‘হ্যাঁ, এত জোরে মাথা নাড়ল মিটজি যে আরেকটুকু হলে নাক থেকে চশমা প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। তুমি ওদের মতো নও। কোন একটা এক্সিকিউটিভ স্যুইটে ঢুকিয়ে দিলে তুমি বোধ হয় মারাই যাবে।’
‘আমাকে এটা খুঁজে বের করতে হবে মিটজি। কোথাও না কোথাও নিশ্চয় আছে।
বাথটাব থেকে উঠে এলো ডেভিড। লাল-বাদামী বর্ণ ধারণ করেছে শরীর, ধোয়ার রেশ উঠছে শরীর থেকে। কথা বলতে বলতে টেরি রোব জড়িয়ে নিল গায়ে। মেয়েরাও তার পিছুপিছু বেডরুমে এসে বিছানার ধারে বসল পাশাপাশি। সানন্দে মাথা নেড়ে একমত হলো ডেভিডের স্বাধীনতা ঘোষণায়। আবারো বাদ সাধলো মিটজি।
বাবাকে কী বলবে তুমি? জানতে চাইল সে। ডেভিডের উত্তেজনা বাধা পেল এ প্রশ্নে। বুকের লোমে হাত রেখে ভাবতে লাগল সে। মনোযোগ দিয়ে অপেক্ষা করল মেয়েরা।
‘ও তোমাকে আবারও চলে যেতে দেবে না।’ সর্তক করে দিল মিটজি। ‘কোন যুদ্ধ ছাড়া।’
এই সংকটের মুহূর্তে সাহস উবে গেল ডেভিডের। আমি তাকে একবার বলেছি। আবার বলার তো দরকার নেই।
‘তুমি এমনিই দৌড় লাগাবে?’ আবারো জানতে চাইল মিজি।
‘আমি পালাচ্ছি না। আত্মমর্যাদা মাথায় রেখে বলে উঠল ডেভিড। বিছানার পাশের টেবিল থেকে ক্রেডিট কার্ডে ভর্তি শুয়োরের চামড়ার ফোল্ডার তুলে নিল।
‘নিজের ভবিষ্যত নির্ধারণের অধিকার নিশ্চয় আছে আমার। টেলিফোনের কাছে গিয়ে ডায়াল করা শুরু করল সে।
কাকে ফোন করছো?
‘এয়ালাইন।
কোথায় যাবে?
তাদের প্রথম ফ্লাইট যেখানে যায়।’
“ঠিক আছে। আমি তোমাকে কাভার দেবো।’ বিশ্বস্ত ভাবে ঘোষণা করল মিটজি। তুমি ঠিক কাজটাই করছে ওয়ারিওর।
‘এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ থাকতে পারে।’ একমত হলো ডেভিড। আমার রাস্তা–তাদের কথা বাদ দাও। আমি দেখে নেবো সবাইকে।
‘এ জন্য তোমার সময় আছে? দাঁত কিড়মিড় করল মিটজি। আর প্রথমবারের মতো ফ্যাসফ্যাসে গলায় কথা বলে উঠল কালো চুলের মেয়েটা। একবারের জন্যও ডেভিডের উপর থেকে চোখ সরায়নি সে। আমি অন্যদের কথা জানি না, কিন্তু আমি কী প্রথম জন হতে পারি?
কানে টেলিফোনের রিসিভার নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল ডেভিড। অবাক হয়ে দেখল মেয়েটা অসীম আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
শিপোল এয়ারপোর্টের কাঁচ ঘেরা হল থেকে বের হয়ে এলো ডেভিড। লোভীর মতো চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগল নিজের মুক্তির পথ, কেউ তাকে খেয়াল করছে না দেখে আনন্দ নেচে উঠল মন। ঠিক তখনি কুনইতে হালকা স্পর্শ। ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল লম্বা আর হাসিমুখে এক ডাচ তরুণ তাকে দেখছে রীমলেস চমশার ফাঁক দিয়ে।
‘মি. ডেভিড মরগ্যান? হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল ডেভিড।
হল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ান স্টিভ ডেরিং থেকে আমি ফ্রেডরিক ভ্যান গেন্ট বলছি। হলান্ডে মরগ্যান শিপিং লাইনস-এর হয়ে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত। আপনার আগমনে আমরা সত্যি আনন্দিত।
‘গড, নাহ! তিক্ততায় ফিসফিস করে উঠল ডেভিড।
প্লিজ?
না, আমি দুঃখিত। আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগল। বিদায় দেয়ার ভঙ্গিতে হাত মেলালো ডেভিড।
‘আপনাকে দেয়ার জন্য আমার কাছে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ টেলেক্স মেসেজ আছে মি, মরগ্যান।’ এগিয়ে দিল ভ্যান গেন্ট। আমি আমস্টারডাম থেকে বিশেষ ভাবে এ দুটো নিয়ে এসেছি।
প্রথমটি এসেছে মিজির কাছ থেকে যে ডেভিডের কথা লুকিয়ে রাখার শপথ নিয়েছিল।
‘তোমার পাত্তা বলে দেয়ার জন্য দুঃখিত। সিংহের মতো সাহসী আর ঈগলের মতোই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠো। লাভ, মিটজি।’
‘বিশ্বাসঘাতক ডাইনী!’ বলে উঠেই দ্বিতীয় খাম খুলে ফেলল ডেভিড।
‘তোমার দ্বিধার কারণ বোঝা গেছে, পদক্ষেপ ক্ষমা করা হলো। বিশ্বাস করি দায়িত্ব পালনে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এখানে তোমার স্থান সর্বদা উন্মুক্ত। স্নেহের সাথে পল মরগ্যান।
‘ধূর্ত বৃদ্ধ শিয়াল!’ বলেই উভয় মেসেজ চালান করে দিল পকেটে ডেভিড।
‘কোন উত্তর? জানতে চাইলে ভ্যান গেন্ট।
‘ধন্যবাদ, না। এত কষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ।
‘কোন সমস্য নেই, মি. মরগ্যান। আমি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে? আপনার কিছু প্রয়োজন আছে কী?
‘কিছুই না। কিন্তু আবারো ধন্যবাদ।’ করমর্দন করতেই মাথা নিচু করল ভ্যান গেন্ট আর চলে গেল। ডেভিড এগিয়ে গেল কাউন্টারের দিকে। হাসিমুখে তাকাল মেয়েটা।
‘শুভ সন্ধ্যা, স্যার।’
ডেস্কের উপর দিয়ে নিজের অ্যাভিস কার্ড ঠেলে দিল ডেভিড।
‘আমি একটু দৌড়ঝাঁপ করতে চাই।’
‘দেখা যাক আমি কী করতে পারি। আমাদের একটা মুস্তাং মাক ওয়ান আছে?’ ক্রিম আর গোলাপি নিখাদ ত্বকের অধিকারী মেয়েটার চুল পুরো সোনালি।
এতেই কাজ হবে। নিশ্চয়তা দিল ডেভিড। ফর্ম ফিলআপ করতে করতেই জানতে চাইল,’ আমস্টারডামে কি এটা আপনার প্রথমবার আসা স্যার?”
‘তারা। আমাকে বলেছে ইউরোপের মধ্যে এই নগরীই সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল। ঠিক?’
‘যদি আপনার জানা থাকে কোথায় যেতে হবে।’ বিড়বিড় করল মেয়েটা।
‘তুমি আমাকে দেখাতে পারো?’ ডেভিড প্রশ্ন করতেই মুখ তুলে নিরপেক্ষ অভিব্যক্তি বজায় রেখে কিছু একটা হিসাব করল মেয়েটা চোখের দৃষ্টি দিয়ে। সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আবারো শুরু করল তার কাজ।
‘এখানে সাইন করুন স্যার। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কাটা হবে। এরপরই গলা নামিয়ে বলে উঠল, এই ব্যাপারে কিছু জানার থাকলে এই নম্বরে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন কাজের শেষে। আমার নাম গিলডা।’