ডানদিকের তৃতীয় বিল্ডিংটা। সোজা ভেতরে চলে যান।
শিক্ষার্থীদের টিউটোরিয়ালে ব্যস্ত, ডেবরা। অপেক্ষার সময়টুকু ছাদে সূর্যের উষ্ণতায় চেয়ারে বসে কাটিয়ে দিল ডেভিড। হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তার শীতল স্রোত বয়ে গেল যেন মেরুদণ্ড বয়ে। এথেন্স ছাড়ার পর এই প্রথম মনে। হলো যে, ডেবরা মোরদেসাইয়ের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবার কোন কারণ কী আছে তার? এমনকি মেয়েটার প্রতি নিজের আচরণ ব্যাখা করতেও হিমশিম খেয়ে গেল সে। আত্মসমালোচনা এমন একটা ব্যাপার যেটা ডেভিড খুব বেশিবার চেষ্টা করেনি আগে। এছাড়া তার যে ভাগ্য আর চেহারা তাতে খুব বেশি প্রয়োজনও পড়েনি ব্যাপারটার। তাই বসে থাকতে থাকতে মনে হলো পছন্দ না হলেও কথাটা হয়তো সত্যি। ডেবরা তাকে বখে যাওয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে। তা হয়তো মিথ্যে নয়। চিন্তায় ছেদ ঘটিয়ে ছাদের দিকে এগিয়ে আসল শিক্ষার্থীদের জুতার শব্দ। এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে উঠে এলো উপরে। বুকের মাঝে ধরা বই আর বেশির ভাগ মেয়েরাই পথ চলতে গিয়ে দ্রুত নজর বুলিয়ে নিল ডেভিডের উপর।
আরো খানিক বিরতির পর এগিয়ে এলো ডেবরা। বগলের নিচে বই, এক কাঁধে ব্যাগ ঝুলছে। কাঁধের উপর জড়ো করে বাঁধা চুল, মুখে কোন মেক-আপ নেই, কিন্তু স্কার্টে গ্রীষ্মের উজ্জ্বল কমলা রঙ। উন্মুক্ত পায়ের পদযুগল চামড়ার স্যান্ডেলে মোড়ানো। দু’জন শিক্ষার্থীদের সাথে গভীর আলোচনায় মগ্ন ডেবরা প্রথমটাতে খেয়ালই করেনি ডেভিডকে। উঠে দাঁড়াল ডেভিড। তারপরই তার বিখ্যাত নীরবতা নিয়ে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইল ডেবরা। এর আগে ও জারাগোজার ক্যান্টিনে যার সাথে পরিচয় হয়েছিল ডেভিডের।
হঠাৎ করে মনে হলো হাত-পা ভারী হয়ে গেল, ডেভিড নিজেও অবাক হয়ে গেল নিজের আচমকা ভারী হওয়া বোধ নিয়ে। হেসে কাঁধ ঝাঁকাল সে।
‘হ্যালো, ডেবস।’ নিজের কানেই অদ্ভুত ঠেকল ডেভিডের গলা। নড়ে উঠল ডেবরা, চাইল দ্রুত হাত দিয়ে অন্তত চুলটা ঠিক করে নিতে। কিন্তু হাতে বই থাকায় পারল না সে।
‘ডেভিড’ এগিয়ে আসতে গিয়েও অস্বস্তি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর দিকে তাকাল ডেবরা। বুঝতে পেরে চলে গেল তারা। ডেবরা তাকাল ডেভিডের দিকে।
‘ডেভিড’–আবারো একই কথা বলল ডেবরা, এরপর হঠাৎ করেই অভিব্যক্তি বদলে গেল। ওহ গড! আমি একটু লিপস্টিকও লাগাইনি।’
হেসে ফেলল ডেভিড। মনে হলো কাঁধ থেকে বিশাল একটা বোঝা নেমে গেল যেন। এগিয়ে গেল সে। হাত বাড়িয়ে দিল আলিঙ্গন করতে। ডেবরাও এগিয়ে এলো কিন্তু হাতের বই আর ব্যাগ নিয়ে কী করবে বুঝতে পারল না। নিচে পড়ে গেল সব। আহত হয়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিতে গেল। অবশেষে আলিঙ্গন করল দু’জন-দু’জনকে।
‘ডেভিড। শক্ত করে ডেভিডের গলা জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করল ডেবরা। ‘তুমি একটা যাচ্ছেতাই এত সময় লাগল কেন? আমি তোমার চিন্তা প্রায় ছেড়েই দিয়ে ছিলাম।’
ডেবরার একটা মোটর স্কুটার আছে, সেটা নিয়ে জেরুজালেমের রাস্তায় এমনভাবে ছুটে বেড়ায় সে যে তার পথে পড়া ট্যাক্সি ড্রাইভাররাও ভিরমি খেয়ে যায়- স্টিলের মতো শক্ত নার্ভ আর বিপদে ভয় না পাবার ব্যাপারে যাদের সুখ্যাতি প্রবাদতুল্য।