ভালো থাকো, জো।
‘আমি তোমার ব্যাগ নিচ্ছি।
‘ঠিক আছে, লাগবে না। ডেভিড চেষ্টা করল জোকে থামাতে।
‘কোন সমস্যা নেই।’ জো লাগেজ নিয়ে নিল ডেভিডের হাত থেকে। মুস্তাং পর্যন্ত নিয়ে গেল। পেছনের সিটে রেখে দিল সব।
‘পাহাড়ের উপর পর্যন্ত যাবো তোমার সাথে আর হেঁটে ফিরে আসব।’ প্যাসেঞ্জার সিটে উঠে বসল জো, আরাম করে বসল। আমার একটু শরীরচর্চা করা দরকার।’
দ্রুত গাড়ি চালাতে লাগল জো। দুজনেই রইল চুপচাপ। ইচ্ছে করে সিগারেট জ্বালালো জো তারপর দিয়াশলাই ফেলে দিল জানালা দিয়ে।
‘আমি জানি কোথায় ভুল হয়েছে ডেভি। কিন্তু আমি অনুমান করতে পারছি।’
উত্তর দিল না ডেভিড। পথের দিকে নজর।
‘ও একটা খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছে কিছুদিন আগে, মাত্র গত কয়েকদিনে এর একটু পরিবর্তন হলো। বেশ হাসিখুশি, আমারই তাই মনে হয়েছে সব হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।
তারপরেও চুপ করে রইল ডেভিড। কোন পাত্তাই দিল না জোর কথায়। মাথা মোটাটা নিজের ব্যাপারে নাক গলায় না কেন।
‘ও অসাধারণ একজন মানুষ ডেভি। এমন নয় যে আমার বোন বলে বলছি। ও সত্যিই তাই আর আমার মনে হয় ওর সম্পর্কে জানা উচিৎ তোমার-শুধু শুধু খারাপ ভেবো না।’
উপসাগর আর শহরের উপর পাহাড়ের মাথায় পৌঁছালো তারা। ডেভিড গাড়ি থামালো কিন্তু ইঞ্জিন চালু রাখল। তাকিয়ে রইল নিচে অনিন্দ্যসুন্দর নীল সাগরের দিকে। একসাথে মিলে গেছে পাথরের চূড়া আর পাইনের পাহাড়।
‘ডেবরার বিয়ের কথা চলছিল। নরম স্বরে বলতে লাগল জো। ছেলেটা ছিল চমৎকার, ডেবরার চেয়ে বড়। বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে কাজ করতে তারা। এছাড়াও রিজার্ভের ট্যাংক ড্রাইভার ছিল ছেলেটা। সিনাইতে অভিযানের সময় ট্যাংকসহ পুড়ে যায়।’
ঘুরে জোর দিকে তাকাল ডেভিড। খানিকটা নরম হয়েছে চোখের দৃষ্টি।
‘ডেবরা ভেঙ্গে পড়ে একেবারে।’ একগুয়ে ভাবে বলতে থাকে জো। মাত্র গত কয়েক দিন ধরে আমি ওকে সত্যিকারের খুশি আর সহজ স্বাভাবিক দেখছি।’
কাঁধ ঝাঁকাল জো আর এমনভাবে হাসল যেন বিশাল সেন্ট বার্নারড কুকুর। পরিবারিক ইতিহাস বলার জন্য দুঃখিত ডেভি। শুধু ভেবেছি হয়তো এতে কোন উপকার হবে। বড়সড় বাদামী হাত বাড়িয়ে দিল জো। আমাদের ওখানে বেড়াতে এসো। তুমি জো জানো ওটা তোমারও দেশ। তোমাকে ঘুরিয়ে দেখাতে ভালোই লাগবে আমার।’
হাত বাড়ালো ডেভিড। আমি হয়তো আসব কখনো জানিয়ে দিল সে।
‘শালোম।
‘শালোম জো। গুড লাক।’ গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেল জো। রাস্তার পাশে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল ডেভিডের চলে যাওয়া। হাত নাড়াল সে আর প্রথম বাকের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল গাড়ি।
২. ফর্মুলা ওয়ান রেসিং ড্রাইভার
ভবিষ্যতে ফর্মুলা ওয়ান রেসিং ড্রাইভার হতে চায় এমনতরদের জন্য রোমের পথে অস্টিয়াতে পরিত্যক্ত একটা কংক্রিট সার্কিটে গড়ে উঠেছে স্কুল। তিন সপ্তাহের কোর্সের খরচ ৫০০ ইউ এস ডলার
ভিয়া ভেনেতোতে উঠল ডেভিড আর প্রতিদিন গেল ট্রাকে। যদিও ও পুরো কোর্সটাই শেষ করল তারপরেও প্রথম সপ্তাহের শেষেই জেনে গিয়েছিল এটা ওর গন্তব্য নয়। অবারিত আকাশে ছুটে বেড়ানোর পর ট্র্যাক মনে হলো সংকীর্ণ। এমনকি একটা জেটের ইঞ্জিনের কাছের টাইরেল ফোর্ডের গড়গড় করা শক্তি কিছুই নয়। যদিও ক্লাশের অন্যদের তুলনায় ওর মনোসংযোগ কমই ছিল, কিন্তু গতি আর সামঞ্জস্য সম্পর্কে জন্মগত প্রতিভার জোরে সবার উপরেই থাকল ওর ফলাফল। একটা কোম্পানির কাছ থেকে ড্রাইভিং করার প্রস্তাবও পেয়ে গেল। বেতন তত একটা ভালো না হলেও সিজনের জন্য প্রায় কন্ট্রাক্ট সাইন করেই ফেলেছিল সে। একেবারে শেষপর্যায়ে মন পরিবর্তন করে আবারো শুরু হয় চলা।
এথেন্সে এক সপ্তাহ কাটায় পিরাউস আর গ্লাইফাড়ার ইয়ট বেসিনের কাছে ঘোরাঘুরি করে। একটা মোটর ইয়ট কিনে দ্বীপ সমূহে চার্টার করে ঘুরে বেড়ালে কেমন হবে ব্যাপারটা, এ সম্পর্কে ও খোঁজখবর নিল। সূর্য, সমুদ্র আর সুন্দরী মেয়েদের মিলনমেলা দেখে মনে হলে ভাল হবে ব্যাপারটা। ইয়টগুলোও বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল তুষারের মতো পেইন্ট-ওয়ার্ক আর বার্নিশ করা কাঠের কাজের জন্য। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মাঝে বুঝে গেল যে চার্টার করে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো মানে একদল বিরক্তিকর রোদে পোড়া সী-সিক টুরিস্টদের বোর্ডিং হাউজ বয়ে বেড়ানো।
সপ্তম দিনে এথেন্স বন্দরে নোঙ্গর ফেলল আমেরিকান ষষ্ঠ বহর। বিচের দিকে মুখ করে থাকা একটা ক্যাফের টেবিলে বসেছিল ডেভিড। সূর্যের নিচে বসে ওজো পান করতে করতে বাইনোকুলার চোখে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখল এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে। বিশাল সমতল উপরতলায় পাখা ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ক্রুসেডারস আর ফ্যান্টমস্। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হলো কেমন একটা তৃষ্ণা জেগে উঠল। অনেক দিনের পিপাসার্ত যেন সে। আত্মার গহীন থেকে উঠে এলো দীর্ঘশ্বাস। মনে হলো সারা পৃথিবী খুঁজে নিজের জন্য কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। বাইনোকুলার রেখে দিল একপাশে। তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। অনেক উঁচুতে একটা মেঘখণ্ড। নীলের গায়ে উজ্জল রুপালি।
দুধের মতো ওজোর গ্লাস তুলে নিল ডেভিড। সূর্যের তাপে গরম হয়ে আছে পানীয়টুকু। গলায় ঢেলে দিল মিষ্টি তরল।