প্লেন আসারও এক ঘন্টা আগে চলে এসেছে তারা। রেস্টোরেন্টে একটা টেবিলে বসে তাকিয়ে রইল সবাই রানওয়ের দিকে। ডেভিড সাংগ্রিয়ার মাটির কলসের অর্ডার দিল। ডেবরা বসল জোর পাশে আর কথা বলার সময় একটা হাত তুলে দিল তার হাতে। এ ভঙ্গিতে সদ্য আসা জো’র প্রতি ভালোলাগা উঠে গেল ডেভিডের।
ওয়েটার সাংগ্রিয়া এনে রাখতেই ল্যান্ড করল একটা প্রাইভেট প্লেন। তাকিয়ে রইল জো।
নতুন এক্সিকিউটিভ গাষ্ট্ৰিষগুলোর একটা, ওরা বলেছিল যে মেয়েটা সুন্দরী হবে। এর এয়ারক্রাফটের বর্ণনা দেয়া শুরু করল কারিগরী ভাষায় আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখে তাকিয়ে রইল ডেবরা।
‘এয়ারক্রাফট সম্পর্কে কিছু জানো নাকি?” চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ডেভিড।
‘কিছু কিছু। স্বীকার করল জো। কিন্তু উত্তর দিতে চাইল ডেবরা।
‘জো এয়ারফোর্সে আছে।’ গর্বিত স্বরে উত্তর দিল সে। দু’জনের দিকেই তাকিয়ে রইল ডেভিড।
‘ডেবসও, হেসে ফেলল জো। ডেভিড মনোযোগ দিল মেয়েটার দিকে। ‘ডেবরা সিগন্যাল লেফটেন্যান্ট।
‘রিজার্ভে শুধুমাত্র। শুধরে দিল ডেবরা। কিন্তু জো উড়ে বেড়ায়। ফাইটার পাইলট।
‘উড়ে বেড়ায়। বোকার মতো বলল ডেভিড। জো’র পরিষ্কার আর স্থির দৃষ্টি দেখে আন্দাজ করা উচিৎ ছিল যে, এটা ফাইটার পাইলটের চিহ্ন। যেভাবে ও মুস্তাং চালিয়েছে বোঝা উচিৎ ছিল ডেভিডের। যদি সে একজন ইস্রায়েলী পাখি হয়–তাহলে ও অসংখ্য অভিযানে অংশ নিয়েছে। হেল, যতবার তারা উড়ে যায়। অসাধারণ সব কাজ করে। নিজের ভেতরে শ্রদ্ধার ঢেউ টের পেল সে।
‘কোন স্কোয়াড্রনে আছো তুমি–ফ্যান্টমস?
‘ফ্যান্টমস! ঠোঁট বাকাল জো।
‘এটা তো ওড়েই না। এটা কম্পিউটার চালায়। না, আমরা সত্যি উড়ি। তুমি মিরেজের নাম শুনেছো?
চোখ পিটপিট করে মাথা নাড়াল ডেভিভ।
হ্যাঁ। জানাল সে। শুনেছি তাদের সম্পর্কে।
‘ওয়েল, আমি মিরেজ চালাই।’ হাসতে হাসতে মাথা ঝাঁকাতে লাগল ডেভিড।
কী হয়েছে? জানতে চাইল জো। হাসি মুছে গেছে তার।
‘এখানে হাসার কী হলো?
‘আমিও তাই।’ জানিয়ে দিল ডেভিড। আমিও মিরেজ (Mirage) চালাই।’ এই ছেলের সাথে দ্বন্দ্বে যাবার কোন উপায় নেই। হাজারো ঘণ্টা কাটিয়েছি আমি মিরেজে। এবার অবাক হবার পালা জো’র। এরপর হঠাৎ করেই দুজনে একসাথে কথা বলা শুরু করল। ডেবরা একবার এর দিকে একবার ওর দিকে তাকাতে লাগল মাথা ঘুরিয়ে।
আরেক জগ সাংগ্রিয়ার অর্ডার দিল ডেভিড। জো আবার তাকে কিছুতেই বিল দিতে দেবে না। পনের বারের মতো আবারো বলে উঠল, “ওয়েল, ভালোই হলো। ডেভিডের কাঁধে চাপড় মেরে বলে উঠল, ‘কী বলল ডেবস?
দ্বিতীয় জগের মাঝামাঝি এসে অ্যাভিয়েশনের উপর যখন আলোচনা জমে উঠেছে, বাধা দিল ডেভিড। কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি আমরা? প্রায় অর্ধেক স্পেন ভ্রমণ করে চলে এসেছি অথচ এখনো জানি না যে লোকটা কে?
‘লোকটা একটা মেয়ে’ হেসে ফেলল জো। উত্তর পূর্ণ করে দিল ডেবরা।
হান্নাহ। হেসে তাকাল জোর দিকে। ওর ফিয়াসে। হাদাস্মা হাসপাতালে নার্সিং সিসটার আর আসছে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য।’
‘তোমার ফিয়াসে?’ ফিসফিস করে উঠল ডেভিড।
‘ওরা জুন মাসে বিয়ে করতে যাচ্ছে। ডেবরা তাকাল জোর দিকে। পুরো দুই বছর লেগেছে সিদ্ধান্ত নিতে।’
অস্বস্তিতে নড়েচড়ে উঠল জো। হাতে চাপ দিল ডেবরা।
‘তোমার ফিয়াসে?’ আবার জিজ্ঞেস করল ডেভিড।
‘তুমি কেন বারবার একই কথা বলছো?’ জানতে চাইল ডেবরা। ডেভিড প্রথমে জোর দিকে নির্দেশ করে তাকাল ডেবরার দিকে।
‘কী, শুরু করল সে, আমি বুঝতে চাইছি। কে কী হচ্ছে এসব?’
হঠাৎ করেই বুঝতে পারল ডেবরা। হাঁ করে তাকিয়ে থেকে মুখ ঢাকল দুই হাতে। চোখ জ্বলছে। তুমি মানে তুমি ভেবেছো? ওহ্ না। বিড়বিড় করে উঠল ডেবরা। জোর দিকে তারপর নিজেকে দেখিয়ে বলে উঠল ‘এটাই ভেবেছো তুমি? মাথা নাড়ল ডেভিড।
‘ও আমার ভাই।‘ ধিক্কার দিয়ে উঠল ডেবরা। জো আমার ভাই, ইউ ইডিয়ট। যোসেফ ইস্রায়েল মোরদেসাই আর ডেবরা রুথ মোরদেসাই-ভাই বোন।
প্রথম নজরে দেখলে হান্নাহও বেশ বড়সড় একটি মেয়ে। উজ্জ্বল তামাটে রঙের চুল আর সোনালি তিল ভর্তি মুখমণ্ডল। জো থেকে খুব বেশি হলে এক থেকে দুইঞ্চি পরিমাণ খাটো। কিন্তু কাস্টমস গেইট দিয়ে বের হয়ে আসার পর সহজেই তাকে তুলে নিল জো, মেয়েটার পা উঠে গেল মাটি থেকে, বিশাল বক্ষবন্ধনে আবদ্ধ হলো দু’জনে।
তাই ব্যাপারটা স্বাভাবিক দেখল যখন তারা চারজন একসাথে রয়ে গেল। কাকতালীয়ভাবে সবার লাগেজ এঁটে গেল মুস্তাংয়ে। পেছনের সিটে প্রায় জোর কোলের উপর বসে রইল হান্নাহ।
‘আমাদের হাতে আছে এক সপ্তাহ। জানাল ডেবরা। পুরো একটি সপ্তাহ। কী করব আমরা এটি নিয়ে?’
সকলে একমত হলো যে টোরেমোলিনস শেষ। এটা বেশ অনেক দূর দক্ষিণে। আর যখন থেকে মিশেনার দ্যা ড্রিফটারস রচনা করেছে তখন থেকেই এটা এলেবেলে মানুষদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
‘প্লেনে একজনের সাথে কথা হয়েছে আমার। উপকূলের কাছে একটা জায়গা আছে। নাম কোলেরা। সীমান্তের কাছেই।‘
পরের দিন সকালবেলার মাঝামাঝি সময়ে কোলেরা পৌঁছাল সকলে। আর সিজনের একেবারে প্রথম দিকে হওয়ায় ছোট্ট হোটেলে সুন্দর রুম খুঁজে পেতে কোন সমস্যা হলো না। প্রধান রাস্তার পাশেই হলো হোটেল। মেয়েরা রুম শেয়ার করতে রাজি হলো। কিন্তু ডেভিড নিজের জন্য আলাদা রুম নিতে চাইল। ইতিমধ্যে ডেবরাকে নিয়ে নানান পরিকল্পনা করে ফেলেছে সে।