পরের দিন প্রথমবারের মতো অধৈৰ্য্যভাব দেখা গেল ডেবরার মাঝে। ‘ওরা আমাকে কখন ছাড়বে হাসপাতাল থেকে ডার্লিং? আমি পুরো সুস্থ আছি। এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকাটা ভয়ঙ্কর। আমি জাবুলানিতে ফিরে যেতে চাই অনেক কিছু করতে হবে আমাকে, অনেক কাজ পড়ে আছে। এরপর হেসে উঠল খিকখিক করে, দশ দিন হয়ে গেছে এখানে বন্দী আমি। এভাবে সাধু জীবন কাটাতে অভ্যস্ত নই আমি। আর তোমাকে সত্যি বলছি, আমি পারছি না তোমাকে ছাড়া।
দরজা বন্ধ করে দেবো?’ পরামর্শ দিল ডেভিড।
‘গড, আমি একটা জিনিয়াসকে বিয়ে করেছি।’ হাসতে লাগল ডেবরা। এরপর বলল, ‘প্রথম বারের মতো টেকনিকালার কিছু ঘটল আমার সাথে। ভালোই লাগছে।’
সেই দিন সন্ধ্যাবেলা রুবি ফ্রাইডম্যান আর ব্রিগ স্যুইটে অপেক্ষা করছিল ওর জন্য। ফেরার সাথে সাথে ধরল ডেভিডকে।
‘অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছ তুমি। ডেবরাকে আরো আগেই বলা উচিৎ ছিল। দৃঢ়ভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করল ব্রিগ। তিনি ঠিকই বলছেন, ডেভিড। তুমি ঠিক করছ না। ওকে জানানো উচিৎ। মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারও আছে। জানাল ফ্রাইডম্যান। সুযোগ পেলেই ওকে জানাবো আমি।’ গোয়ার্তুমির স্বরে বলল ডেভিড।
‘কখন হবে সেটা?’ জানতে চাইল ব্রিগ। রাগের চোটে ঝিক করে উঠল স্বর্ণের দাঁত।
শীঘ্রই।
‘ডেভিড, বোঝাতে চাইল রুবি, এটা এখন যে কোন সময়ে ঘটতে পারে। ও বেশ উন্নতি করেছে এরই মাঝে। আমার আশার থেকেও শীঘ্ন ঘটছে। ব্যাপারটা।
‘আমি দেখবো কী করা যায়।’ বলে উঠল ডেভিড। প্লিজ আমাকে চাপ দিবেন না। আমি তো বলেছি আমি বলব। আর আমি তা করবও। শুধু আমাকে সময় দিন।
“ঠিক আছে। ক্ষেপে গেল ব্রিগ।
‘আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত সময় দেয়া হল তোমাকে। যদি এর ভেতরেও না বল, তাহলে পরবর্তী দায়িত্ব আমার।’
‘আপনি তো একটা নিষ্ঠুর, তাই না? তিক্ততা ঝরে পড়ল ডেভিডের কণ্ঠ দিয়ে। সবাই বুঝতে পারল কতটা রেগে গেছে ব্রিগ। বহু কষ্টে নিজেকে দমন করল সে।
‘আমি বুঝতে পারছি তোমার কথা। সাবধানে বলে উঠল ব্রিগ। ‘আমিও সহানুভূতি প্রকাশ করছি এ ব্যাপারে। কিন্তু আমার প্রথম চিন্তা ডেবরাকে নিয়ে। তুমি তোমার কথাই ভাবছো। কিন্তু আমি চাই না ও আর আঘাত পাক। এমনিতেই যথেষ্ট সহ্য করেছে। আর নয়। তাকে জানিয়ে দাও এবার।’
হ্যাঁ।’ মাথা নাড়ল ডেভিড। সমস্ত যুদ্ধের মনোভাব চলে গেছে।
‘আমি জানাবো।
কখন?” আবারো চাপ দিল ব্রিগ।
কাল। জানাল ডেভিড। আগামীকাল সকালে ওকে জানাবো আমি।
দিনটা শুরু হলো বেশ উজ্জ্বলতা আর উষ্ণতা নিয়ে। তার রুমের নিচের বাগানে দেখা গেল রঙের খেলা। নিজের স্যুইটে নাশতা খেতে খেতে সকালের সব খবরের কাগজ পড়ে ফেলল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এরপর যত্ন করে পোশাক পড়ল। গাঢ় রঙের স্যুট, লাইলাক শার্ট, এরপর যখন বের হতে যাবে, তখন আয়নায় দেখল নিজেকে।
‘অনেক দিন হয়ে গেছে–তারপরেও তোমার সাথে সহজ হতে পারছি। আমি।’ আয়নায় অবয়বকে বলে উঠল সে।
‘শুধু প্রার্থনা করি কেউ একজন যে তোমাকে ভালোবাসে সে পারবে।
পোর্টিকোর নিচে দারোয়ান ক্যাব ডেকে রেখেছে তার জন্য। পাকস্থলীতে গুড়গুড় ভাব নিয়ে পিছনের সিটে উঠে বসল ডেভিড। সকালবেলা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে গেল গাড়ি। হাসপাতালের প্রধান প্রবেশ মুখে নামল সে। তাকাল ঘড়ির দিকে। এগারোটা বেজে কয়েক মিনিট। লবি পার হয়ে এলিভেটরে যাবার সময় আজ মনে হয় খেয়াল করল না উৎসাহী দৃষ্টিগুলোর প্রতি।
ডেবরার ফ্লোরের ভিজিটরস রুমে ওর জন্য অপেক্ষা করছে ব্রিগ। করিডোরে বের হয়ে এলো ব্রিগ। লম্বা, সিভিলিয়ান স্যুটে অচেনা লাগল তাকে।
‘আপনি কী করছেন এখানে? জানতে চাইল ডেভিড। কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ব্রিগের এ সময় এখানে থাকাটা।
‘আমি ভাবলাম সাহায্য করি তোমাকে।
‘ভালোই ভেবেছেন!’ বিদ্রুপাত্মকভাবে বলে উঠল ডেভিড। নিজের রাগ লুকানোর কোন চেষ্টা করল না। এ ব্যাপারটাকে পাত্তা দিল না ব্রিগ। তুমি কী চাও আমি তোমার সাথে থাকি?”।
‘না। কথা বলতে বলতে অন্য দিকে চলে যেতে উদ্যত হল ডেভিড।
‘আমি সব ঠিক করে নেব। ধন্যবাদ। করিডোর ধরে হাঁটতে লাগল সে। ডেভিড! নরম স্বরে ডেকে উঠল ব্রিগ। একটু দোনোমোনো করে ফিরে তাকাল ডেভিড। কী? জানতে চাইল সে।
দীর্ঘক্ষণ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ল ব্রিগ। না, কিছু না। তাকিয়ে দেখল দীর্ঘদেহী তরুণ, দানবীয় মাথা নিয়ে গটগট করে হেঁটে ঢুকলো ডেবরার রুমে। খালি করিডোরে শোনা গেল পায়ের শব্দ।
সমুদ্রের দিক থেকে আসা হালকা বাতাসে আরামদায়ক উষ্ণ হয়ে আছে সকালবেলাটা। খোলা জানালার কাছে নিজের চেয়ারে বসে আছে ডেবরা। বাতাস বয়ে নিয়ে আসছে পাইনের সুগন্ধ। এর সাথে মিশে গেছে সমুদ্রের মৃদু গন্ধ। চুপচাপ আত্মমগ্ন হয়ে কিছু একটা ভাবছে মেয়েটা। অথচ আজ দেরি করে এসেছে ডেভিড। একটু আগেই রুবি ফ্রাইডম্যানের সাথে কথা হয়েছে। রাউন্ড দিতে এসেছিল ডাক্তার, ডেবরাকে জানিয়ে গেছে যে এক সপ্তাহের মাঝে রিলিজ দেয়া হবে তাকে।
সকালবেলায় উষ্ণতার সাথে কেমন একটা ঘুম ঘুম আবেশও জড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে আপন মনে কোকুনের মতো করে আলোর খেলা দেখছে। তদ্ৰামতো এলো চোখে।
এভাবেই দেখতে পেল ডেভিড। পাশে পা ছড়িয়ে বসে আছে ডেবরা চেয়ারে। জানালা দিয়ে আসা আলো পড়েছে চোখে মুখে। মাথার পাগড়ি পরিষ্কার আর গায়ের পোশাক বিয়ের গাউনের মতোই সাদা।