.
থেমে গিয়ে একেবারে চুপ হয়ে গেল রুবি। অপর পাশে বসে থাকা পুরুষ দু’জন মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইল। নিজের আসন ছেড়ে সামনে ঝুঁকে বসে আছে দু’জনেই।
‘এটা হচ্ছে অন্ধকার দিক–যদি এটা সত্যি হয় ডেবরা তাহলে ব্যবহারিক অর্থে বলা যায় অন্ধই থাকবে। কিন্তু এ প্রশ্নের আরো একটি দিক আছে। এটাও হতে পারে যে অপটিক নার্ভ আদতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। প্লিজ গড়
‘তাহলে ও দেখতে পায় না কেন? রেগে গিয়ে প্রশ্ন করল ডেভিড। অনেক আগেই উন্মা জমেছে তার মনে। একসাথে দুরকম কথা তো বলা যায় না।
ডেভিডের দিকে তাকাল রুবি। প্রথমবারের মতো ক্ষত-বিক্ষত বিভৎস মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যথা উপলব্ধি করল। গাছ চোখে রাইফেলের স্টিলের মতো নীল বেদনা।
‘আমাকে ক্ষমা করো, ডেভিড। আমি পুরো ব্যাপারটাকে আমার মতো করে অ্যাকাডেমিক ওয়েতে চিন্তা করেছি। তোমার মতো ভাবিনি। আমি এখন চেষ্টা করব সোজা ভাবে বলতে। নিজের চেয়ারে হেলান দিল ডাক্তার। বলতে শুরু করল, “নিশ্চয়ই মনে আছে চিয়াশমাতে থাকা দাগের কথা। আমার মনে হয় এটা নার্ভ নিজে। জায়গা থেকে সরে গেছে। ধাতব বস্তুর কারণে চাপ পড়ায় মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে পারছে না।
‘মাথায় আঘাত?’ জিজ্ঞেস করল ডেভিড।
‘হা। মাথায় আঘাতের ফলে হাড়ের জায়গা থেকে সরে গেছে সেটা। তাই আবারো মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাবার মতো জায়গা পেয়েছে। যেমনটা হয় হোস পাইপের বেলায়। পাইপের উপর কিছু রেখে দিলে পানির প্রবাহ বাধা পায়। তারপর বাধা সরিয়ে নিলে আবারো নিয়মিত হয়।
সবাই চুপ করে গেল। প্রত্যেকে নিজের মাঝে ওজন করে দেখতে চাইলো শোনা কথাগুলো।
‘চোখ জোড়া? অবশেষে জিজ্ঞেস করল ব্রিগ। সুস্থ আছে?
‘একদম। মাথা নাড়ল রুবি।
কীভাবে বুঝবেন আপনি–মানে আমি বলতে চাইছি পরবর্তীতে কোন পদক্ষেপ নিতে চান আপনি? আস্তে করে জিজ্ঞেস করল ডেভিড।
‘একটাই পথ আছে কেবল। আমাদেরকে ট্রমার জায়গায় যেতে হবে।’
‘অপারেশন?’ আবারো জানতে চাইল ডেভিড।
‘হ্যাঁ।
‘ডেবরার মাথা উন্মুক্ত করে ফেলবেন?’ চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখা দিল
হ্যাঁ। আবারো মাথা নাড়ল রুবি।
‘ওর মাথা নিষ্ঠুর ছুরির কথা স্মরণ করল নিজের মাংসের উপর। মনের পর্দায় দেখতে পেল সুন্দর মুখটা কাটা-ছেঁড়া করা হচ্ছে। অন্ধ চোখ দুটোতে ব্যথা। ওর চেহারা’ কাঁপতে লাগল ডেভিডের গলা। না, ওকে কাটতে দেব না আমি। আমি.ধ্বংস করতে দেব না, যেভাবে আমার সাথে করেছে ওরা।’
‘ডেভিড! বরফ ভাঙার মতো কড়মড় করে বলে উঠল ব্রিগ। নিজের চেয়ারে হেলান দিল ডেভিড।
‘আমি বুঝতে পারছি তোমার কেমন লাগছে। নম্র ভাবে কথা বলে উঠল রুবি। ব্রিগের একেবারে উল্টো। আমরা চুলের পেছন থেকে এগোব। কোন কিছুই বোঝা যাবে না। চুল উঠে গেলে দাগ ঢেকে যাবে। কাঁটতেও হবে না বেশি।
‘আমি ওকে আর কষ্ট দিতে চাই না। নিজের গলার স্বর নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল ডেভিড। কিন্তু তেমন পারল বলে মনে হল না। ও এমনিতেই অনেক আঘাত সহ্য করেছে
‘আমরা ওকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে চাইছি।’ আবারো কথা বলে উঠল ব্রিগ। ভারী আর ঠাণ্ডা তার স্বর। একটুখানি ব্যথা দিয়েও বড় মূল্য পাবে এখানে।
ব্যথা তেমন হবেই না, ডেভিড।’ আবারো চুপ হয়ে গেল তারা। দু’জন বৃদ্ধ পুরুষ তাকিয়ে রইল কম বয়সী ডেভিডের দিকে।
‘সম্ভাবনা কতটুকু? সাহায্যের আশায় তাকাল ডেভিড। চাইছে তার হয়ে সিদ্ধান্ত অনন্যরা নিয়ে নিক। চাইছে তার কাছ থেকে সরে যাক ব্যাপারটা।
‘এটা বলা কঠিন। মাথা নাড়ল রুবি।
‘ওহ গড, আমি যদি খারাপ দিকগুলো নাই জানি, তাহলে বিচার করব কীভাবে?’ চিৎকার করে উঠল ডেভিড।
ঠিক আছে। যেমন ধর–এখানে সম্ভাবনা আছে, নিশ্চয়তা নয় যে, সে তার দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করার মতো করে ফিরে পাবে।’ নিজের কথা শেষ করল রুবি। আর এ সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ যে দৃষ্টিশক্তির পুরোটা সে ফিরে পাবে।’
‘খুব বেশি হলে এটুকু হবে।’ একমত হল ডেভিড। আর যদি না হয়?
হতে পারে কোন পরিবর্তনই হবে না। একটুখানি ব্যথা পাবে। আর কিছু না।
নিজের চেয়ার থেকে প্রায় লাফ দিয়ে উঠল ডেভিড। এগিয়ে গেল জানালার কাছে। তাকিয়ে রইল উপসাগরের দিকে। যেখানে নোঙ্গড় করে আছে বিশাল সব ট্যাঙ্কার। আর তারও পরে নীল আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে টাইগারবার্গের পাহাড়।
তুমি জানো কোন পথ বেছে নিতে হবে, ডেভিড।’ নির্দয় হয়ে উঠল ব্রিগ। কোন পথ দিল না ডেভিডকে, বাধ্য করল ভাগ্য বরণ করে নিতে।
‘ঠিক আছে।’ আত্মসমর্পণ করল ডেভিড। ফিরে তাকাল। কিন্তু এক শর্তে। এর উপরেই জোর দিব আমি। ডেবরাকে জানান হবে না যে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার সম্ভাবনা আছে।
রুবি ফ্রাইডম্যান মাথা ঝাঁকালো। ওকে বলতেই হবে।
ভয়ঙ্করভাবে নড়ে উঠল ব্রিগের গোঁফ জোড়া। কেন নয়? কেন ওকে জানতে দিতে চাও না তুমি?
আপনি জানেন কেন। না তাকিয়ে উত্তর দিল ডেভিড।
কীভাবে আনবে তাকে তুমি যদি তাকে নাই বলো? জানতে চাইল রুবি।
‘ওর মাথা ব্যথা হয়–আমরা বলব যে কোন একটা যে আপনি কোন একটা কিছু খুঁজে পেয়েছেন–যেটা সরিয়ে ফেলতে হবে। এটাই তো সত্যি তাই না?
না। মাথা নাড়ল রুবি। আমি তাকে এটা বলতে পারব না। ওর সাথে ভণিতা করতে পারব না আমি।’
‘তাহলে আমি বলব।’ বলে উঠল ডেভিড। এখন বেশ দৃঢ় শোনাল তার কণ্ঠস্বর। যখন অপারেশনের পর ফলাফল পাওয়া যাবে তখন তাকে সব খুলে বলব আমি। ভাল অথবা মন্দ যাই হোক না কেন। আমিই ওকে জানাবো ঠিক আছে? এ ব্যাপারে একমত সবাই?