ডেবরার নীল রঙের সংক্ষিপ্ত বিকিনি দেখে মনে হলো তার যৌবন ঢাকতে ব্যর্থই হয়েছে এ পোশাক। দেহতৃক স্যাটিনের মতো আর ট্যানড় হয়ে রঙ হয়েছে গাঢ় মেহগনি। যদিও কস্টিউমের পেছন দিকে উঁকি দিচ্ছে সাদা ঝলক। ভোয়ালে নেয়ার জন্য নিচু হতে স্পষ্ট বোঝা গেল তা। কোমর আর যথেষ্ট লম্বা পা নিয়ে ডেবরা একজন শক্তিশালী সাঁতারু–ঠাণ্ডা নীল জলে ডেভিডের সাথে একত্রে তাল মেলালো যখন তীর থেকে আধ মাইল দূরে পাথুরে দ্বীপে গেল দু’জনে।
ছোট্ট দ্বীপটা মনে হলো তাদের নিজস্ব। মসৃণ একটা পাথর খুঁজে বের করে পাশাপাশি বসল আঙুলে আঙুল পেঁচিয়ে। লবণাক্ত জলে চুল ভিজে লেপ্টে আছে ডেবরার কাঁধে।
সূর্যের নিচে শুয়ে পুরো দুপুর জুড়ে কথা বলল দু’জনে। একে অপরের সম্পর্কে অনেক কিছুই আছে জানার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান এয়ারফোর্সের একজন তরুণ কর্নেল ছিল ডেবরার বাবা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চলে যায় ইস্রায়েলে। তারপর থেকে সেখানেই আছে। বর্তমানে মেজর জেনারেল। জেরুজালেমের যে অংশে তাদের বাসা, তা প্রায় পাঁচশ বছরের পুরাতন যদিও আনন্দের কোন কমতি নেই সেথায়।
হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির সিনিয়র লেকচারার ডেবরার বিশেষ একটি গোপন ব্যাপার হলো যে সে লিখছে চায়। তার রচিত কবিতার ছোট্ট একটা ভলিউম ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। মুগ্ধ হয়ে গেল ডেভিড। এক কুনইয়ের উপর সোজা হয়ে তাকিয়ে রইল শ্রদ্ধাভরে ডেবরার দিকে। খানিকটা ঈর্ষাও হলো। সামনেটা যেন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে ডেবরা।
সূর্যের কারণে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ডেবরা। ঘন গাঢ় চোখের পাতায় উজ্জ্বল রত্ন পাথরের মতো জমে আছে জলের ফোঁটা। মেয়েটা সুন্দরী নয়, সিদ্ধান্ত নিল ডেভিড। কিন্তু বেশ সুশ্রী আর অনেক, অনেক সেক্সী। তাকে তার পেতেই হবে। এ ব্যাপারে ডেভিডের মাঝে কোন দ্বিধা না থাকলেও মনে হলো তাড়াতাড়ি করা দরকার। ডেবরার কথা উপভোগ করতে লাগল ডেভিড। নিজেকে প্রকাশের জন্য ওর চমৎকার কিন্তু অদ্ভুত একটা পথ আছে। পুরোপুরি মেলে ধরার পর উচ্চারণ হয়ে গেল নিরপেক্ষ যদিও তার আমেরিকান ব্যাকগ্রাউন্ডের ছোঁয়া খানিকটা রয়ে গেল। ডেবরা জানাল যে কবিতা রচনা মাত্র শুরু। ইস্রায়েলে বেড়ে ওঠার উপর একটা উপন্যাস রচনা করবে। খসড়া হয়ে গেছে ইতিমধ্যে আর শোনার পর গল্পটা বেশ চমকপ্রদ লাগল ডেভিডের কাছে। এরপর বলতে লাগল ওর দেশ আর সেখানে বসবাসরতে মানুষের কথা। শুনতে শুনতে মনে হলো কিছু একটা চাঙ্গা হয়ে উঠল ডেভিডের মনের মাঝে নস্টালজিয়া, গভীরে থাকা গোত্রীয় স্মৃতি। আবারো হিংসা হলো তার। কোথা থেকে এসেছে আর কোথায় যাচ্ছে তার নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ডেবরা। ডেবরা জানে কোথার তার জায়গা, কোথায় তার নিয়তি। এই কারণে মেয়েটাকে বেশ শক্তিশালী মনে হলো। ডেবরার পাশে বসে হঠাৎ করেই নিজেকে বেশ তুচ্ছ আর উদ্দেশ্যহীন মনে হলো ডেভিডের।
হঠাৎ করেই চোখ খুলে ফেলল ডেবরা। সূর্যের আলোয় পিটপিট করল একটু। এর পরই দেখল ডেভিডকে।
‘ওহ ডিয়ার। হেসে ফেলল ডেবরা। আমরা খুব দুঃখিত, ডেভিড আমি অনেক কথা বলি?’ মাথা নাড়ল ডেভিড। কিন্তু মেয়েটার হাসি দেখে কোন উত্তর দিল না। ডেবরা ও হয়ে গেল চুপচাপ।
সাবধানে তাকিয়ে রইল ডেভিডের দিকে। মনোযোগ দিল। সূর্যের তেজে শুকিয়ে এলোমেলো হয়ে আছে চুল। তারপরেও বেশ মসৃণ সুন্দর আর গাঢ় কালো। গালের হাড় আর চোয়াল সযত্নে নির্মিত হয়েছে যেন, চোখ জোড়া স্বচ্ছ আর খানিকটা এশিয়াটিক ভাব, ঠোঁট পরিপূর্ণ আর দৃঢ়, লম্বা সুশ্রী নাক।
এগিয়ে এসে ডেভিডের গালে হাত রাখল ডেবরা।
‘তুমি খুব সুন্দর ডেভিড। তোমার মতো সুন্দর কোন মানুষ আমি আর দেখিনি।’
নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে ডেভিড। গাল বেয়ে গলা থেকে বুকে নামল ডেবরার হাত।
আস্তে করে সামনে এসে উষ্ণ আর লবণাক্ত ঠোঁটের স্বাদ নিল ডেভিড।
কিন্তু মসৃণ বাদামী পিঠে কস্টিউমের ভাজ খোলার চেষ্টা করতেই হতাশ হতে হলো ডেভিডকে। তৎক্ষণাৎ শক্ত হয়ে গেল ডেবরার শরীর। ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিল ডেভিডকে।
এরপরও ভদ্রভাবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে ডেবরাকে আলিঙ্গন করে রাখল ডেভিড। কানে কানে কথা বলে চাইল তাকে শান্ত করতে। ধীরে ধীরে সহজ হলো ডেবরা। আবারো হাত রাখল ডেভিডের গলায়।
দক্ষ ডেভিড বিদ্রোহ দমনে অভ্যস্ত। তারপরেও স্তব্ধ হয়ে গেল যখন ডেবরা তার কাঁধে হাত রাখল পুনরায় যখন ডেভিড চেষ্টা করতে চাইল। শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়ায় ভারসাম্য হারিয়ে পাথর থেকে পড়ে গেল ডেভিড। কনুই দিয়ে পড়ে গড়িয়ে গিয়ে থামলো পানির কিনারায়।
রাগান্বিত হয়ে উঠে দাঁড়াল ডেভিড। কিন্তু কস্টিউম ঠিক করে লম্বা পা দিয়ে পাথরের উপর উঠে দাঁড়াল ডেবরা। এরপর এক লাফে পড়ল পানির উপর। ডেভিডকে ডেকে বলল,
‘চলো বিচ পর্যন্ত রেস লাগাই।
চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না ডেভিড। নিজের মতো করে সাঁতার কেটে অনুসরণ করল ডেবরাকে। এরপর গোমড়া মুখে পানি থেকে উঠতেই এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল ডেবরা। তারপরই হেসে ফেলল।
‘মনে হচ্ছে তোমার বয়স মাত্র দশ।‘ কিন্তু কোন কাজ হলো না। চুপচাপ নিজের রুমে হেঁটে চলে গেল ডেভিড।
সন্ধ্যাবেলা ‘২০০১ A.D’ নামে ডিসকোথেক আবিষ্কার করার পরেও চুপচাপ রইল ডেভিড। সমুদ্রের দিকে মুখ করে থাকা ডিসকোটা চালায় কয়েকটা ইংরেজ তরুণ। এমন একটা টেবিলের পাশে জড়ো হলো তারা যেখানে ইতিমধ্যে দুজন বি.ই.এ. হোস্টেস আর কঠিন মুখের দাড়িওয়ালা বসে আছে। গান বাজাছে উচ্চ স্বরে আর সুরটাও এমন যে কিছুতেই শরীর সহজ করা যায় না। হোস্টেস দু’জন প্রায় ধর্মীয় ভক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল ডেভিডের দিকে। তাই দেখে ডেবরা আমন্ত্রণ জানাল ডেভিডকে। নারীসুলভ দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে মজা পেল ডেভিড। নিজের বরফশীতল মনোভাব ঝেড়ে ফেলে নাচতে শুরু করল ডেবরার সাথে।