অ্যামব্যাসাডররা একযোগে চেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
.
কলিন নোবলস কোথায়? প্রশ্ন করলেন ডক্টর কিংস্টোন পার্কার।
ওখানে অপেক্ষা করছে। মাথা ঝাঁকিয়ে কমান্ড কেবিনের সাউন্ডপ্রুফ দরজার দিকে ইঙ্গিত করল পিটার।
এই আলোচনায় ওকেও আমাদের দরকার, প্লিজ, স্ক্রীন থেকে বললেন ডক্টর পার্কার, কলিং বেলের বোতামে চাপ দিল পিটার।
মাথা নিচু করে ভেতরে ঢুকল কলিন, ছাদ নিচু বলে একটু ঝুঁকে থাকল, থোর ক্যাপটা ত্রুর কাছে নেমে আছে। গুড ইভনিং, স্যার। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে বলল সে, পিটারকে পাশ কাটিয়ে পাশের সীটে বসল।
কলিন এখানে থাকায় আমি খুশি, বলল পিটার। আশা করি, আমার প্ল্যানটা সমর্থন করবে ও। ডেল্টা কন্ডিশনে পাল্টা আঘাত যদি পৌনে এগারোটায় করা হয় তাহলে সাফল্যের সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বাড়বে বলে আমার ধারণা। আস্তিন সরিয়ে হাতঘড়ি দেখল ও। তার মানে আমরা আক্রমণ করব আর চল্লিশ মিনিট পর, ড্রাগসের প্রভাব তখন সবচেয়ে কম থাকবে। আমার ধারণা…।
ধন্যবাদ, জেনারেল স্ট্রাইড,–শান্তভাবে পিটারকে বাধা দিলেন ডক্টর পার্কার। কিন্তু আমি আসলে মেজর কলিনকে এখানে ডেকেছি যাতে আমার নির্দেশ নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ না থাকে। মেজর কলিন, থোর কমান্ডের কমান্ডার, জেনারেল স্ট্রাইড, এখুনি হাইজ্যাকারদের কাবু করে বোয়িং জিরো জেভেন-জিরো দখল করতে চায়। আমি, তোমার উপস্থিতিতে, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। কোনো অবস্থাতেই, প্রকাশ্যে বা গোপনে টেরোরিস্টাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কোনো ব্যবস্থা আমার হুকুম ছাড়া নেয়া যাবে না। আমি কি আমার বক্তব্য পরিষ্কার ব্যাখ্যা করতে পেরেছি?
ইয়েস, স্যার। কলিনের চেহারায় পাথুরে একটা ভাব।
মেজর জেনারেল পিটার?
ইয়েস, ডক্টর পার্কার।
ভেরি গুড। আমি চাই তোমরা আমার জন্যে তৈরি থাক, প্লিজ। অ্যামব্যাসাডরের সাথে কথা বলে আবার আমি ফিরে আসছি।
স্ক্রীন খালি হয়ে যেতে ধীরে ধীরে পিটারের দিকে ফিরল কলিন, যা দেখল তাতে তার চেহারা সামান্য বদলে গেল। তাড়াতাড়ি কমান্ড কনসোলের সেনসর বোতামে চাপ দিল সে, সাথে সাথে সমস্ত রেকর্ডিং টেপ অচল হয়ে গেল, বন্ধ হয়ে গেল সব কটা ভিডিও ক্যামেরা। যাই বলুক ওরা, তার কোনো রেকর্ড থাকবে না।
চিন্তা কর, স্যার, ভালো করে ভেবে দেখ, আবার মুখ খুলল কলিন, জানে পিটার কি ভাবছে। আর কদিন পরেই তুমি ন্যাটোর চিফ হতে যাচ্ছো। আর, একবার ন্যাটোর কিছু হলে এরপর যে কোথায় পৌঁছুবে নিজেও জানো না।
নিঃশব্দে আরেকবার হাতঘড়ি দেখল পিটার। থমথম করছে চেহারা। দশটা বেজে সতেরো মিনিট।
ভাবছি, কলিন, শান্ত গলায় বলল পিটার,—ঘটনাটা ঘটার পর থেকে ভাবনা ছাড়া একটা মুহূর্ত কাটাইনি-প্রতিবার একই সিদ্ধান্তে এসেছি। ওদের যদি মরতে দিই, ওই মেয়েটার চেয়ে আমার অপরাধ কোনো অংশে কম হবে না।
কেন তুমি অপরাধী হতে যাবে? সিদ্ধান্তটা আরেকজনের…
এভাবে এড়িয়ে যাওয়া সহজ, বলল পিটার। কিন্তু এড়িয়ে গেলে কি চারশ লোক বাঁচবে?
পিটারের কাঁধে একটা হাত রেখে মৃদু চাপ দিল কলিন। কিন্তু, তোমার ক্যারিয়ার, স্যার? ভবিষ্যৎ? আমি জানি–কত উপরে উঠতে পারো তুমি, বন্ধু।
ইচ্ছে করলে তুমি সরে দাঁড়াতে পারো, কলিন। আমি চাই না তোমার ক্যারিয়ার নষ্ট হোক।
সরে দাঁড়াতে তেমন পটু নই, স্যার।
আমি চাই তুমি একটা প্রতিবাদ রেকর্ড কর–সবাই একসাথে ডোবার কোনো মানে হয় না, বলল পিটার, রেকর্ডিং ইকুইপমেন্টের সুইচ অন করল ও–অডিও আর ভিডিও, দুটোই।
কলিন নোবলস্, স্পষ্ট উচ্চারণে বলল পিটার, আমি জেনারেল স্ট্রাড ডেল্টা কন্ডিশনে জিরো-সেভেন-জিরো এখুনি দখল করতে যাচ্ছি। সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন কর, প্লিজ।
ক্যামেরার দিকে মুখ ফেরাল কলিন। মেজর জেনারেল পিটার স্ট্রাইড, অ্যাটলাসের অনুমতি ছাড়া ডেল্টা কন্ডিশন ঘোষণা করছেন আপনি, আমি এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কলিন নোবলস্, তোমার প্রতিবাদ নোট করা হলো, গম্ভীরভাবে বলল পিটার, হাত ঝাপটা দিয়ে সেনসর বোতাম টিপল কলিন।
যথেষ্ট পাগলামি হয়েছে, সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে। চলো স্যার, ব্যাটাদের উচিত শিক্ষা দিয়ে আসি।
.
হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের সীটে বসে রয়েছে ইনগ্রিড, আরোহীদের পিলে চমকানো আরো একটা দুঃসংবাদ দেয়ার জন্যে মনে মনে তৈরি হচ্ছে সে। চোখের পিছনে বোধহয় কোনো শিরা লাফাচ্ছে তা না হলে ব্যথা হবে কেন! মাইক্রোফোন ধরা হাতটাও কাঁপছে একটু একটু। জানে, এ সবই ড্রাগের প্রতিক্রিয়া। মনে মনে স্বীকার করল সে, লিটারেচারে যা লেখা ছিল তার চেয়ে বেশি ডোজ বরাদ্দ করাটা বোকামি হয়ে গেছে। সেজন্যে মূল্য দিতে হচ্ছে চারজনকেই। তবে আর বিশ মিনিট পর আবার এক ভোজ ড্রাগ নেয়ার সময় হবে, তখন মাত্রা ঠিক রাখবে সে, কারও জন্যেই দুটোর বেশি ট্যাবলেট বরাদ্দ করবে না।
বন্ধুরা আমার, মাইক্রোফোনে কথা বলতে শুরু করল সে। অত্যাচারীরা আমাদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করেনি। ফ্যাসিস্ট সাম্রাজ্যবাদীর এই হলো আসল চেহারা, আপনাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় সে। অথচ আপনারা জানেন, এই অত্যাচারী লোকটার নেতৃত্বে একদল হায়েনা এ দেশের বৈধ সন্তানদের কিভাবে শোষণ করছে, কিভাবে তাদের স্বাধীনতার দাবি অস্বীকার করে আসছে।