‘সম্ভবত ওখানেই ডেবরাকে ডেকে নিতে পারেন। জানাল ডুগান।
‘ভালোই হলো। ও রোম পছন্দ করবে। উত্তরে জানাল ডেভিড।
‘ওর সাথে আপনিও আসবেন ডেভিড?’
না।’ সাবধানে উত্তর দিল ডেভিড। ও একাই আসবে।’
‘ও একা আসতে পারবে? চিন্তিত শোনাল ববির কণ্ঠস্বর।
‘এখন থেকে নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারবে সে।
‘আশা করি আপনি ঠিক কথা বলছেন। দ্বিধায় পড়ে গেল ববি।
‘আমি ঠিক বলছি। তাড়াতাড়ি বলে উঠল ডেভিড। আরেকটা কথা। লেকচার টুর, সে ব্যাপারটা?
‘ওরা তো দরজায় কড়া নাড়ছে। যেমনটা আমি বলেছিলাম পিস্তলের চেয়েও হট হয়ে গেছে এখন সে।
‘স্ক্রিপ্ট হয়ে গেলে কাজে ঠিক করে দেবেন।
‘হেই, ডেভিড। এই হলো ব্যবসা। এখন আমরা সত্যি গ্যাস নিয়ে রান্না করছি। আমরা আপনার ছোট্ট মেয়েটাকে সম্পদ বানিয়ে ফেলবো।’
‘তাহলে তাই করুন। মন্তব্য করল ডেভিড। ওকে বড় করে তুলুন। ব্যস্ত করে ফেলুন। যেন চিন্তা করার অবসর না পায়।
‘আমি ব্যস্ত রাখবো ওকে। এরপর মনে হল যেন কিছু একটা আঁচ করতে পারল। বলে উঠল, ‘কোন সমস্যা হয়েছে ডেভিড? কোন ঘরোয়া সমস্যা? কথা বলতে চান এ ব্যাপারে?
‘না, আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না। আপনি শুধু ওর খেয়াল রাখবেন। ভালো ভাবে।
“ঠিক আছে। নম্র হয়ে গেল ববির গলা। আর ডেভিড’
কী?’
‘আমি দুঃখিত। যাই ঘটুক না কেন আমি দুঃখিত।
“ঠিক আছে। প্রায় সাথে সাথে আলোচনা থামিয়ে দিল ডেভিড। হাত কাঁপতে শুরু করায় টেলিফোনের রিসিভার পড়ে গেল হাত থেকে। চিড় ধরল প্লাস্টিকের গায়ে। এভাবেই সেটাকে ফেলে রেখে হোটেল থেকে বের হয়ে এলো ডেভিড। ঘুরে বেড়ালো ঘুমন্ত শহরের রাস্তায়। ভোর হবার আগে ফিরে এলো রুমে।
রঙের প্রবাহ ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আকৃতি নিতে লাগল। উজ্জ্বলতা দেখে প্রথমবার ভয় পাওয়ার মতো ব্যাপার আর ঘটল না। এরপর ধূসর অন্ধত্ব কেটে গিয়ে মাথা যেন ভরে গেল তুলোর বলে। নতুন ধরনের সৌন্দর্য আর উজ্জ্বলতা অনুভব করল ডেবরা। প্রথম কয়েকদিনের মাঝে মাথায় সার্জারির প্রাথমিক অস্বস্তি কেটে গেল। কেমন একটা ভালো থাকার মতো বোধ তৈরি হল তার মাঝে। কেমন একটা উচ্চাশা জেগে উঠল মনের মাঝে। মনে পড়ে গেল ছোটবেলাকার ছুটির দিনের জন্য অপেক্ষার কথা।
মনে হল মনের গহীনে কেউ একজন বলে উঠল যে তার দষ্টিশক্তি ফিরে আসছে। কিন্তু চেতন মনে পৌঁছালো না, এ সংবাদ। বুঝতে পারল পরিবর্তন ঘটেছে কোথায়। যাই হোক অন্ধকারের চেয়ে এই উজ্জ্বলতাকে স্বাগত জানাল সে।
কিন্তু সে জানে না রং আর কল্পনার পর আসবে আকৃতি আর বাস্তবতা।
প্রতিদিন ডেভিড অপেক্ষা করে থাকে যে ডেবরা এমন কিছু একটা বলবে যে বোঝা যাবে দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসার ব্যাপারটা, বুঝতে পারছে সে। আশা আর সতর্কতা একসাথে দুলে ওঠে মনের মাঝে কিন্তু কিছুই বলে না ডেবরা।
হাসপাতাল যতটুকু মেনে নেয় ততটুকুর পুরো সময়টাই ডেবরার সাথে কাটায় ডেভিড। প্রতিটি মিনিট চেষ্টা করে ধরে রাখতে। যেমন করে কৃপণ গুণে। গুণে পয়সা খরচ করে। ডেবরার আনন্দ আর উত্তেজনা সঞ্চারিত তার মাঝে ও। একসাথে হাসে দু’জনে। কল্পনা করে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই একসাথে ফিরে যাবে জাবুলানিতে।
কোন দ্বিধা নেই ডেবরার মাঝে। খুশির উপর ছায়া ফেলল না কোন আশংকা। আস্তে আস্তে ডেভিডও ভাবতে লাগল যে বোধ হয় এটাই সত্যি। তাদের আনন্দে কেউ কখনো নজর দিবে না, ভালোবাসা কখনো কমে যাবে না। যত আঘাতই আসুক না কেন? একসাথে হলেই এ বোধ অনুভব করে ডেভিড।
এরপরেও ঠিক করতে পারে না সে যে কখন বলবে ডেবরাকে। মনে হয় এখনো সময় আছে হাতে। দুই সপ্তাহ, রুবি ফ্রাইডম্যানের কথা মতো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বুঝতে যে ডেবরা আদৌ পুরো দেখতে পাচ্ছে কিনা। তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ আনন্দটুকু। কাঙালের মতো এই সবটুকু নিয়ে নিতে চায় ডেভিড।
একাকী রাতগুলোতে ভয়ঙ্কর সব চিন্তা ঘুমাতে দেয় না তাকে। মনে পড়ে যায় প্লাস্টিক সার্জন একবার বলেছিল যে তারা তাকে খানিকটা সহনীয় করে দিতে পারবে সার্জারির মাধ্যমে। তাই ফিরে গিয়ে আবারো ছুরির নিচে শুয়ে পড়ার কথা মনে এলো। যদিও কেঁপে উঠল সারা শরীর এহেন সম্ভাবনায়। হতে পারে ডেবরা তাহলে আরেকটু কম ভয়ঙ্কর একটা চেহারা দেখবে।
পরের দিন আদারলী স্ট্রিটে শত শত আগ্রহী চোখ উপেক্ষা করে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেল ডেভিড। উইগ ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা প্রাথমিক ভয় কাটিয়ে উঠে তাকে নিয়ে গেল গম্বুজাকৃতির মাথা ঢাকার জন্য উইগ খুঁজে দিতে।
নিজের ক্ষত-বিক্ষত জমে যাওয়া মুখের উপর পরার জন্য কোকড়া চুলের পরচুলা পছন্দ করে নিল ডেভিড। প্রথম বারের মতো আয়নায় নিজেকে দেখে হেসে ফেলল সে। যদিও ব্যাপারটা হয়ে উঠল আরো ভয়ঙ্কর। ঠোঁট বিহীন মুখে মনে হল ফাঁদে আটকা পড়া পশু।
‘গড!’ হেসে ফেলল ডেভিড।
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনও হার মেনে যাবে।
নিজের অনুভূতির সাথে যুদ্ধ করতে থাকা সেলস গার্ল হিমশিম খেল অস্বস্তি চাপতে গিয়ে।
ডেভিডের মনে হল একথা জানায় ডেবরাকে, কৌতুক করে বলে আর একই সাথে তাকে দেখার জন্য তৈরি করে নেয়। কিন্তু কেন যেন কোন শব্দ খুঁজে পেল না সে। আরো একটা দিন কেটে গেল। কিছুই ঘটল না। শুধুমাত্র ফুরিয়ে আসতে লাগল একসাথে থাকার কাল।