মাথা নাড়ল ডেভিড।
না।’ হেসে ফেলল। আমি অর্ধ বিশ্বাসী, বিনা পালনকারী–একেশ্বরবাদী, বড় হয়ে উঠেছি প্রোটেস্ট্যন্ট খ্রিস্টান ঐতিহ্যনুযায়ী।
তাহলে হিব্রু কেন শিখলে?
‘আমার মা চাইতো, তাই। ব্যাখা করল ডেভিড। অনুভব করল পুরোন অপরাধবোধ।
‘আমি একদম ছোট ছিলাম যখন আমার মাকে খুন করা হয়। তারপর থেকে আর শেখা হয়নি। মা চলে যাবার পর ব্যাপারটা আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।’
‘তোমার মা জোর দিল ডেবরা, এগিয়ে এলো ডেভিডের দিকে, উনি কী ইহুদি ছিলেন?
‘হত্যা’, একমত হলো ডেভিড, কিন্তু বাবা ছিল প্রোটেস্ট্যান্ট। নরক ভেঙ্গে পড়েছিল যখন তারা বিয়ে করেছিল। সবাই এর বিরুদ্ধে ছিল কিন্তু আমার বাবা-মা পিছপা হয়নি।’
ডেবরা জো র দিকে তাকাল।
‘শুনেছে–ও আমাদের মতো একজন।
“ওহ বাদ দাও! হাসতে হাসতে বাধা দিল ডেভিড।
মাজালটোভ,’ বলে উঠল জো, মাঝে মাঝে জেরুজালেমে এসে আমাদের সাথে দেখা করো।
‘তোমারা ইস্রায়েলী? আগ্রহ জন্মালে ডেভিডের মাঝে।
‘আমরা দুজনেই।’ গর্ব আর সন্তুষ্টি ফুঠে উঠল ডেবরার স্বরে।
‘আমরা এখানে ছুটি কাটাতে এসেছি।
“নিশ্চয় মজাদার দেশ হবে এটা।’ দ্বিধা ফুটলো ডেভিডের কণ্ঠে।
‘জো যেমনটা বলেছে, সময় বের করে আসো না একবার। পরামর্শ দিল ডেবরা। ফিরে আসার অধিকার আছে, তোমার। এর পরই আবার বিষয়টা পরিবর্তন করে ফেলল। এই মেশিনটা কী এতটুকু গতিতেই দ্রুত ছুটতে পারে? সাতটার মাঝে বার্সেনোলায় পৌঁছাতে হবে আমাদেরকে।
সবার মাঝে খানিকটা সহজ ভাব এলো, মনে হলো কোন কোন অদৃশ্য বাধা ভেঙ্গে পড়েছে, মেয়েটা যেন কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শহরের বাইরে চলে এসেছে তারা। সামনের খোলা রাস্তা চলে গেছে এব্রো উপত্যকা হয়ে সমুদ্রের দিকে।
দয়া করে সিগারেট নেভাও আর সিট বেল্ট বেঁধে নাও।’ সাবধান বাণী দিয়ে গতির ঝড় তুলল ডেভিড।
চুপচাপ হাত কোলে নিয়ে ডেভিডের পাশে বসে রইল ডেবরা। তাকিয়ে রইল সামনে বাকের দিকে। মুস্তাংয়ের শরীরের নিচে এগিয়ে চলেছে সোজা মসৃণ রাস্তা। মুখে অল্প একটু আনন্দের হাসি, চোখে সোনালি আলোর নাচানাচি আর বুঝে গেল ডেভিড–যে তারই মতো গতিপাগল হলো এই মেয়েটা।
চারপাশের সবকিছু বিস্মৃত হয়ে গেল ডেভিড। মনে রইল কেবল পাশে বসা মেয়েটার কথা। একই সাথে ঠিকঠাক এগিয়ে নিয়ে চলল গর্জনরত মেশিন।
শুকনো ধূলিধূসরিত উপত্যকায় একের পর বাঁক আসছে। সাপের মতো এঁকেবেঁকে মুস্তাং নিয়ে এগিয়ে চলেছে ডেভিড। হুইল থেকে গিয়ার লেভেল নাচানাচি করছে, হাত-পায়ের আঙুল আর গোড়ালি দ্রুত প্যালের উপর জায়গা বদল করছে পুরো ব্যাপারটার উত্তেজনায় উঁচু স্বরে হেসে উঠল ডেবরা।
গ্রামের ক্যান্টিন থেকে চিজ, রুটি আর হোয়াইট ওয়াইন কিনে এনে পাথরের ব্রিজের উপর বসে লাঞ্চ শেষ করল তিনজনে। নিচে বয়ে চলল নদী। পর্বত থেকে নেমে এসেছে দুধসাদা তুষারকণা।
পাশাপাশি বসে থাকায় ডেভিডের উরুতে ডেবরার ছোঁয়া লাগল। উষ্ণ বোধ হলো ডেভিডের। ঠাণ্ডা বাতাস সত্ত্বেও মনে হলো ডেবরার গাল দুটো একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
কিন্তু ডেভিড অবাক হলো জোর আচরণে। মনে হলো ডেভিডের কাজকর্ম নিয়ে বা ডেবরার মিশতে চাওয়ার চেষ্টার দিকে ওর কোন নজর নেই। বরঞ্চ বাচ্চাদের মতো আনন্দ করছে নিজের পানিতে ছুটে চলা ট্রাউটের উপর পাথর ফেলে। হঠাৎ করেই ডেভিডের মনে হলো যে জো খানিকটা বাধা দিলে ভালো হতো, ডেভিড উপভোগ করতে নিজের বিজয়-এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছে সে।
আরো এক টুকরো সাদা চিজের উদ্দেশে ডেবরার দিকে ঝুঁকে এলো ডেভিড। জো মনে হলো খেয়ালই করল না।
কাম অন, যুদ্ধ করো, এমনি এমনি বসে থেকো না। মনে মনে বলল ডেভিড।
নিজেকে পরীক্ষা করতে চাইল সে। ছেলেটা বেশ বড়সড় আর শক্তিশালী। আর হাবভাব দেখে ডেভিড বুঝতে পারল যে জো নিজের প্রতি আস্থাশীল আর তার সাথে সমতুল্য মুখমণ্ডল মাংসল আর এতত একটা খারাপ নয়। ডেভিড জানে যে কোন কোন নারী এই রকম পছন্দ করে আর জোর অলস আর ধীর হাসি দেখে ভোলার কিছু নেই—চোখ দুটো দ্রুত আর তীক্ষ্ম।
‘তুমি ড্রাইভ করতে চাও, জো? হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করে বসল ডেভিড। হালকা হাসিটা তেলের মতো ছড়িয়ে চকচক করে উঠল জোর চেহারা। কিন্তু চোখে সন্দেহ।
কিছু মনে করবে না যদি আমি ড্রাইভ করি?’ জিজ্ঞেস করল জো। কিন্তু সংকীর্ণ পিছনের সিটে বসে নিজের কাজে আফসোস হলো ডেভিডের। প্রথম পাঁচ মিনিট সংযত ভাবে গাড়ি চালালো জো। ব্রেকে স্পর্শ করে ঠিকঠাক দেখে নিল, গিয়ার দিয়ে ট্রাভেলের মজা নিতে চাইল।
‘ভয় পেও না। জানাল ডেভিড। কপাল কুঁচকে মনোসংযোগ করল ডেভিড। এরপর মাথা নেড়ে দৃঢ় হলো হাত। নব উদ্যমে গাড়ি চালানো শুরু করল। মুখ দিয়ে ফুস করে বাতাস ছাড়ল ডেবরা। প্রথম বাকের মুখে এসেই এমন ভাবে গাড়ি কাত হলো যে ডেভিডের ডান পা অবচেতনে ব্রেক প্যাডাল খুঁজতে গিয়ে ব্যথা পেল আর গলার কাছে মনে হলো শ্বাস আটকে গেল।
বার্সেলোনা বিমানবন্দরের বাইরে পার্কিং লটে জো যখন গাড়ি পার্ক করে ইঞ্জিনের চাবি বন্ধ করল, কয়েক মিনিট নিশ্চুপ রইল সবাই। এরপর আলতে করে বলে উঠল ডেভিড।
‘সন অব আ গান!
হেসে ফেললো সবাই। মনে মনে অনুশোচন হলো যে সে মেয়েটাকে ছিনিয়ে নেবে তার কাছে থেকে আস্তে আস্তে ছেলেটাকে পছন্দ করা শুরু করল সে। ছেলেটার কথাবার্তার অলস ভঙ্গি, চলাফেলা, হাসিতে আনন্দ খুঁজে পেল। নিজের প্রতিজ্ঞা আরো দৃঢ় করল সে।