‘আমি এক্স-রের ফলাফল পাওয়া মাত্রই জানাব তোমাদেরকে। এখানে আমি রেডিওলজিস্টের ঠিকানা লিখে দিচ্ছি।’ নিজের প্রেশক্রিপশনের প্যাডে ঠিকানা লিখে ডেভিডের দিকে বাড়িয়ে দিল ডাক্তার।
‘আগামীকাল সকাল দশটায় আমার সাথে দেখা করবে, একা।
মাথা নেড়ে ডেবরার হাত ধরল ডেভিট। এক মিনিটের জন্যে চেষ্টা করল রুবির দিকে তাকিয়ে তার মনোভাব বুঝতে। কিন্তু শুধুমাত্র কাঁধ ঝাঁকাল ডাক্তার। কমেডিয়ানের মতো অনিশ্চিত ভঙ্গিতে চোখ নাচালো।
.
মাউন্ট নেলসনের সুইটে লাঞ্চে আসল ব্রিগ। কেননা এখন পর্যন্ত পাবলিক প্লেসে সহজ হতে পারে না ডেভিড। ব্রিগ চেষ্টা করল দুজনকে সহজ করতে। তাই ডেবরার ছেলেবেলা আর আমেরিকা ছাড়ার পর প্রথম দিককার কাহিনী বলতে শুরু করল। প্রাণ খুলে হাসল ডেভিড আর ডেবরা।
কৃতজ্ঞ বোধ করল ডেভিড। সময় কেটে গেল দ্রুত। আর তারপর ডেবরাকে কে তাড়া দিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে বলল ব্রিগ।
‘আমি দু’ধরনের কৌশল ব্যবহার করব, মাই ডিয়ার
ডেভিড অবাক হয়ে ভাবতে লাগল যে চল্লিশের উপরে যে কোন পুরুষ ডেবরাকে এমন ভাবে ডাকে যেন সে বারো বছরের খুকী। প্রথমত আমরা পাঁচ রকম ভঙ্গী করব যাকে পুলিশরা বলে, শটস, ফ্রন্ট, ব্যাক, সাইড অ্যান্ড টপ রেডিওলজিস্ট লাল-মুখো, সাদা চুলের এক পুরুষ হাত দুটো বেশ বড়সড় আর কাধ বেশ চওড়া, ব্যায়ামবীরের মতো। আমরা এমনকি তোমার কাপড় খুলতেও বলব না’ বিড়বিড় করল লোকটা। কিন্তু ডেভিডের মনে হল খানিকটা মন খারাপ করল লোকটা। এরপর আমরা খুব দ্রুত তোমার মাথার ভেতরের কয়েকটা ছবি তুলব। এর নাম টমোগ্রাফী। তোমার মাথা স্থির হয়ে থাকবে। ক্যামেরা তোমার চারপাশে ঘুরতে থাকবে। ঠিক যেখানে সমস্যা সেখানেই ফোকাস করবে। তোমার সুন্দর মাথার মাঝে কী ঘটছে তা বের করে আনবো আমরা।’
আমি আশা করব এতে খুব বেশি অবাক হবেন না আপনি, ডাক্তার। বলে উঠল ডেবরা। এক মুহূর্তের জন্যে মনে হল জমে গেল ডাক্তার। তারপর কাজ শুরু করল। দীর্ঘ ক্লান্তিকর হল পুরো ব্যাপারটা। এরপর হোটেলে ফিরে আসার সময় ডেবরা ডেভিডের কাছে ঝুঁকে এলো। বলল, “চলো বাসায় ফিরে যাই ডেভিড। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।’
‘ঠিক আছে যত তাড়াতাড়ি পারি।’ একমত হল ডেভিড।
ডেভিড চায় নি ব্যাপারটা এভাবে ঘটুক। তার পরেও জোর করে পরদিন সকালে ব্রিগও এলো তার সাথে ফ্রাইডম্যানের চেম্বারে। ডেবরার সাথে মিথ্যে কথা বলল ডেভিড। যেটা সে সচরাচর করে না। জানাল মরগ্যান ট্রাস্ট অ্যাকাউন্টান্টের সাথে দেখা করতে চলেছে সে। হোটেলের সুইমিং পুলে পাশে লেবু-সবুজ বিকিনি পরে শুয়ে রইল ডেবরা। সূর্যের আলোয় অসম্ভব সুন্দর দেখাল বাদামী, কৃশকায় রঙের দেহ।
রুবি ফ্রাইডম্যান বিজনেসম্যান সুলভ আচরণ করল। নিজের ডেস্কে বসে সোজা চলে এলো মূল আলোচনাতে।
‘জেন্টেলম্যান’, শুরু করল ডাক্তার। আমরা একটা সমস্যায় পড়েছি। কঠিন সমস্যা। প্রথমে এক্স-রে প্লেটগুলো দেখাতে চাই–’ রুবি চেয়ার ঘুরিয়ে বুক লাইট জ্বালিয়ে প্রিন্টগুলো স্পষ্ট করে তুলল। এই পাশের প্লেটগুলো আমাকে জেরুজালেম থেকে ইদেলমান পাঠিয়েছে। এখানে গ্রেনেড ফ্লাগমেন্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ শক্ত একটা অংশ। হাড়ের মাঝে ছোট ত্রিকোণাকৃতির একটা বস্তু। এখানে অপটিক চিয়াসমার গতিপথ। হাড়ের মাঝে যেখানে বাধা পেয়েছে তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ইদেলম্যানের সত্যিকারের প্রাথমিক পরীক্ষা-~ এ প্লেটগুলোর উপর নির্ভর করে যেগুলো তৈরি, সেটা ছিল আলো ও আকার বুঝতে না পারাটা। এটাই চিরস্থায়ী ধরে নেয়া হয়েছিল। অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানেই সব কিছু শেষ ধরে নেয়া হয়েছে। দ্রুত প্লেটগুলো খুলে ফেলল ডাক্তার। অন্যগুলো স্ক্যানারে লাগিয়ে নিল। ঠিক আছে। এখন দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় এক্স-প্লেটগুলো। গতকাল ভোলা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে গ্রেনেডের অংশটা কীভাবে সংকুচিত হয়ে গেছে।’ তিক্ষ্ণ দাগটুকু মসৃণ হয়ে গেছে চারপাশে নতুন করে হাড় তৈরি হওয়ায়। এটা বেশ ভালো। এরকমটাই আশা করা হয়ে ছিল। এখানে চিয়াশমার চ্যানেল হাড়ের নতুন করে বৃদ্ধি যে কোন ভয় ডেকে আনতে পারে। স্ক্যানারে নতুন এক সেট প্লেট লাগিয়ে নিল ডাক্তার। অবশেষে এখানে দেখা যাচ্ছে টমোগ্রাফীর মাধ্যমে পাওয়া ছবি। এখানে চিয়াশমা চ্যানেলের গতিপথ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, শুধু ছোট্ট একটা অর্ধ গোলাকার অংশে স্পর্শ করল ডাক্তার এই ছোট্ট দাগটা খুলির প্রধান কেন্দ্রে চলে গেছে। মনে হচ্ছে বেঁকে গেছে ইউ। হতে পারে আমাদের পুরো পরীক্ষার প্রধান আবিষ্কার এটিই।’ স্ক্যানারে লাইট বন্ধ করে দিল রুবি।
‘আমি এসবের কিছুই বুঝতে পারিনি।’ তিক্ষ কণ্ঠে বলে উঠল ব্রিগ। অন্য কোন পুরুষের বিশেষ জ্ঞান দক্ষতার কাছে নতি স্বীকার করতে নারাজ সে।
না, অবশ্যই। নরম হল রুবি।
‘আমি শুধুমাত্র আলোচনার ক্ষেত প্রস্তুত করলাম। আবারো ডেস্কে তাকাল। বদলে গেল ব্যবহার। এখন আর লেকচার দিচ্ছে না। এখানেই সে-ই যে প্রভু তা বোঝা গেল স্পষ্ট।
‘এখন আমার উপসংহার বলি। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে অপটিক নার্ভের কিছু অংশের সক্রিয়তা নষ্ট হয়নি। এখনো মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে সক্ষম। অন্তত কিছু অংশ এখনো অক্ষত। প্রশ্ন হচ্ছে কতটুকু। অথবা কতটুকু উন্নতি করা যাবে। হতে পারে নার্ভের মাঝে কেটে ফেলেছে গ্রেনেড—ছয়টা দড়ির পাঁচটিই ক্ষতি করেছে অথবা চারটা কী তিনটা। আমরা জানি না কতটা। আমরা শুধু জানি যে এই ধরনের আঘাত প্রতিহত করা কঠিন। এর থেকে বেঁচে থাকবে এখন যতটুকু আছে প্রায় কিছুই না।