শট পিস্তলটা লোড করল পিটার, লম্বা পা ফেলে অফিসের ভেতর দিয়ে আবার এগোল। আশপাশের সমস্ত ডেস্ক খালি, শুধু ফাইল আর টাইপরাইটার রয়েছে। এক দিকের দেয়াল ঘেষে পাশাপাশি পড়ে রয়েছে তিন হাইজ্যাকারের মৃতদেহ, প্রতিটি লাশ স্বচ্ছ প্লাস্টিকের মোড়কে ঢাকা। আরেক দেয়াল ঘেঁষে পড়ে রয়েছে পিটারের সহকারীর লাশ, একবার থেমে লাশটার দিকে ঝুঁকল পিটার। মিশরীয় সেনা বাহিনির একজন ক্যাপটেন ছিল লোকটা। এখনো তার চোখ জোড়া বিস্ফারিত হয়ে আছে, মুখ হাঁ করা। মৃত্যু মানুষের মর্যাদা কেড়ে নেয়, ভাবল পিটার। ধীরে ধীরে সিধে হলো ও।
শট পিস্তল হাতে ইনার অফিসে ঢুকল পিটার, পিছু পিছু কলিন আসছে।
মেয়েটাকে ওরা একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে রেখেছে, একজন ডাক্তার আর দুজন পুরুষ নার্স নিঃশব্দে সেবা করছে তার। স্যালাইন আর রক্ত, দুটো একসাথে দেয়া হচ্ছে ইনগ্রিডকে। দরজা খোলার আওয়াজে বিরক্ত হলো ডাক্তার, কিন্তু ঘাড় ফিরিয়ে পিটারকে দেখে মুখের ভাব বদলে গেল। জেনারেল, ওর হাতটা যদি রাখতে চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হবে। শোল্ডারের জয়েন্ট চুরমার হয়ে গেছে…
অপরূপ সোনালি মাথাটা ঘুরিয়ে পিটারের দিকে তাকাল মেয়েটা। তার চলে আর মুখে রক্ত লেগে রয়েছে। চেহারা ম্লান হয়ে গেছে, কিন্তু চোখ দুটো আগের মতোই জ্বলজ্বলে।
এখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি আমি, বলে চলেছে ডাক্তার। দুজন অর্থোপেডিক সার্জেন এখুনি চলে আসছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্যে একটা হেলিকপ্টারও পাওয়া যাবে…
বেরিয়ে যান, ডাক্তারকে বলল পিটার।
জ্বী? হতভম্ব হয়ে গেল তরুণ ডাক্তার।
গেট আউট, আবার বলল পিটার। আপনারা সবাই। দরজা বন্ধ না হওয়া মেয়েটাকে বলল, মানুষ হিসেবে আমার একটা নীতি আছে, তুমি আমাকে বাধ্য করেছে সেই নীতি বিসর্জন দিতে। তার মানে আমার অধঃপতন ঘটেছে, তোমার লেভেলে নেমে এসেছি আমি।
চোখে অনিশ্চিত দৃষ্টি নিয়ে পিটারের দিকে তাকিয়ে থাকল ইনগ্রিড। আড়চোখে একবার দেখে নিল পিটারের হাতের শট পিস্তলটা। পিটারের ডান হাতে ঝুলছে ওটা।
অবোধ শিশু আর নিরীহ মেয়েদের খুন করে তুমি আমাকে এমন একটা পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিলে, আমার ঊর্ধ্বতন অফিসারের নির্দেশ অমান্য করে তার বিশ্বাস আর আস্থা হারালাম। এক সেকেন্ড থামল পিটার, তারপর আবার বলল, আমি একজন গর্বিত মানুষ, কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর না পেলে এখন যে কাজটা করব তা করার পর গর্ব করার মতো আর কিছু আমার থাকবে না।
মার্কিন অ্যামব্যাসাডরের সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়া হোক, দাবির সুরে বলল ইনগ্রিড, আরেকবার পিটারের হাতে ধরা শট পিস্তলের দিকে তাকাল। আমি আমেরিকান সিটিজেন। আই ডিমান্ড প্রোটেকশন…
পিটার থাকে থামিয়ে দিল, আগের মতো স্পষ্ট, শান্ত সুরে কথা বলছে, ভেবো না এটা প্রতিশোধ। অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, মানুষের যত খারাপ গুণ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো প্রতিশোধ…
অসম্ভব, এ কাজ তুমি করতে পার না! ইনগ্রিডের গলা চড়ল, ভয় পেয়ে গেছে সে। পিটার চাইছেও তাই, প্রথম মেয়েটাকে ভয় পাইয়ে দেবে, তারপর প্রশ্ন করবে। প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতেই হবে ওকে। আমার গায়ে হাত দিলে নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারবে তুমি। ওরা তোমাকে ছিঁড়ে খাবে…
কিন্তু পিটার এমনভাবে বলে গেল যেন তার কথা শুনতেই পায়নি, সত্যি এটা প্রতিশোধ নয়। কারণটা তুমি নিজে তৈরি করেছ। তুমি বেঁচে থাকলে ওরা তোমাকে উদ্ধার করার জন্যে আসবে, আমি জানি। তোমার বেঁচে থাকার অর্থই হবে অন্য আরো নিরীহ মানুষের অকাল মৃত্যু।
আমি একজন মেয়েমানুষ। আমি আহত। আমি একজন যুদ্ধবন্দী। আর্তনাদ, করে উঠল ইনগ্রিড, হাত-পা ছুঁড়ে স্ট্র্যাপ ঢিলে করার চেষ্টা করছে।
উত্তর দেবে কিনা বলো। মেয়েমানুষ, আহত, যুদ্ধবন্দী–এসব পুরানো সেন্টিমেন্ট। ওসব বাতিল হয়ে গেছে। বইটা ছিঁড়ে ফেলেছ তুমি, লিখেছ নতুন একটা–আমি এখন তোমার নিয়মে খেলছি। মর্যাদা আর গর্ব হারিয়ে তোমার লেভেলে নেমে আসতে যাচ্ছি আমি…
কলিনের দিকে তাকাল ইনগ্রিড। ও পাগল হয়ে গেছে! ওর হাত থেকে আমাকে বাঁচাও! আমি প্রোটেকশন চাই! আমি মার্কিন অ্যামব্যাসাডরের সাথে দেখা করতে চাই…
পাগলটাকে বোঝাও! ওকে সরিয়ে নিয়ে যাও এখান থেকে! ওকে আমার অসহ্য লাগছে।
কলিন, ডাকল পিটার, কিন্তু তাকাল না তার দিকে। এবার তুমিও বেরিয়ে যেতে পার।
আতঙ্ক আবার গ্রাস করল ইনগ্রিডকে। না! অসম্ভব না! ওকে থামাও! ওকে বাধা দাও! কে কোথায় আছ, আমাকে বাঁচাও! পাগলটা আমাকে খুন করতে চাইছে…
স্যার, বলল কলিন।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ তুমি কলিন, বাচ্চা মেয়েটা দেখতে অনেকটা মেলিসা জেইনের মতো ছিল।
ঠাণ্ডা স্বরে বলল পিটার।
নিজের পিস্তলের কাছ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে দরজার উদ্দেশে হেঁটে চলল কলিন। গালিগালাজের ঝড় বইছে যেন ইনগ্রিডের মুখ থেকে।
নিজের পিছনে দরজাটা বন্ধ করে দিল কলিন। ক্লিক শব্দে লেগে গেল পাল্লা দুটো। তবু নিশ্চল পাঁচ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইল সে, কিছু একটার জন্যে অপেক্ষা করছে। দরজা খুলে ওর পাশে এসে দাঁড়াল পিটার, কলিনের হাতে ধরিয়ে দিল ওর পিস্তলটা। একটা ব্যারেল খালি ওটার।