‘এটা ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন। আমি চিৎকার করে কেঁদে তোমার কাছে যেতে চাইছি, কিন্তু নড়তে পারছিলাম না। আর তুমি ধীরে ধীরে গভীরে তলিয়ে গেছ। পানি হয়ে গেছে গাঢ় আর আমি জেগে উঠেছি মাথার মাঝে শূন্যতা আর অন্ধকার নিয়ে। কিছুই না, শুধু অন্ধকার আর কুয়াশা।
‘এটা শুধু একটা স্বপ্ন, আর কিছু না ডিয়ার ডেভিড বলে উঠল।
‘ডেভিড’, ফিসফিস করে উঠল ডেবরা। আগামীকাল যদি আগামীকাল কিছু হয়—
‘কিছু হবে না। প্রায় উঠে পড়তে যাচ্ছিল ডেভিড। কিন্তু হাত বাড়িয়ে ডেভিডের মুখে হাত রাখল ডেবরা। ঠোঁট খুঁজে পেয়ে হালকাভাবে স্পর্শ করল।
‘যাই ঘটুক না কেন, বলে উঠল ডেবরা, আমাদের আনন্দের দিনগুলো স্মরণ করবে। মনে রাখবে আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম।
.
গ্রুট শূর হাসপাতাল ডেভিলস পীকের নিচের দিকে অবস্থিত। এর চূড়া ধূসর রঙের পাথরে তৈরি। নিচে ঘন পাইনের বন আর খোলা এস্টেট। যেটা সিসিল জন রোডস্ জাতিকে দিয়ে গেছেন। খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণ আর দেশীয় অ্যান্টিলোপের দল। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উড়ে আসা মেঘ ঢেকে রাখে পালকের মতো এ অঞ্চলকে।
উজ্জ্বল সাদা রঙের দালান দিয়ে তৈরি বিশাল কমপ্লেক্স এই হাসপাতাল। চার্জে থাকা সিস্টার অপেক্ষা করছিল ডেবরার জন্য। ডেভিডের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হল ডেবরাকে। একা দাঁড়িয়ে রইল ডেভিড। কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় যখন ডেবরার সাথে দেখা করতে এলো ডেভিড, তখন বিছানার উপর নরম কাশ্মিরি জ্যাকেট পরে বসে ছিল ডেবরা। পুরো রুম ফুল দিয়ে ভর্তি করে ফেলল ডেভিড। ডেবরার হাতেও ধরিয়ে দিল একগুচ্ছ।
‘বেশ সুন্দর গন্ধ। ধন্যবাদ জানাল ডেবরা। মনে হচ্ছে বাগানে বসে আছি।’
মাথায় পাগড়ির মতো একটা কাপড় জড়িয়ে রেখেছে ডেবরা। শান্ত সোনালি চোখ জোড়া যেন বহুদূরের কিছু দেখছে তন্ময় হয়ে। রহস্যময়ীর মতো দেখাল মেয়েটাকে।
‘ওরা তোমার চুল কেটে ফেলেছে?’ একটু হতাশার ভাব এলো ডেভিডের মাঝে। মেনে নিতে পারছে না যে উজ্জ্বল গাঢ় রঙের কেশরাজি আর নেই। মনে হল ডেবরারও একই মনোভাব। উত্তর দিল না সে। এর পরিবর্তে ডেভিডকে জানাল সবাই তার সাথে কতটা ভালো আচরণ করছে। আর ওর জন্য কতটা কষ্ট করছে। মনে হচ্ছে আমি যেন একজন রানী।’ হেসে ফেলল ডেবরা।
ডেভিডের সাথে ব্রিগও এসেছে। চুপচাপ, গম্ভীর হয়ে আছে। মনে হলো সে নেই-ই। তার উপস্থিতিতে খানিকটা আড়ষ্ট হয়ে আছে ডেভিড আর ডেবরা। তাই রুবি ফ্রাইডম্যান এলে স্বস্তি পেল দুজনে। হাসি-খুশিভাবে ডেবরাকে জানাতে লাগল সব প্রস্তুতি।
‘সিস্টার বলল তুমি ভালো আছো। সব কিছু প্রস্তুত। দুঃখিত তুমি কিছু খেতে পারবে না বা পান করতেও পারবে না। শুধু আমার দেয়া স্লিপিং পিল ছাড়া।
‘আমাকে থিয়েটারে কখন নেয়া হবে?
তাড়াতাড়ি। আগামীকাল সকাল আটটায়। আমি খুব খুশি হয়েছি যে সার্জন হিসেবে আসবেন বিলি কুপার। আমরা অনেক ভাগ্যবান যে তাকে পেয়েছি। আমি তাকে সাহায্য করব। আর তার সাথে থাকবে পৃথিবীশ্রেষ্ঠ সার্জিক্যাল টিম।
রুবি, আপনি জানেন যে কোন কোন নারীর সাথে তাদের স্বামীরাও থাকে যখন তারা
হা। অনিশ্চিত ভঙ্গিতে তাকাল রুবি। অবাক হয়ে গেছে প্রশ্ন শুনে।
‘তো। কাল আমার সাথে ডেভিড থাকতে পারবে না? আমরা একসাথে থাকতে পারব না, আমাদের দুজনের খাতিরে?
‘আমি সমস্ত শ্রদ্ধা বজায় রেখে বলতে চাই ডিয়ার, তুমি তো সন্তান প্রসব করতে যাচ্ছে না।’
‘আপনি ব্যবস্থা করতে পারেন না যেন ডেভিড সেখানে থাকতে পারে? আকুতি জানাল ডেবরা। এমন চোখ জোড়া দেখে পাথর হৃদয়ও গলে যেতে বাধ্য।
‘আমি দুঃখিত।’ মাথা নাড়ল রুৰি। এটা একেবারেই সম্ভব নয়– এরপরই উজ্জ্বল হয়ে উঠল চেহারা। কিন্তু আমি একটা কথা বলতে পারি। আমি তাকে শিক্ষার্থীদের রুমে নিয়ে যেতে পারি। এটাই হবে ভালো। আমি তাকে স্টুডেন্টদের রুমে নিয়ে যাবো। সত্যি কথা বলতে কী থিয়েটারে না থেকে সেখানে থাকলেই ও ভালো ভাবে সবকিছু দেখতে পাবে। ক্লোজ-সার্কিট টেলিভিশন দিয়ে সব দেখানো হয়। ডেভিড নির্বিঘ্নে সবকিছু দেখতে পাবে।’
‘ওহ প্লিজ। তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেল ডেবরা। আমি জানতে চাই যে ও আশেপাশেই থাকবে। আমরা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হতে চাই না। তাই না ডার্লিং? হাসল ডেবরা। যেখানে ভাবল যে ডেভিড দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে অন্য পাশে সরে গেছে। তাই হাসিটা দেখতে পেল না ডেভিড।
‘তুমি সেখানে থাকবে, ডেভিড তাই না? জানতে চাইল ডেবরা। যদিও ছুরির কাজ দেখার কোন ইচ্ছে হল না; তাও হালকাভাবে উত্তর দিল, “আমি থাকবো। আর আরেকটু হলেই যোগ করতে যাচ্ছিল যে সবসময় কিন্তু বলল না শব্দটা।
.
এত সকালবেলা লেকচাররুমে এলো আরো দু’জন। ছোট্ট রুমে অর্ধ-বৃত্তাকারে বসানো চেয়ারের সারি। ছোট একটা টেলিভিশন স্ক্রিন। সুন্দর মুখশ্রীওয়ালা মোটাসোটা এক ছাত্রী আর কুকুরের মতো চুলের ভঙ্গি, লম্বা একটা ছাত্র গাত্রবর্ণ ফ্যাকাশে, দাঁতগুলো একেবারে বিশ্রী।
সাদা লিনেনের জ্যাকেটের মাঝ থেকে ঝুলে আছে স্টেথোস্কোপ। একবার বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখেই আর কোন আগ্রহ দেখাল না ডেভিডের প্রতি। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষার কথা বলতে লাগল পরস্পর।
‘পেরিয়েটালের মধ্যে দিয়ে বিশেষ কাজ করতে যাচ্ছে কুপ।’