এখন এখানে পাওয়া গেছে অপরিচিত অংশটা। এক্স-রে প্লেটগুলো আরেকবার আমরা দেখতে পারি সিস্টার?
দ্রুত এক্স-রে স্ক্যানারের ছবি উঠল। আবারো উত্তেজিত হয়ে উঠল শিক্ষার্থী দু’জন। তাড়াতাড়ি নিজের সিগারেটে টান দিল মেয়েটা।
‘ধন্যবাদ।
আবারো অপারেশন টেবিলের চিত্র ভেসে উঠল। এবার ডেভিড দেখতে পেল সাদা হাড়ের মাঝে গেঁথে আছে কালো একটি অংশ।
‘আমার মনে হয় আমরা এটাই খুঁজছি। তাই না ডা, ফ্রাইডম্যান?
হ্যাঁ। আমার মনে হয় আপনি এটা নিয়ে আসুন।
খুব সাবধানে লম্বা স্লেনডার স্টিল গাঢ় রঙের ফ্রাগমেন্টের চারপাশে গর্ত করে অবশেষে তুলে আনল এটাকে। সাবধানে তুলে ফেলল কুপার। অপেক্ষায় থাকা ধাতব ডিশের উপরে টিং করে ফ্রাগমেন্ট ফেলার শব্দ শুনতে পেল ডেভিড।
‘গুড! গুডং’ নিজেকেই উৎসাহ দিল কুপার। তাড়াতাড়ি হেমারেজ ঠেকাবার ব্যবস্থা করল। এখন অপটিক নার্ভ খুঁজে বের করব আমরা।
এখানে দুইটা সাদা অংশ আছে। পরিষ্কারভাবে দেখতে পেল ডেভিড। পৃথকভাবে গিয়ে একটা খালের মতো জায়গায় মিশে গেছে।
এখানে পরিষ্কারভাবে নতুন ধরনের হাড় দেখা যাচ্ছে। এই অংশই খালের কাজ বন্ধ করে রেখেছিল। আর সংকুচিত করে রেখেছিল নার্ভের কাজ। কোন পরামর্শ ডাক্তার ফ্রাইডম্যান?
‘আমার মনে হয় এ অংশটুকু পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে নার্ভের কতটা ক্ষতি হয়েছে।
‘গুড। ইয়েস। এ ব্যাপারে আমি একমত। আমি এ অংশে পৌঁছানোর জন্যে চমৎকার একটা বোন নিলার ব্যবহার করব।’
আবারো ডাক্তারের হাতে এগিয়ে দেয়া হল উজ্জ্বল স্টিলের একটা যন্ত্র। এরপর কুপার কাজ শুরু করল সাদা হাড়ের উপর। মনে হলো ট্রপিক্যাল সাগরের কোরাল পাথর। স্টিল দিয়ে খুঁচিয়ে সাবধানে সব অংশ পরিষ্কার করে ফেলল।
‘এখানে আমরা দেখতে পাই যে একটা স্পিনটার খালের কাছে আটকে গেছে। বেশ বড় অংশ। বেশ চাপের মাধ্যমে এখানে আবদ্ধ করে ফেলেছে নিজেকে–
সাবধানে কাজ করতে লাগল ডাক্তার। ধীরে ধীরে নার্ভ দেখা গেল।
এখন, এ ব্যাপারটা বেশ মজার। বদলে গেল কুপারের গলার স্বর। ‘ইয়েস, তাকাও এদিকে। এদিকে আরেকটু ভালো করে দেখা যায় প্লিজ? ক্যামেরা আরো একটু সামনে এগিয়ে গেল। ফোকাস উজ্জ্বল হয়ে উঠল। নার্ভ উপরের দিকে চাপ খেয়ে সমান হয়ে গেছে। বাধা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু কোন ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।’
কুপার আরো একটা হাড়ের বড় টুকরা সরালো একপাশে। এবার পুরো দেখা গেল অপটিক নার্ভ।
‘এটা সত্যিই মনে রাখার মতো। আমার মনে হচ্ছে এ ঘটনা বেশ দুর্লভ। হাজারে একবার বা কোটিতে একবার পাওয়া যায় এ সুযোগ। মনে হচ্ছে নার্ভের সত্যিকারের কোন ক্ষতি হয়নি। তারপরেও যেহেতু স্টিলের ফ্রাগমেন্ট খুব কাছ দিয়ে গেছে, তাই বলা যায় না কিছুই। নিদেনপক্ষে স্পর্শ তো করেছেই।
একটা প্রোবের মাথা দিয়ে আস্তে করে নার্ভ তুলে ধরল কুপার। পুরোপুরি অক্ষত, কিন্তু চাপ খেয়ে সোজা হয়ে গেছে। তারপরেও আমি কোন ক্ষয় দেখতে পাচ্ছি না ডা, ফ্রাইডম্যান।
‘আমার মনে হয় এ অংশের কাজ পুনরায় শুরু করার আশা করতে পারি আমরা।’
মাস্ক পরা থাকলেও ডাক্তার দু’জনের বিজয়ীর ভঙ্গিমা স্পষ্ট বুঝতে পারল ডেভিড। আর তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের অনুভূতি বুঝতে পারল সে। তার আত্মার উপর চাপ ফেলে উঠে দাঁড়াতে দেখল কুপারকে। ঠিকভাবে লাগিয়ে রাখা হলো ডেবরার খুলির অংশ। আর কাটা অংশ যথাস্থানে লাগিয়ে সেলাই করে দেয়ার পর বাইরের দিক দেখে বোঝাই গেল না যে কী কাণ্ড ঘটে গেল এতক্ষণ। স্ক্রিনের ছবি বদলে চলে গেল অন্য একটা থিয়েটারে। এখানে ছোট একটা মেয়ে হার্নিয়ার অপারেশনের জন্য শুয়ে আছে। এর সাথে সাথে বসে থাকা স্টুডেন্টদের মনোযোগও পরিবর্তন হয়ে গেল।
উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসল ডেভিড। এলিভেটরে চড়ে ডেবরার ফ্লোরে এসে ভিজিটরস রুমে বসে রইল। এরপর আবার খুলে গেল এলিভেটরের দরজা। সাদা পোশাক পরা দু’জন পুরুষ নার্স ডেবরার স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে গেল রুমের দিকে। মড়ার মতো ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজের পাগড়ি। খানিকটা বাদামী রক্ত চাদরে আর চলে যাবার পর খানিকটা অ্যানেসথেশিয়ার গন্ধ ভেসে রইল বাতাসে।
এরপর এলো ডা. রুবি ফ্রাইডম্যান। থিয়েটারের পোশাক বদলে পরে এসেছে দামী একটা হালকা ওজনের ধূসর স্যুট আর বিশ গিনি ডিওর সিল্ক টাই। বেশ টানটান, সুস্থ দেখাচ্ছে তাকে। নিজের অর্জনে বেশ তৃপ্ত বোঝাই যাচ্ছে।
‘দেখেছো তুমি? জানতে চাইল সে। ডেভিড মাথা নাড়তেই উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠল, “অসাধারণ কাজ হয়েছে। আনন্দে হাতে হাত ঘসলো।
‘মাই গড, এরকম কিছু একটা তোমাকে ভালো লাগার অনুভূতি দিবে। যদি আর কিছু সারা জীবনে নাও করো কোন সমস্যা নেই। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। ডেভিডের কাঁধে চাপড় মারলো। অসাধারণ। আবারো বলে উঠল ডাক্তার।
কখন জানতে পারবেন আপনি?’ নিস্তব্ধভাবে জানতে চাইল ডেভিড।
‘আমি জানি। বাজি ধরতে পারি আমার সব সুখ্যাতি।
‘অ্যানেসথেটিক থেকে বের হয়ে আসা মাত্রই সব দেখতে পাবে ও? জানতে চাইল ডেভিড।
‘গুড লর্ড, নাহ! কিড়মিড় করল রুবি। বছরের পর বছর ধরে চাপা পড়ে ছিল এ নার্ভ। সুস্থ হতে খানিকটা সময় লাগবে।