বিশ সেকেন্ড শ্বাস নিলে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়বে। ত্রিশ সেকেন্ড পর জ্ঞান থাকবে না। দুমিনিটে মত্যু। রেহাই পাবার উপায় তাজা বাতাস। আরো ভালো হয় খাঁটি অক্সিজেন পাওয়া গেলে। দ্রুতই ফিরে আসে সুস্থতা, দীর্ঘমেয়াদী কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
অ্যাসল্ট গ্রুপের আর সবাই লীডারদের পিছু নিয়ে চার ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছিল, ডানার নিচে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছিল তারা–সবাই গ্যাস মাস্ক পরে আছে, হাতে বাগিয়ে ধরা অস্ত্র আর ইকুইপমেন্ট। স্টপওয়াচে চোখ রেখেছে কলিন, আরোহীদের দশ সেকেন্ডের বেশি গ্যাস সরবরাহ করবে না সে। বয়স্ক লোকজন আর বাচ্চারা রয়েছে, হাঁপানির রোগী থাকতে পারে।
পাওয়ার অন। এয়ার-কিন্ডিশনিং চালু হবার সাথে সাথে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করবে বিষাক্ত গ্যাস। তারপরই নির্দেশ এল, গো!
অ্যালুমিনিয়ামের মই বেয়ে তরতর করে ডানার সংযোগ পর্যন্ত উঠে গেল অ্যাসল্ট টিম, বাড়ি দিয়ে ইমার্জেন্সি উইন্ডো প্যানেল ভেঙে ফেলল তারা। বাকি দুদল উঠল প্রধান দুটো দরজার কাছে, কিন্তু ওরা শুধু স্ন্যাপ-হ্যামার দিয়ে ধাতব পাত ছিঁড়ে ভেতরের রকিং ডিভাইস বের করার ভান করল মাত্র। স্টান গ্রেনেড ডিটোনেট করারও সুযোগ নেই ওদের।
পেনিট্রেশন। লীডারদের একজন পিটারের ভূমিকায় অভিনয় করছে, কেবিনে ঢোকার সিগন্যাল দিল সে। সেই সাথে স্টপওয়াচ বন্ধ করল কলিন। কাজে এত মগ্ন ছিল যে জানেই না নিঃশব্দ পায়ে কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে পিটার।
এগারো সেকেন্ড, স্যার, বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসল কলিন। খারাপ নয়–তবে খুব একটা আহামরি কিছুও নয়। আবার মহড়া দেব আমরা।
একটু বিশ্রাম দাও, নির্দেশ দিল পিটার। কিছু কথাও হোক।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের দেয়াল জুড়ে পাশাপাশি দাঁড়াল সবাই, শুধু পিটার আর কলিন তাদের দিকে মুখ করে থাকল। বিকেলের তাপে টারমাকের দিকে তাকানো যায় না, তবে দূরাকাশের কোণে কালো আর ভারী মেঘ জমেছে।
আর ছয় ঘণ্টা পর ডেডলাইন, বলল কলিন। সরকারের তরফ থেকে কনসেশনের কোনো খবর এল?
না। ওরা রাজি হবে বলে মনে হয় না।
হয়তো হবে, তবে আরেকটা ডেডলাইন পেরোবার পর। দাঁত দিয়ে চুরুটের গোড়া ছিঁড়ল কলিন, ছোঁড়া অংশটুকু থু করে ফেলে দিল, যেন কারও ওপর রেগে গেছে। এতগুলো দিন গাধার খাটনি খেটে নিজেকে তৈরি করলাম, অথচ যখন কাজ করার সুযোগ এল পিছমোড়া করে বেঁধে রাখল হাতজোড়া।
সন্ধ্যার পরপরই, সাথে সাথে জবাব দিল কলিন।
না। ড্রাগের প্রভাব এখনো ওদের শরীরে বাড়ছে। প্রভাব কমতে শুরু করার খানিকক্ষণ পর আক্রমণ করব আমরা। আমার ধারণা দ্বিতীয় ডেডলাইনের একটু আগে আবার ওরা ড্রাগ নেবে, ঠিক তার আগে হামলা চালানো উচিত, হিসেবে করার জন্যে থামল পিটার, পৌনে এগারোটায়, ডেডলাইনের সোয়া একঘণ্টা আগে।
পিটারকে সমর্থন করে মাথা ঝাঁকাল কলিন। যদি ডেল্টা কন্ডিশন ঘোষণা করা হয়।
হ্যাঁ, বলল পিটার, তারপর কিছুক্ষণ ওরা কেউ কথা বলল না।
নিস্তব্ধতা পিটারই ভাঙল, দেখ কলিন, ব্যাপারটা আমাকে ক্লান্ত করে তুলেছে। ওরা আমার নাম জানে, তাহলে থোর সম্পর্কে আরো কিছু না জানতে পারার কি কারণ থাকতে পারে? প্লেন দখল করার জন্যে আমাদের নির্দিষ্ট প্ল্যান আছে, সেটাও কি জানে ওরা?
ঈশ্বর, আমি এত দূর ভাবিনি!
তাই ভাবছি, প্ল্যান কিছুটা বদলানো দরকার। মডেল ঠিক রেখেই করতে হবে সেটা, কারণ এখন আর সবটা বদলানো সম্ভব নয়, কলিনকে সন্দিহান দেখাল।
ফ্লেয়ার, বলল পিটার। হামলা যদি করি, আমরা ফ্লেয়ার জ্বালব না।
কিন্তু তাহলে তো আতঙ্কবাদীরা প্যাসেঞ্জার কেবিনে ছড়িয়ে থাকবে…!
লক্ষ্য করেছ ইনগ্রিড লাল শার্ট পরে আছে?
তার মানে কি ওরা সবাই… হ্যাঁ, হতে পারে।
ভেতরে ঢুকে লাল কিছু দেখলেই ঝাঁঝরা করে দেব, বলল পিটার। কিন্তু ঢুকে যদি দেখি লাল শার্ট নেই, তাহলে ইসরায়েল স্টাইল ফলো করতে হবে।
ইসরায়েলি স্টাইল হলো, সবাইকে শুয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া, নির্দেশ অমান্য করলে সরাসরি খুন করার জন্যে গুলি করা। বিচ্ছু হচ্ছে ওই মেয়েটা। ক্যামেরাটা ওর কাছে রয়েছে। ওর ভিডিও টেপ দেখিয়েছ সবাইকে?
দেখিয়েছি, চিনতে পারবে। ডাইনিটা কিন্তু ভারি সুন্দরী। শুধু ইনগ্রিডের নয় লাশের ভিডিও দেখিয়েছি, আহত বাঘের মতো হয়ে আছে সবাই। কিন্তু লাভ কি, চেহারায় হতাশ ভাব এনে বলল কলিন, অ্যাটলাস ডেল্টা কন্ডিশন ঘোষণা করবে না। আমরা শুধু শুধু সময় নষ্টা করছি।
ধরে নাও ডেল্টা কন্ডিশন ঘোষণা করা হয়েছে, অসুবিধে আছে কোনো? জিজ্ঞেস করল পিটার, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে বলে চলল, আমি তোমাকে বললাম আজ রাত স্থানীয় সময় দশটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে হামলা করা হবে। কাজটা এমনভাবে করবে যেন মহড়া দিচ্ছ না, সত্যি হামলা করছ-খুঁটিনাটি কোনো কাজেই ভান করবে না…।
ধীরে ধীরে ঘাড় ফিরিয়ে কমান্ডারের চোখে তাকাল কলিন, দুজনের দৃষ্টি এক হলো। পিটারের চোখের পাতা, দ্রু, নাকের ফুটো, ঠোঁট, কিছুই নড়ছে না।
ধরে নেব, স্যার? ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল কলিন।
অবশ্যই, দৃঢ়কণ্ঠে বলল পিটার,-একটু যেন অসহিষ্ণু।
কাঁধ ঝাঁকাল কলিন। ধেত্তেরি, আমি তো এখানে শুধু কাজ করি, বলে ঘুরে দাঁড়াল সে।