‘এটাই আমি দেখতে চেয়েছি’
নীল রঙের সিগারেট জ্বালালো মেয়েটা। বদ্ধ রুমের বাতাস ভারী হয়ে উঠল। রাতে কম ঘুমানোর ফলে চোখ জ্বলতে লাগল ডেভিডের। ধোয়ায় আরো খারাপ লাগল। নিজের ঘড়ির দিকে বারবার তাকাতে লাগল ডেভিড। ভাবতে চেষ্টা করলে এই শেষ মুহূর্তগুলোতে ডেবরার সাথে কী ঘটছে। শরীরকে পরিষ্কার করা, সিডেটিভের জন্য সুই ফোঁটানো আর অ্যান্টি সেপসিস।
অতি ধীরে কাটতে লাগল সময়। অবশেষে পর্দা জুড়ে আলো দেখা গেল। থিয়েটারের ছবি ভেসে উঠল। রঙিন সেট, সবুজ রঙের থিয়েটারের পোশাক পরিহিত শরীরগুলো নড়াচড়া করতে লাগল। সবুজ দেয়ালের সাথে মিশে গেছে অপারেটিং টেবিল। উচ্চতাতে খাটো দেখাতে লাগল রোব পরিহিত মানুষগুলোকে। মাইক্রোফোনে শোনা গেল সার্জন আর সহযোগীদের মাঝের কথা-বার্তা।
‘আমরা এখনো প্রস্তুতি নেইনি মাইক?’
নিজের পাকস্থলীতে গুড়গুড় করে উঠল টের পেল ডেভিড। মনে হল নাশতা করে আসা উচিৎ ছিল। তাহলে হয়তো পেট ভরা থাকতত।
“ঠিক আছে। মাইক্রোফোনের দিকে ফিরতেই শোনা গেল সার্জনের তিক্ষ গলা। আমরা টেলি-তে চলে এসেছি?’
‘হ্যাঁ ডাক্তার। থিয়েটারের সিস্টার উত্তর দিল। সার্জনের কণ্ঠস্বরে স্বস্তি ফুটে উঠিল। এরপর অদেখা দর্শনার্থীদের উদ্দেশে বলে উঠল,
‘ঠিক আছে। তাহলে শুরু করছি। রোগী, ছাব্বিশ বছর বয়সী নারী। উপসর্গ হচ্ছে উভয় চোখের দৃষ্টিহীনতা। কারণ হচ্ছে অপটিক চিয়াশমার পাশে বা ভেতরে অপটিক নার্ভের ক্ষতি বা কার্য প্রবাহে বাধা। সে স্থানের সার্জিকেল তদন্ত হবে এখন। সার্জনের নাম ডা, উইলিয়াম কুপার, সহযোগিতা করছেন ডা. রুবেন ফ্রাইডম্যান।
কথা বলতে বলতে ক্যামেরা ঘুরতে লাগল টেবিলের উপর। বিস্ময়ের সাথে ডেভিড উপলব্ধি করল যে সে না জেনেও ডেবরার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখমণ্ডল আর মাথার নিচের অংশে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। মাথা পুরোপুরি কামানো। গোল একটা বলের মতো খুলি। দেখতে অমানবিক। ডিমের মতো। স্যাভলন অ্যান্টিসেপটিক মাখিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে মাথার উপরের আলো পড়ে চকচকে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
‘স্কালপেল প্লিজ, সিস্টার।
নিজের সিটে টেনশনে ঝুঁকে বসল ডেভিড। হাতলে শক্ত করে এঁটে রইল হাত দু’টো। ফলে আঙুলের মাথাগুলো হয়ে গেল সাদা। কুপার নরম চামড়ার উপর প্রথম আঁচড় দিল। মাংস খুলে গেল। তৎক্ষণাৎ ছোট্ট রক্তবাহী শিরা দেখা গেল। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল কাজ শুরু করেছে ডাক্তারের হাত। গ্লাভস পরা থাকায় মনে হল রাবারের হাত। কিন্তু হলুদ রঙের গ্লাভস পরা হাতগুলো নিশ্চিত ভঙ্গিতে করে চলেছে তাদের কাজ।
ডিম্বাকৃতির এক অংশ মাংস আর চামড়া খুলে ফেলা হল কেটে। দেখা গেল হাড়। আবারো নড়েচড়ে উঠল ডেভিড। হাতে ড্রিল মেশিন তুলে নিল সার্জন। একই সাথে ধারাভাষ্য দিয়ে চলেছে ডাক্তার। খুলির ভেতরে ফুটো করাশুরু করল ড্রিল মেশিন। হাড়ের ভেতরে দ্রুত ঢুকে গেল স্টিল। চারবার ফুটো করল খুলি। চৌকোণা ঢাকনা মতন কাটা হলো।
‘পেরি-অস্টিল এলিভেটর, প্লিজ সিস্টার।
আবারো পাকস্থলী মোচড় দিল ডেভিডের। স্টিলের ফলা দিয়ে প্রতিটি ফুটোর এক মাথা থেকে অপর মাথা পর্যন্ত কাটলো সার্জন। এরপর করাতের মতো একটা যন্ত্র দিয়ে চারবারে পুরো চৌকোণা জায়গাটা কেটে নিয়ে তুলে ফেলল পুরো অংশ। ফলে ডেবরার খুলিতে তৈরি হল গোপন দরজা।
কাজ দেখতে দেখতে গলায় বমি উঠে এলো ডেভিডের। অনুভব করল কপাল জুড়ে ঠাণ্ডা ঘামের ফোঁটা। কিন্তু যখন খুলির ভেতরে উঁকি দিল ক্যামেরার চোখ বিস্ময়ে ভয় ভুলে গেল সে। মেমব্রেন, ডিউরামেটার সব দেখতে পেল ডেভিড। ডেবরার ব্রেইন। ডিউরাতে ফুটো করল কুপার।
‘এখন আমরা সম্মুখ ভাগ উন্মুক্ত করব। আর খুলি উন্মুক্ত করার জন্য এ অংশকে সরিয়ে ফেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
দ্রুত কিন্তু দক্ষতা আর যত্নের সাথে কাজ করে চলল কুপার। ব্যবহার করল স্টেইনস্টিলের রিট্রাকটর, দেখতে জুতোর সোলের মতো। ব্রেইনের মাঝে ঢুকিয়ে একপাশে সরিয়ে নিল। ডেবরার ব্রেইনের দিকে তাকিয়ে ডেভিড যেন দেখতে পেল ডেবরাকে, ওর নিজস্বতাকে। এ সব কিছুই ওকে তৈরি করেছে। ঠিক কোন অংশটা ওকে লেখক হিসেবে তৈরি করেছে ভেবে অবাক হল ডেভিড। এর মাঝে থেকেই তৈরি হয়েছে ওর কল্পনাশক্তি। কোথায় লুকিয়ে আছে ডেভিডের জন্য ওর ভালোবাসা। কোন নরম জায়গাটা লুকিয়ে রেখেছে ওর হাসি আর কোনটাই বা দায়ী ওর কান্নার জন্যে?
রহস্য ঘেরা এই অংশ মনোযোগী করে তুলল ডেভিডকে। রিট্রাকটর যেতে লাগল গভীর থেকে গভীরে। আর ধীরে ধীরে ক্যামেরা উঁকি দিতে লাগল ওর খুলির ভেতর।
কুপার ডিউরামেটারের শেষপর্যন্ত উন্মুক্ত করে জানাতে লাগল তার অবস্থান।
‘এখানে আমরা স্ফেনয়েড সাইনাস দেখতে পাচ্ছি, নোট রাখো যে এই পথে আমরা চিয়াশমাতে পৌঁছাবো।
সার্জনের কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন লক্ষ্য করল ডেভিড। খানিকটা টেনশন আছে সেই স্বরে, যত কাছে এগিয়ে আসছে লক্ষ্যস্থল।
‘এখন দেখো এ ব্যাপারটা বেশ মজার। স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে? ইয়েস! পরিষ্কারভাবে হাড়ের নবজন্ম দেখা যাচ্ছে এখানে–’
সম্ভষ্ট কণ্ঠে বলে উঠল সার্জন। ডেভিডের পাশে বসা শিক্ষার্থী দু’জন বিস্ময় সূচক শব্দ করে সামনে ঝুঁকে এলো। ডেভিড দেখতে পেল নরম ভেজা টিস আর শক্ত, উজ্জ্বল উপরিভাগ, ক্ষত স্থানের একেবারে নিচে। স্টিলের গলা কাজ শুরু করল এখানে। মনে হলো ধাতু দিয়ে তৈরি মৌমাছি। গ্রেনেড ফ্রাগমেন্টের ভেতরে স্টিলের ফলা ঢুকিয়ে দিল কুপার।