দোমড়ানো মোচড়ানো দুনম্বরের লাশটা লাফ দিয়ে টপকাল পিটার, ওর বুট থেকে ঝরঝর করে ঝরে পড়ল তাজা রক্ত। হঠাৎ করেই কলিন নোবলসকে কেবিনের আরেক দিকে দেখতে পেল পিটার, স্টারবোর্ড উইং দিয়ে ঢুকেছে সে। পাক খাওয়া ধোঁয়ার ভেতর গ্যাস মাস্ক পরা কলিনকে পাতাল থেকে উঠে আসা দৈত্যের মতো লাগল, মাকর্সম্যানের প্রিয় ভঙ্গিতে হাঁটু গেড়ে বসল সে, দুহাতে শক্ত করে ধরল ব্রাউনিংটা।
লাল শার্ট পরা আরেক লোককে গুলি করল কলিন। ধোয়া আর হোসের মাঝখানে অস্পষ্টভাবে তাকে দেখতে পেয়েছে সে। বাচ্চা ছেলের মতো মুখ লোকটার, চিবুক ছোঁয়া গোঁফ। গুলিটা যেন সেন্টার বাল্কহেডের সাথে গেঁথে ফেলল তাকে। কপালের ফুটো থেকে হলুদ মগজ আর বুক থেকে ফিনকি দিয়ে লাল রক্ত বেরিয়ে এল।
তিনজন, ভাবল পিটার। এবার ক্যামেরাটা খোঁজা দরকার। কিন্তু আরেকজন গেল কোথায়?
গুলি করার পর মেয়েটার হাত থেকে ক্যামেরাটা পড়ে যায়, দেখেছে পিটার। ডিটোনেটরটা উদ্ধার করা জরুরি, কারণ ওটা ইনগ্রিডের হাতে পড়ে গেলে সবাইকে মরতে হবে। কেবিনে ঢোকার পর মাত্র চার সেকেন্ড পেরিয়েছে অথচ মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেলতে অনন্তকাল লাগছে। স্ন্যাপ-হ্যামার দিয়ে দরজার তালা ভাঙা হচ্ছে, সামনে পিছনে দুদিকে, আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হুড়মুড় করে বোয়িংয়ের ভেতর ঢুকে পড়বে থোর অ্যাসল্ট টিম, অথচ এখনো পালের গোদাটাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না ও।
শুয়ে পড়ুন! সবাই শুয়ে পড়ুন! ইমার্জেন্সি এগজিটের বাইরে থেকে এখনো। একজন লোক নির্দেশ দিচ্ছে।
ফ্লাইট ডেকের দিকে ছুটল পিটার, ওর ধারণা এখানে ওত পেতে আছে ইনগ্রিড। সামনে পড়ল কালো চুল মেয়েটা, নিজের গাঢ় রক্তে ভাসছে। তালা ভেঙে পড়ার সাথে সাথে ফরওয়ার্ড হ্যাচ দড়াম করে খুলে গেল, কিন্তু ধোয়ার ভেতর সেদিকে কিছুই দেখতে পেল না পিটার। লাশটা টপকাবার জন্যে লাফ দিতে যাবে, এই সময় ধোয়ার ভেতর ভেতর থেকে ডেকের ওপর সিধে হতে শুরু করল ইনগ্রিড। সিধে হতে হতেই লাফ দিল সে।
ক্যামেরা থেকে দুহাত দূরে ডাইভ দিয়ে পড়ল ইনগ্রিড, হাত বাড়িয়ে অন্ধের মতো হাতড়াচ্ছে। একটু বেসামাল হয়ে পড়েছে পিটার, লাফ দিতে যাচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে সামলে নিয়েছে নিজেকে, হাতটা ঘুরিয়ে এনে পিস্তলটা ইনগ্রিডের দিকে তোলার চেষ্টা করল।
ক্যামেরার স্ট্র্যাপ ধরে ফেলল ইনগ্রিড। এতক্ষণে দেখতে পেল পিটার ওটা। শিরশির করে উঠল শরীর। কিন্তু স্ট্র্যাপ ধরে টানলেও ক্যামেরাটা দুই সীটের মাঝখানে আটকে যাওয়ায় হাতে আনতে পারছে না ইনগ্রিড। পিটারের কাছ থেকে মাত্র বারো ফিট দূরে সে, কাজেই সরাসরি মাথায় গুলি করতে হবে। মাঝখানে ধোয়া থাকলেও ব্যর্থ হবার আশঙ্কা নেই।
আরোহীদের মধ্যে যারা জ্ঞান হারায়নি তাদের একজন ছিটকে এসে পড়ল পিটারের সামনে। লক্ষ্য স্থির করে ট্রিগার টানার মুহূর্তে হতভম্ব হয়ে গেল পিটার, জানে এখন আর সম্ভব নয়, তবু ব্যারেল উঁচু করার চেষ্টা করল ও। লোকটার কালো, ফোলা-ফাপা চুল দুফাঁক করে বেরিয়ে গেল বুলেট। দুহাত মাথার ওপর তুলে নাচছে লোকটা। গুলি করবেন না। প্লিজ, প্লিজ! আমাকে এখান থেকে বেরুতে দিন। চুল পোড়ার গন্ধ বাতাসে। এই মুহূর্তে ইনগ্রিড কি করছে দেখতেই পাচ্ছে না পিটার।
খালি হাতে লোকটাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল পিটার। পলকের জন্যে দেখতে পেল টানতে টানতে স্ট্র্যাপটা ছিঁড়ে ফেলেছে ইনগ্রিড, কয়েক ইঞ্চি এগিয়ে গিয়ে ক্যামেরাটা ধরে ফেলল।
পিটারের পিস্তল ধরা হাতটা ধরে ঝুলে পড়ল উভ্রান্ত লোকটা।
মাঝখানের কয়েক প্রস্থ সীটের ওদিক থেকে গুলি করল কলিন, একবার। এখনো সে স্টারবোর্ড প্যাসেজে রয়েছে, টার্গেট মিস করার সম্ভাবনা ষোলো আনা। পিটারের কাঁধের নয় ইঞ্চি দূর দিয়ে ছুটে যেতে হবে বুলেটটাকে, তা না হলে ইনগ্রিডের দেহ-কাঠামোর কিনারায়ও লাগবে না। ঝুলন্ত হোসগুলো আরেক বাধা।
কলিনের প্রথম গুলিটা লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হলো। তবে কানের ওপর চুল আর খুলি ছুঁয়ে গেছে বুলেট, একটা ঝাঁকি মতো খেল ইনগ্রিডের মাথা, ভারসাম্য হারিয়ে ধপ করে বসে পড়ল প্যাসেজে।
বসে বসে ক্যামেরার গায়ে ডিটোনেটর খুঁজছে।
উন্মাদ লোকটার গলায় ডান হাতের শক্ত আঙুল দিয়ে জোরে একটা খোঁচা মারল পিটার, ছিটকে নিজের সীটের ওপর গিয়ে পড়ল সে। প্রাণপণ চেষ্টা করে পিস্তল ধরা বাঁ হাতটা ইনগ্রিডের দিকে তুলে লক্ষ্যস্থির করল পিটার, জানে সরাসরি মাথায় লাগাতে হবে, যাতে আঘাতের সাথে সাথে অচল হয়ে যায় আঙুলগুলো।
কলিন দ্বিতীয় গুলিটা ছুঁড়ল, প্রায় পিটারের সাথে একই সময়ে। কলিনের বুলেটের ধাক্কায় স্যাৎ করে দূরে সরে গেল ইনগ্রিড, তার খালি করা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে গেল পিটারের বুলেট।
ইনগ্রিডের ডান কাঁধে লেগেছে গুলি, ঝাঁকি খেয়ে তার একটা হাত স্যালুটের ভঙ্গিতে কপালের কাছে উঠে গেল। দাঁড়াবার চেষ্টা করছে ইনগ্রিড, তার মাথায় লক্ষ্যস্থির করল পিটার। কিন্তু আবারও ট্রিগার টানার আগে ধোঁয়ার ভেতর থেকে ছুটে এল কয়েকটা মর্তি। ইনগ্রিডকে তারা ঘিরে দাঁড়াল, লাথি মারছে, চল ধরে টানাটানি করছে। ফরওয়ার্ড হ্যাচ দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল থোর অ্যাসল্ট টিমের লোকজন, খ্যাপা আরোহীদের ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ইনগ্রিডের প্রাণ বাঁচাল। হোলস্টারে ওয়ালথার রেখে ক্যামেরাটা ভোলার জন্যে ঝুঁকল পিটার। তুলে নিল ওটা, হাসল।