একটু পরে বাকি দুজন মাথা নাড়ল। বিড়বিড় করে মেনে নিল ডেভিডের শর্ত।
.
হোটেলের শেফের কাছ থেকে পিকনিক বাস্কেট তৈরি করিয়ে নিল ডেভিড। আর সার্ভিস বার থেকে দুই বোতল ঠাণ্ডা শ্যাম্পেন নিল।
ইচ্ছে হল আকাশে উড়ে বেড়াতে আবার একই সাথে এ কথাও মনে রাখল যে ডেবরাকে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই বারবার নিজের মনকে বোঝাতে বাধ্য হল যে এখন ডেবরার সাথে উড়ে বেড়ানোর সময় নয়। এর বদলে টেবল পর্বতের উপর কেবল ওয়েতে চড়লো দু’জনে। একদম উপরের স্টেশন থেকে মালভূমিতে যাবার পথ পেয়ে গেল। হাতে হাত রেখে চুড়ার কিনারে গিয়ে শহরের অনেক উপরে পাশাপাশি বসল দু’জনে। নিচে অসীম সমুদ্র।
দুই হাজার ফুট পার হয়েও শহরের শব্দ ঠিকই পৌঁছালো তাদের কাছে। বয়ে নিয়ে এলো বাতাস। বিভিন্ন ধরনের শব্দ। অটোমোবাইলের শব্দ, ট্রেন লাইনের উপর লোকোমোটিভ, মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি, শ্রেণীকক্ষে ছেলে মেয়েদের চিৎকার–এ সমস্ত শব্দ সত্ত্বেও মনে হলো তারা বড় একা। শহরের দূষিত বাতাসের চেয়ে ঠাণ্ডা মনে হল দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা মিষ্টি বাতাস।
একসাথে ওয়াইন খেল দু’জনে। কাছাকাছি বসে সাহস সঞ্চয় করল ডেভিড। কথা বলতে যাবে এমন সময় তাকে থামিয়ে দিল ডেবরা।
‘এভাবেই বেঁচে থাকা আর ভালোবাসাই ভালো, মাই ডার্লিং।’ বলে উঠল ডেবরা। আমরা অনেক ভাগ্যবান। তুমি এটা জানো ডেভিড?
একমত হবার মতো একটা শব্দ বের হতে চাইল গলা দিয়ে। কিন্তু পারল না।
‘যদি তুমি পারো, তাহলে পরিবর্তন করতে চাও কিছু? অবশেষে জিজ্ঞেস করল ডেভিড। হাসল ডেবরা।
‘ওহ্, নিশ্চয়ই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেউ কী পুরোপুরি তৃপ্ত হয়? আমি ছোট ছোট অনেক জিনিস বদলে দেব–কিন্তু বড় কিছু নয়। তুমি আর আমি।
‘কী পরিবর্তন চাও?’
‘আমি, আরো ভালো করে লিখতে চাই।’
চুপচাপ ওয়াইনে চুমুক দিল দু’জনে।
সূর্য দ্রুত অস্ত যাচ্ছে। ডেভিড জানাল ডেবরাকে।
বলো।’ জানতে চাইল ডেবরা। সূর্যাস্তের রং বর্ণনা করার জন্য শব্দ খুজতে লাগল ডেভিড। মেঘের উপরের রং, সমুদ্রে রক্ত আর সোনার মতো রঙের মিশেলে তৈরি উজ্জ্বলতা জানে কখনো বলতে পারবে না। একটা বাক্যের মাঝেই থেমে গেল ডেভিড। বুঝিয়ে বলতে পারল না।
‘আমি রুবি ফ্রাইডম্যানের সাথে দেখা করেছি সকালবেলা। তাড়াহুড়া করে বলে উঠল ডেভিড। এর চেয়ে ভালো আর কোন পথ মাথায় এলো না। স্বভাবসুলভ নীরবতার ভঙ্গীতে চুপচাপ বসে রইল ডেবরা। মনে হল যেন শিকারির ভয়ে জমে গিয়ে স্থির হয়ে আছে কোন ছোট্ট বন্যপশু।
‘খারাপ হয়েছে ব্যাপারটা। অবশেষে বলে উঠল ডেবরা।
‘কেন?’ তাড়াতাড়ি জানতে চাইল ডেভিড।
কারণ এ কথা বলতে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আর তুমি অনেক ভয় পাচ্ছ।
না। ব্যাপারটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল ডেভিড।
হ্যাঁ। আমি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি। তুমি আমার জন্যে ভয় পাচ্ছ।’ ‘এটা সত্যি না।’ ডেভিড চাইল মেয়েটাকে আশ্বস্ত করতে। আমি একটু চিন্তিত এই-ই।
বলো আমাকে সবকিছু। জোর দিল ডেবরা।
‘ছোট্ট একটা জিনিস বেড়ে গেছে। এটা তেমন ক্ষতিকর কিছু না–এখন পর্যন্ত। কিন্তু তারা ভাবছে যে এ ব্যাপারে কিছু করা দরকার।’ সাবধানে পরিকল্পনা মতো ব্যাখ্যা করল ডেভিড। শেষ করার পর এক মুহূর্ত চুপ করে রইল ডেবরা।
‘এটা দরকারী, বেশি দরকারী?
জানতে চাইলে ডেভিডের কাছে।
‘হা। জানালো ডেভিড, মাথা নাড়লো, বিশ্বাস করল ডেভিডের কথা। হেসে, হাত ধরে রাখল।
‘ভয় পেয়ো না ডেভিড, মাই ডার্লিং। ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু। দেখবে আমাদের কিছু হবে না। আমরা এমন একটা জায়গায় থাকি যে ওরা আমাদের কিছু করতে পারবে না। এবার ডেবরা চাইছে ডেভিডকে শান্ত করতে।
‘অবশ্যই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। নিজের কাছে ডেবরাকে টেনে নিল ডেভিড। গ্লাস উপচে পড়ে গেল এক ফোঁটা ওয়াইন।
কখন?’ প্রশ্ন করল ডেবরা।
‘আগামীকাল যাবে তুমি। তার পরদিন সকালবেলা অপারেশন হবে।’
‘এত তাড়াতাড়ি?
‘আমার মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি হওয়াই ভালো।
‘হ্যাঁ। ঠিক বলেছো।’
ওয়াইনে চুমুক দিল ডেবরা। মনে হল সাহসী হওয়া সত্ত্বেও খানিকটা ভয় পেয়েছে।
‘ওরা আমার মাথা কেটে ফেলবে?”
‘হ্যাঁ। জানালো ডেভিড। কাঁধ ঝাঁকালো ডেবরা।
‘কোন রিস্ক নেই, ডিয়ার। আবারো আশ্বস্ত করতে চাইলো ডেভিড।
না। আমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে। তাড়াতাড়ি একমত হয়ে গেল ডেবরা।
***
মাঝরাতে ঘুম ভেঙেই মনে হল ডেবরা পাশে নেই, ও একা শুয়ে আছে।
তাড়াতাড়ি উঠে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গেল ডেভিড। খালি। এরপর দ্রুত গিয়ে সিটিংরুমের আলো জ্বালালো ডেভিড।
সুইচের ক্লিক শব্দ শুনতে পেল ডেবরা। মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। কিন্তু গালের উপর মসৃণ মুক্তোদানার মতো অশ্রুবিন্দু দেখতে পেল ডেভিড। তাড়াতাড়ি ডেবরার কাছে এগিয়ে গেল।
‘ডার্লিং’, ডেকে উঠল ডেভিড।
‘আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। জানাল ডেবরা।
“ঠিক আছে।’ ডেবরার কাউচের সামনে হাঁটু মুড়ে বসল ডেভিড। কিন্তু ডেবরাকে স্পর্শ করল না।
‘আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।’
বলে উঠল ডেবরা। ‘স্বচ্ছ পানির একটা পুল, তাতে সাঁতার কাটছে তুমি। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নাম ধরে ডাকছে। আমি তোমার সুন্দর মুখটা পরিষ্কারভাবে দেখেছি, হাসছ–
ডেভিড বুঝতে পারল প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে সে নিজের মাঝে। কেননা পূর্বের ডেভিডকে স্বপ্নে দেখেছে ডেবরা, সুদর্শন ডেভিডকে। এখনকার কুৎসিত বিভৎস ডেভিডকে নয়। এরপর হঠাৎ করে ডুবে যেতে শুরু করেছ তুমি। নিচেঅনেক নিচে গলা ধরে এলো ডেবরার। এক মুহূর্ত চুপ করে রইল।