প্রকৃত বিজয়। প্রশ্রয় দেয়া পিতৃসুলভ হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল তাঁর চেহারা। মার্কিন অ্যামব্যাসাডরের দিকে আবার তাকালেন তিনি। খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, ধন্যবাদ, স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ।
.
তোমাকে আমি কর্তব্যে অবহেলার জন্যে অভিযুক্ত করছি, জেনারেল স্ট্রাইড, গমগম করে উঠল ডক্টর পার্কারের কণ্ঠস্বর।
চারশ লোকের জীবন রক্ষার জন্যে এছাড়া আর কোনো পথ ছিল না, সম্পূর্ণ শান্ত পিটার। চোখে প্রায়-নির্লিপ্ত, ঠাণ্ডা দৃষ্টি। নৈতিক আইন বলে একটা কথা আছে, সেটা আমাকে ব্যবহার করতে হয়েছে। হাইজ্যাকারদের কাবু করার পর পনেরো মিনিটও পেরোয়নি, চেহারা দেখে মনে না হলেও বমি বমি ভাব আর মানসিক অস্থিরতায় এখনো ভুগছে পিটার।
তুমি ইচ্ছে করে আমার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অমান্য করেছ। উন্মত্ত সিংহের মতো ক্রোধে গরগর করছেন ডক্টর পার্কার, স্ক্রীন তার চেহারা লাল টকটকে দেখাচ্ছে, সাদা চুল এলোমেলো আর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথায়। তার সর্বগ্রাসী ব্যক্তিত্ব হকারের কমান্ড কেবিন ভরাট করে রেখেছে। তোমার ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল, তুমি সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছ…
আপনার এসব কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে থোর কমান্ড থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে আমাকে, বাধা দিয়ে বলল পিটার, তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর। এতক্ষণে ওর চেহারায় রাগের ভাব দেখা গেল, একটু যেন থতমত খেয়ে গেলেন ডক্টর পার্কার। পিটার জানে, অ্যাটলাসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডক্টর পার্কার সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু তার পক্ষেও সদ্য অর্জিত বিজয়ের নায়ককে এত তাড়াতাড়ি তাড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। পিটারকে বিদায় করতে সময় লাগবে, তবে ওর ভাগ্যলিপি নির্ধারিত হয়ে গেছে।
সরাসরি আমার নিয়ন্ত্রণে থাকছ তুমি। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জিজ্ঞেস না করে সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারবে না। আমি কি বোঝাতে চাইছি জানো, জেনারেল স্ট্রাইড?
উত্তর দেবে না বলে মনস্থির করল পিটার।
মৌনতা সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে বলে চললেন ডক্টর পার্কার, এখন তোমার প্রথম কর্তব্য, সব কটা গোর ইউনিটকে প্রত্যাহার করে নেয়া–যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। টেরোরিস্ট যে মেয়েটা ধরা পড়েছে তাকে লন্ডনে পাঠাতে হবে। ওখানেই তাকে জেরা করা হবে, ওখানেই তার বিচার করা হবে…
মেয়েটা অপরাধ করেছে এখানে। খুনের অভিযোগে তার বিচার হওয়া উচিত এখানেই…
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে। পিটার তর্ক করছে দেখে রাগ হলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলেন ডক্টর পার্কার। এবং এই সিদ্ধান্তের নড়চড় হবে না। তোমার কমান্ড প্লেনে করে লন্ডনে যাবে সে। থোর ডাক্তার তার দেখাশোনা করবে।
নিঃশব্দে কাঁধ ঝাঁকিয়ে চুপ করে থাকল পিটার।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মেয়েটাকে লন্ডনে চাই আমি, আবার বললেন ডক্টর পার্কার। প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে কেউ যেন তার গায়ে হাত দিতে না পারে, সেক্ষেত্রে তোমাকে আমি সরাসরি দায়ী করব। এরইমধ্যে যথেষ্ট রক্তপাত ঘটিয়েছি আমরা, তোমার বোকামির জন্যে। আমি আর কোনো রক্তপাত চাই না।
৩. দৃঢ়পায়ে হাঁটছে পিটার
আশ্চর্য ঋজু ভঙ্গিতে, দৃঢ়পায়ে হাঁটছে পিটার। উঁচু হয়ে আছে শির, চোখ জোড়া ধকধক করে জ্বলছে। এয়ারপোর্টের প্রতিধ্বনিবহুল ডোমেস্টিক ডিপারচার হলে বহু লোকের ভিড়, থোর কমান্ডের সদস্যরা ওকে দেখে হাতের কাজ ফেলে সিধে হয়ে দাঁড়াল।
ওয়েল ডান, স্যার।
গ্রেট স্টাফ, জেনারেল।
অ্যাই, পথ ছাড়ো, আমাদের কমান্ডার আসছেন…
মুক্ত আরোহীদের সেবা করছে ওরা সবাই, তাদের জিনিসপত্র গোছগাছ করে দিচ্ছে, সেই সাথে নিজেদের সিকিউরিটি আর কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট খুলে বাক্সে ভরছে। এই মুহূর্তে যে-যার কাজ ফেলে পিটারকে ঘিরে ধরল, কে তার আগে হ্যান্ডশেক করতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। শুধু থোর কমান্ডের সদস্যরাই নয়, আরোহীদের অনেকেই চিনতে পারল পিটারকে। পিটার তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় অভিনন্দন জানাল সবাই। বৃদ্ধা এক মহিলা ওর পথরোধ করে দাঁড়াল, হাত দুটো দুপাশে মেলে দিয়েছে। পিটার তার কুশল জিজ্ঞেস করল। দুহাত দিয়ে ওকে আলিঙ্গন করল বৃদ্ধা। বেঁচে থাকো বাবা, শত বর্ষ আয়ু হোক তোমার। গড ব্লেস ইউ!
এখনো কালো অ্যাসল্ট স্যুট পরে রয়েছে কলিন নোবলস, কোমরে ঝুলছে পয়েন্ট ফরটি ফাইভ। এটা একবার দেখ, স্যার, পিটারকে ডেকে বলল সে। তার সামনে একটা ডেস্ক, তাতে বিস্ফোরক আর আগ্নেয়াস্ত্র। বেশিরভাগই রাশিয়ান, কিন্তু ওদের হাতে এল কিভাবে একমাত্র ঈশ্বরই জানে। জোড়া ব্যারেলসহ শট পিস্তলের দিকে আঙুল তাক করল সে। এগুলো হাতে তৈরি, সাংঘাতিক দামি। এত টাকা ওরা পেল কোথায়?
প্রচুর টাকা ওদের, শুকনো গলায় বলল পিটার। এই তো মাত্র কয়েক মাস আগের কথা মনে নেই, দেড় মিলিয়ন ডলার দিয়ে ওপেক মন্ত্রীদের ওদের হাত থেকে ছাড়ানো হলো? ব্রাউন ভাইদের জন্যে ২৫ মিলিয়ন ডলার; ব্যারন অল্টম্যানের জন্যে আরো বিশ মিলিয়ন–একটা সরকারের মোট প্রতিরক্ষা ব্যয় ওটা। ডেস্ক থেকে একটা শট পিস্তল তুলে নিল পিটার, ব্রিচ খুলল। ভেতরে গুলি নেই। মেয়েটা কি এটা দিয়েই জিম্মিদের খুন করেছিল?
ঠোঁটের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চুরুটটা চালান করে দিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল কলিন। সম্ভবত। দুটো ব্যারেল থেকেই গুলি করা হয়েছে।