কত সময়?
‘এটা এমন যে ধরো তুমি যদি ঠিক ভাবে না বসো তাহলে ঝিঁঝি ধরবে পায়ে। এরপর রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হলে আরো খানিকক্ষণ কাটলে তারপর স্বাভাবিক হবে পুরোপুরি।
কতক্ষণ পরে?’ আবারো একই প্রশ্ন করল ডেভিড।
‘সে জেগে উঠার পরপরই। নার্ভ সচল হয়ে উঠবে। সব ধরনের সংকেত পাঠাতে থাকবে ব্রেইনের মাঝে। রং আর আকার দেখতে পাবে যেন নেশার ঘোরে দেখা। তারপর স্থির হতে সময় লাগবে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস আমার তাই ধারণা—এরপর পরিষ্কার হবে সবকিছু। নার্ভ পুরোপুরি সেরে উঠে নিজের কাজ করা শুরু করবে। এরও পরে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে সে।’
‘দুই সপ্তাহ। বলে উঠল ডেভিড। মনে হলো বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেল
‘তুমি তাকে জানিয়ে দিও শুভ সংবাদটা। আবারো খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল রুবি। আবারো ডেভিডের কাঁধে চাপড় মারার জন্য উদ্যত হয়েও নিয়ন্ত্রণ করল নিজেকে। কত সুন্দর একটা উপহার ওকে দিতে পারছো তুমি।
না।’ উত্তর দিল ডেভিড। আমি এখন তাকে জানাব না। পরে কোন এক উপযুক্ত সময়ে।
‘তোমাকে প্রথমে ওকে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে প্রাথমিক ব্যাপারগুলো। নয়তো আঁতকে উঠবে ও।
‘আমরা ওকে শুধুমাত্র এটুকু বলব যে এটা অপারেশনের পরের এক ধরনের প্রভাব। এর সাথে মানিয়ে নেয়ার পরে পুরো ব্যাপারটা বলব তাকে।
‘ডেভিড, আমি–’ সিরিয়াস ভঙ্গিতে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল রুবি। কিন্তু থেমে গেল বিভৎস মুখোশের আড়ালে নীল চোখ দুটো জ্বলে উঠতে দেখে।
‘আমি জানাবো ওকে! কণ্ঠস্বরে এমন কিছু একটা ছিল যে এক পা পিছিয়ে গেল রুবি। আমিই জানাবো ওকে যখন সময় হবে। এটাই ছিল শর্ত।
.
অন্ধকারের মাঝে জ্বলে উঠল ছোট্ট হলুদ একটা আলো। মনে হল অনেক দূর থেকে দেখছে সে। এরপর আলোটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। এরপর সেগুলো আবার ভেঙ্গে গেল। এভাবে পুরো পৃথিবী মনে হল তারায় ভরে গেল। উজ্জ্বল তারাগুলো জ্বলতে লাগল, নিভতে লাগল। এরপর হলুদ থেকে রং বদলে হয়ে গেল উজ্জ্বল সাদা। মনে হল দ্যুতি ছড়াতে লাগল হীরা। এরপর হয়ে গেল নীল সমুদ্রের বুকে সূর্যের মতো। এরপর নরম সবুজ, মরুভূমির মতো সোনালি-অন্তকালবিহীনভাবে একের পর এক দেখা দিতে লাগল রং। বদলে যাচ্ছে, বেঁকে-চুরে ভেঙ্গে যাচ্ছে, একে অন্যের সাথে মিশে যাচ্ছে।
এরপর—আকৃতি পেল রং। শক্তিশালী চাকার মতো ঘুরতে লাগল, এরপর মনে হল বিস্ফোরিত হয়ে ঝরে পড়তে লাগল নদীতে। এরপর আবারো মনে হল আলোর ঝরণা দেখা গেল।
আশ্বর্য হয়ে গেল ডেবরা রং আর আকৃতির খেলা দেখে। সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে গেল। এরপর যখন আর সহ্য করতে পারল না, চিৎকার করে উঠল।
সাথে সাথে অনুভব করল হাতের স্পর্শ। শক্তিশালী পরিচিত হাত। আর সেই কণ্ঠস্বর। ভরসা আর ভালোবাসার কেন্দ্র।
‘ডেভিড।’
‘আস্তে ডার্লিং, তোমার রেস্ট দরকার।’
‘ডেভিড। ডেভিড।’ কিছুই বলতে পারছে না ডেবরা। নিজের গলার মাঝে কী যেন দলা পাকিয়ে উঠে এলো বুঝতে পারল। এত রং, আকৃতি, বৈচিত্র্য দেখে অভিভূত হয়ে গেল সে।
‘আমি এখানে, ডার্লিং। এখানেই আছি।
কী হচ্ছে আমার সাথে, ডেভিড? কী হচ্ছে?
‘তুমি ঠিক আছে। অপারেশন সফল হয়েছে। তুমি একদম ঠিক আছে।
‘রং।’ আবারো চিৎকার করে উঠল ডেবরা। আমার পুরো মাথা ভরে গেছে। আমি কখনো আর এমনটা দেখিনি।’
‘এটা অপারেশনের প্রভাব। বোঝা যাচ্ছে সফল হয়েছে। ওরা সারিয়ে দিয়েছে সমস্যা।
‘আমার ভয় লাগছে ডেভিড।
না, ডার্লিং। ভয় পাবার কিছু নেই।
‘আমাকে ধরো ডেভিড। আমাকে ধরে রাখে। আস্তে আস্তে নির্ভার হল ডেবরা। সমুদ্রের মতো অন্তহীন ঢেউ আর রঙের মাঝে ভেসে বেড়াতে লাগল। এরপর বিস্ময় মেশানো আনন্দ নিয়ে মেনে নিল ব্যাপারটা।
‘এটা বেশ সুন্দর ডেভিড। আমার আর ভয় লাগছে না। তুমি ধরে রাখায় আর ভয় লাগছে না।’
‘আমাকে বলো কী দেখছো?
বলতে পারব না। বর্ণনা করা অসম্ভব। আমি শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘চেষ্টা করো।’ বলে উঠল ডেভিড।
.
স্যুইটে একা বসে আছে ডেভিড। মধ্যরাতের পর নিউইয়র্ক থেকে ফোন এলো। অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করছিল সে।
‘রবার্ট ডগান বলছি।’ ব্যবসায়ীর মতো কণ্ঠস্বরে কথা বলে উঠল ববি
‘ডেভিড মরগ্যান।
‘কে?
‘ডেবরা মোরদেসাইয়ের পতি।’
‘ওয়েল, হ্যালো ডেভিড।’ বদলে গেল এজেন্টের গলার স্বর। ভাল লাগছে আপনার সাথে কথা বলে। কেমন আছে ডেবরা? স্পষ্ট বোঝা গেল যে ডেভিডের উপর ববির আগ্রহ শুরু ও শেষ হবে ডেবরাকে দিয়ে।
‘এই কারণেই আমি ফোন করছি। একটা অপারেশনের কারণে এখন হাসপাতালে আছে সে।
‘গড! তেমন সিরিয়াস নয় তো?’
‘ও ভালো হয়ে যাবে। কয়েকদিনের মাঝেই। আর কয়েক সপ্তাহের মাঝে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।’
‘শুনে ভালো লাগল ডেভিড।’
‘দ্যাটস গ্রেট!’
‘দেখুন আমি চাই আপনি এগিয়ে যান আর আ প্লেস অব আওয়ার ওন এর জন্য স্ক্রিপ্ট লেখার কাজের ব্যাপারে কথা-বার্তা শুরু করুন।
‘সে এটা করবে?’ ছয় হাজার মাইল দূরে বসেও ববির খুশি টের পেল ডেভিড।
‘ ও এটা করবে।
‘এটা তো বেশ ভালো খবর, ডেভিড।
‘একটা ভালো কন্ট্রাক্ট লিখে দেবেন।
‘এটা নির্ভর করে। আপনার এই লিটল গার্ল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি লক্ষ্য রাখবো যেন ওর কোন ক্ষতি না হয়। সত্যি!
কতদিন লাগবে এ কাজ শেষ হতে?
ছয় মাস। অনুমান করল ববি।
‘যে প্রযোজক এটা করবে তিনি এখন রোমে একটা ছবি নিয়ে ব্যস্ত।