‘আমি এর সম্পর্কে কখনো ভাবিনি। আস্তে করে নিজের কপালের ক্ষতের দাগে হাত বোলালো ডেবরা। নিজের উপর অস্বস্তি হলো ডেভিডের। কেননা এ ষড়যন্ত্রে তারও অংশ আছে।
‘এতে কোন ক্ষতি হবে না ডার্লিং। এখানে যখন এসেই পড়েছি, রুবি একবার পরীক্ষা করে দেখুক না হয়। ঈশ্বর জানে পরে আবার কখন সুযোগ পাবো।
‘ওহ ডেভিড, উড়িয়ে দিতে চাইল ডেবরা ব্যাপারটাকে। আমি জানি তুমি ঘরে ফেরার জন্য পাগল হয়ে আছ। আমিও।
‘আরেকটা দিন বা দুই দিন এমন কোন সমস্য হবে না। এখন আমরা যেহেত চিন্তা করছি। পরে আরো বেড়ে যাবে চিন্তা।
রুবির দিকে তাকাল ডেবরা। কতক্ষণ লাগবে?
‘একদিন। সকালে একটা পরীক্ষা করব। তারপর সন্ধ্যায় কয়েকটা এক্স-রে।
কত তাড়াতাড়ি দেখতে পারবেন তাকে?’ জানতে চাইল ডেভিড। এমন ভাবে বলল যেন কিছু জানে না সে। অথচ ঠিকই জানে যে পাঁচ সপ্তাহ আগেই ঠিক করা হয়েছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট।
“ওহ, আমি ভাবছি কালই। যদিও একটু তাড়াহুড়া হয়ে যায়, কিন্তু তোমাদের কথা ভিন্ন।
হাত বাড়িয়ে ডেবরার হাত ধরল ডেভিড। ঠিক আছে ডার্লিং?
“ঠিক আছে। একমত হল ডেবরা।
৮. পোতাশ্রয়ের উপরে সুউচ্চ টাওয়ারে
পোতাশ্রয়ের উপরে সুউচ্চ টাওয়ারে অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারে রুবেনের কলটিং রুম। টেবিল বে’র দিকে মুখ করে বানানো চেম্বার। পরিষ্কার দেখা যায় সাদা ফেনারাশি–দূরের মেঘ।
খুব যত্ন করে সাজানো হয়েছে রুমটি। পিয়ারনিফের আঁকা দুটি সত্যিকারের ছবি, কয়েকটা ভালো কার্পেট। সামারকন্দ আর গোল্ড ওয়াশ করা আবিদা–এমনকি রুবির রিসেপসনিস্টকে দেখে মনে হচ্ছে প্লে-বয় ক্লাবের হোস্টেস। ঝোলানো কান আর লেজ নেই অবশ্য। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে ডা, ফ্রাইডম্যান জীবনের ভালো দিকগুলিকেই পছন্দ করে।
তাদের জন্য প্রস্তুত ছিল রিসেপনিস্ট। কিন্তু তারপরেও চোখ বড় বড় করে তাকানো পরিহার করতে পারল না আর ডেভিডের চেহারার দিকে তাকিয়ে মুখের রক্ত সরে গেল তার। ডা. ফ্রাইডম্যান আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন মি: ও মিসেস মরগ্যান। সরাসরি ভেতরে চলে যান প্লিজ।
পুরোদস্তুর পোশাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে ডেভিডকে। তারপরেও উষ্ণ আর আন্তরিক ভাবে ডেবরার হাত ধরল।
‘ডেভিড কী আমাদের সাথে থাকতে পারবে?’ ছদ্ম ভঙ্গিতে ডেবরার কাছে জানতে চাইল রুবেন।
‘হ্যাঁ, থাকবে।’ উত্তর দিল ডেবরা। এরপর ক্লিনিক্যাল ইতিহাস পড়ে দেখল রুবেন। এরপর গেল এক্সজামিনেশন রুমে। চেয়ার দেখে ডেভিডের মনে হলো এটা ডেন্টিস্টের রুমে থাকে। ডেবরাকে নিজের আরাম মতো শুইয়ে দিল রুবেন। এরপর সরাসরি দু’চোখের পিউটিলে আলো ফেলল।
‘সুন্দর সুস্থ, চোখ। অবশেষে মন্তব্য করল রুবেন। আর বেশ সুন্দর, তাই না ডেভিড?’
‘বিধ্বংসী।’ একমত হল ডেভিড। সামনের দিকে তুলে বসানো হল ডেবরাকে তারপর হাতে লাগানো হল ইলেকট্রডস। এরপর সামনের দিকে আনা হল জটিল একটা যন্ত্র। ই-সি-জি। অনুমান করল ডেভিড। মাথা নাড়ল রুবেন।
না-এটা বলতে পারো আমার আবিষ্কার। আমি এটা নিয়ে বেশ গর্বিত। কিন্তু সত্যিকারে যদি বল তাহলে এটা পুরাতন লাই-ডিডেক্টরের আধুনিক সংস্করণ।
প্রশ্ন-উত্তর পর্ব? জানতে চাইল ডেবরা।
না। আমরা তোমার উপর ফ্ল্যাশ লাইট ফেলবো। আর দেখবো অবচেতনে তুমি কীভাবে প্রতিক্রিয়া কর।
‘আমরা এটা জানি। জানাল ডেবরা। কণ্ঠের ধার কান এড়ালো না কারো।
‘সম্ভবত। কিন্তু এটা একটা রুটিন চেক-আপ আমাদেরকে করতে হবে। তাকে শান্ত করতে চাইল রুবি। এরপর ডেভিডকে বলল।
‘এখানে এসে দাঁড়াও প্লিজ। আলো বেশ কড়া। তাকাতে ভাল লাগবে না তোমার।
পিছনে সরে গেল ডেভিড। মেশিন অ্যাডজাস্ট করল রুবি। মনে হল কোন ধরনের গ্রাফ পেপার ঘোরা শুরু করল। আর প্রায় সাথে সাথে ছন্দের ভঙ্গিতে ওঠা-নামা শুরু করল। অন্য একটা পৃথক কাঁচের পর্দায় সবুজ বিন্দুর মতো আলো একই গতিতে স্পষ্ট হতে লাগল। ধূমকেতুর মতো পুচ্ছ আঁকা হতে লাগল স্ক্রিন জুড়ে। এটা দেখে ডেভিডের মনে পড়ে গেল মিরেজ জেটের ইনস্ট্রমেন্ট প্যানেলে থাকা ইন্টারসেপটার রাভার স্কিন। উপরের আলো বন্ধ করে দিল রুবি। পুরো রুম হয়ে গেল অন্ধকার। শুধু স্কিনে সবুজ বিন্দুগুলো দেখা গেল।
‘আমরা প্রস্তুত আছি ডেবরা? চোখ খোলা রেখে সামনের দিকে তাকাও ডেবরা। প্লিজ।
নিঃশব্দে নীল আলোয় ভরে গেল ঘর। সাথে সাথে সবুজ বিন্দুগুলো দৌড়াদৌড়ি শুরু করল দেখতে পেল ডেভিড। প্রথমে এক দু’বার দৌড়াদৌড়ি করে আবারো আগের মতো একই গতিতে চলতে লাগল। ডেবরা আলো দেখতে পেয়েছে। যদিও সে জানে না ব্যাপারটা। মস্তিস্ক ঠিকই গ্রহণ করেছে। আলোর সংকেত। প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেছে মেশিন।
আরো বিশ মিনিট ধরে উজ্জ্বল আলো নিয়ে খেলা করা হল। রুবি এর ভেতরে বিভিন্ন ভাবে অ্যাডজাস্ট করল ফোকাস। এরপর অবশেষে সন্তুষ্ট হয়ে উপরের আলো জ্বেলে দিল।
‘তো? জানতে চাইল ডেবরা তড়িঘড়ি। আমি পাশি করেছি?’ এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না আমি। জানাল রুবি। তুমি অসাধারণ ব্যবহার দেখিয়েছ, আমরা তো এটাই চেয়েছি।’
‘এখন যেতে পারি আমরা?
‘ডেভিড তোমাকে লাঞ্চ করতে নিয়ে যাবে। কিন্তু সন্ধ্যাবেলা রেডিওলজিস্টের কাছে যাবে। আমার রিসেপসনিস্ট ২.৩০ মি. অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে। কিন্তু তারপরেও আবার জেনে নিও তোমরা পরিষ্কার ভাবে।’ রবি জানিয়ে দিল যে তার সাথে এখন কথা বলতে পারবে না ডেভিড।