একসাথে চমৎকার নাচলো দু’জনে। কর্কশ গানের তালে ও তাল মিলালো। আফ্রিকার পুরাতন একটি মুদ্রা এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলল যে অন্যান্য নাচিয়েরাও তাকিয়ে রইল।
গান পরিবর্তন হলো। ডেবরা এগিয়ে এসে ডেভিডের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। ডেভিডের মনে হল যেন কোন একটা শক্তি আসছে ডেবরার শরীর থেকে, যার ফলে জাগ্রত হয়ে উঠছে ওর শরীরের প্রতিটি ইন্দ্রিয় আর এও বুঝতে পারল যে এই নারীর সাথে যে কোন ধরনের সম্পর্কের পথ এত সহজ হবে না। এত গভীর ছিল এ উপলব্ধি যে প্রায় দ্রুতই আবার ভুলে গেল তা।
রেকর্ড শেষ হতেই হান্নাহ আর জোকে রেখে নীরব রাস্তায় নেমে এলো দু’জনে। পথ নেমে গেছে নিচে বিচের দিকে।
আকাশে চাঁদ থাকায় বিচের উপর জড়ো হয়ে থাকা চুড়াগুলোও দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের গায়ে মনে হলো অসংখ্য হলুদ চিত্র। পাথুরে বিচে ভেসে আসছে সমুদ্রের ঢেউ। জুতো খুলে রেখে গোড়ালি অব্দি পা পানিতে ডুবিয়ে হাঁটতে লাগল দুজনে।
কয়েকটা পাথরের কাছে এসে খানিক গোপন জায়গা পেয়ে থেমে গেল একে অপরকে কিস করার জন্য। ডেবরার নরম অভিব্যক্তিতে দুপুরের অসমাপ্ত কাজের সমাপ্তি হবে বলে ভাবল ডেভিড।
এই ভুলের পরিণামে আবারো ধাক্কা খেল ডেবরার হাতে। কিন্তু এবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর রাগের গলায় বলে উঠল ডেবরা।
‘ধুত্তোরি! তুমি এখনো শেখোনি? আমি এটা করতে চাই না। যতবার আমরা একা হবো ততবারই এমন চেষ্টা করবে তুমি?
‘সমস্যা কী তাতে?’ ডেভিডও গলা তুলল। রেগে উঠছে ক্রমে। এটা বিংশ শতাব্দী ডালিং। কুমারী মেয়ে এই সিজনের স্টাইল নয়–তুমি শোননি?
‘আর বখে যাওয়া ছোট্ট ছেলেগুলোর উচিৎ বড় হয়ে ওঠা, যখন তারা নিজের দায়িত্ব নেবে। জ্বলন্ত দৃষ্টি হানলো ডেবরা।
থ্যাংকস!’ গড়গড় করে উঠল ডেভিড।
‘কোন পেশাদার কুমারীর কাছ থেকে অপমান পাবার জন্য আমি আশেপাশে থাকতে চাই না।’
ভালোই তো, চলে যাও তাহলে।’ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ডেবরা।
হুম, দ্যাটস আ গ্রেট আইডিয়া! ডেবরার দিকে পেছন ঘুরে বিচ থেকে চলে গেল ডেভিড। এতটা আশা করেনি ডেবরা। ছুটতে শুরু করল ডেভিডের পিছুপিছু-কিন্তু আত্মমর্যাদাবোধ থামালো তাকে। থেমে গিয়ে হেলান দিল একটা পাথরের গায়ে।
দুঃখে কাতর ডেবরা ভাবল, ওর উপর জোর করা উচিৎ হয়নি ডেভিডের। আমি ডেভিডকে চাই, সত্যি চাই, কিন্তু ভুডুর পর ডেভিডই হবে প্রথম। শুধু একটু সময় পেলেই ঠিক হয়ে যেত সবকিছু। জোর করা উচিৎ হয়নি। যদি ডেভিড ডেবরার গতিতেই এগোত তাহলে সঠিক কাজটাই করতে পারতো সে।
কেমন হলো ব্যাপারটা যে আমি ডুডু সম্পর্কে অনেক কিছু এখন ভাবতেও পারি না। মাত্র তিন বছর হয়েছে। কিন্তু ওর স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এমনকি মুখটাও মনে নেই ঠিকভাবে। অথচ ডেভিডের প্রতিটি অংশ একেবারে নিখুঁত ভাবে মনে আছে- প্রতিটি রেখা।
আমার হয়তো উচিৎ ডেভিডের পিছুপিছু গিয়ে ওকে ডুডুর কথা খুলে বলা। ওকে বলা যে, ধৈর্য ধরে আমাকে যেন একটু সাহায্য করে। এটাই হয়তো করা উচিৎ ভাবলেও কাজটা করল না ডেবরা। ধীরে ধীরে হেঁটে বিচ্ থেকে বের হয়ে আসল। নীরব শহরের মাঝ দিয়ে চলে গেল হোটেলের দিকে।
রুমের মাঝে হান্নাহর বিছানা একদম খালি। নিশ্চয় জোর সাথে। ডেবরা ভাবল আমারও তো কথা ছিল ডেভিডের সাথে থাকার। ডুডু মারা গেছে, আমি বেঁচে আছি। আমি ডেভিডকে চাই, ওর সাথেই আমার হওয়া উচিৎ কিন্তু ধীরে ধীরে কাপড় খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ল ডেবরা, যদিও ঘুম হলো না মোটেই।
‘২০০১ A.D ডিসকোর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ডেভিড। একটা হোস্টেস বেশ লম্বা, সোনালি চুল, গায়ের রঙ ইংরেজদের মতো, চোখ চায়না ডলের। চোখ তুলে ডেভিডকে দেখতে পেল মেয়েটা, চারপাশে তাকিয়ে দেখে নিল ডেবরা আছে কিনা। হাসল।
একটা রেকর্ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত একে অন্যকে স্পর্শ করা ছাড়াই নাচলো দু’জনে। এরপর ঝুঁকে কাছে গেল ডেভিড। জানতে চাইল,
‘তোমার কোন রুম আছে? মাথা নাড়ল মেয়েটা।
‘চল,’ জানালো ডেভিড।
ডেভিড যখন নিজের রুমে ফিরে এলো বাইরে তখন আলো। শেভ করে ব্যাগ গুছিয়ে নিল। রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে নিজেই হতবাক হয়ে গেল। কাউন্টারের কাছে লাগেজ জড়ো করে ডাইনারস ক্লাব কার্ড দিয়ে পরিশোধ করে দিল বিল।
ব্রেকফাস্ট রুম থেকে জো আর হান্নাহর সাথে বাইরে বের হয়ে এলো ডেবরা। বিচে যাবার জন্য পোশাক পরে আছে সকলে। বাদিং গিয়ারের উপর। টেরি রোব জড়ানো। হাসিখুশি দেখাল সকলকেই–তারপরই ওরা দেখতে পেল ডেভিডকে।
‘অ্যাই!’ ডাক দিল জো। কোথায় যাচ্ছো তুমি?
যথেষ্ট দেখা হয়েছে স্পেন। জানাল ডেভিড। কয়েকটা ভালো উপদেশও পেয়েছি। চলে যাচ্ছি। এরপরই দেখতে পেল ডেবরার চোখে সরে গেল ব্যথার দ্রুত ছায়া। খানিকটা আত্মশ্লাঘা বোধ করল সে। হান্নাহ আর জো দুজনেই ঘুরে তাকাল ডেবরার দিকে। তাড়াতাড়ি ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নিল ডেবরা। খানিকটা উজ্জ্বল ভাবে হেসে, এগিয়ে এলো সামনে। বাড়িয়ে দিল হাত।
‘তোমার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ ডেভিড। আমি দুঃখিত যে তোমাকে চলে যেতে হচ্ছে। ভালো লেগেছে তোমার সঙ্গ।’ এরপরই গলার স্বর নেমে গেল খাদে। আশা করি যা খুজছো তা পেয়ে যাবে। গুডলাক।’
এরপর দ্রুত ঘুরে নিজের রুমে চলে গেল সে। হাঁ করে তাকিয়ে রইল হান্নাহ। ডেভিডের দিকে বক্র দৃষ্টি হেনে চলে গেল ডেবরার পিছুপিছু।